মোঃ জুয়েল হোসাইন,বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি :
বান্দরবানের থানচি উপজেলার লোয়াংমুয়াল রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় টানা ১২ ঘন্টা রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পর র্যাবের হাতে আটক হয়েছে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার দুদর্ষ ১৭ জঙ্গি ও কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ এর ৩ সদস্য। এসময় র্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি,বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, গোলাবারুদসহ নগদ ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ১৭ জন সদস্য ও পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন (কেএনএফ) এর ৩ জনকে বান্দরবানের থানছির রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে র?্যাব।অভিযানে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম,গোলাবারুদ ও নগদ ৭ লক্ষ টাকা উদ্ধার বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং করছেন র্যাব এর লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। বুধবার সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদের কনফারেন্স রুমে অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে তুলে ধরা হয়।
প্রেস ব্রিফিং এ জানানো যাচ্ছে যে গত ২৩(জানুয়ারি) কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় ইয়াহিয়া গার্ডেনের গহীন বনাঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে জামাতুল আনসার আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে গ্রেফতার করে র?্যাব।গ্রেফতারকৃতদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পাহাড়ি অঞ্চল সহ বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি পরিচালনা অব্যাহত রাখা হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে যে,নব্য এই জঙ্গী সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য বান্দরবানের থানচির লোয়াংমুয়াল পাড়া হয়ে রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।এই তথ্যের ভিত্তিতে ৭ই ফেব্রুয়ারী রাতে র?্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র?্যাব ৭ এর যৌথ অভিযানে রেমাক্রি ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে।
র?্যাবের পরিচালিত অভিযানে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ১৭ জন সহ পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ এর ৩ সদস্যকে গ্রেফতার এবং বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র,গোলাবারুদ ও বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি,উগ্রবাদী বই,কন্টেন্ট,লিফলেট, অস্ত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে রক্ষিত নগদ সাত লক্ষ টাকা এবং গ্রেফতারকৃতদের ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে র?্যাব।
র?্যবের এই অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা হলেন মোহাম্মদ সামির রহমান সাদ(১৯) পিতা মোঃ মাহবুবুর রহমান,সদর, কুমিল্লা,মোঃ সোহেল মোল্লা সাইফুল্লাহ(২২),পিতা- মালেক মোল্লা বেতাগী বরগুনা,মোঃ আল-আমিন ফকির মোস্তাক(১৯),পিতা ফোরকান ফকির, সদর, পটুয়াখালী,মোঃ জহিরুল ইসলাম ওমর ফারুক(২৭),পিতা- আব্দুল লতিফ লাঙ্গলকোট, কুমিল্লা, মোঃ মিরাজ শিকদার আশরাফ হোসেন দোলন(২৬),পিতা -আনিস মুসল্লী,মির্জাগঞ্জ,পটুয়াখালী,মোহাম্মদ ইলিয়াস রহমান তানজিল(৩২),পিতা দুলাল রহমান ধানবাড়ি,টাঙ্গাইল,মোঃ হাবিবুর রহমান মোড়া(২৩),পিতা আবু ইউসুফ হাওলাদার সদর ঝালকাঠী,মোঃ সাখাওয়াত হোসেন মাবরুর(২১),পিতা মালেক ফরাজী সদর,কুমিল্লা,মোঃ আব্দুস সালাম রাকি(২৮),পিতা- নাসির হাওলাদার কোতোয়ালি, বরিশাল,জোবায়ের আহমেদ আইমান(২৯),পিতা- মাওলানা হোসাইন আহমম্মদ,লাকসাম,কুমিল্লা,মোহাম্মদ শামীম হোসেন আবু হুরাইরা(২৬),পিতা- মহাবুব মাতাব্বর,দশমিনা,পটুয়াখালী,তাওয়াবুর রহমান সোহান মিন্টু(২০),পিতা- মৃত কুতুবুর রহমান, মাধবপুর, হবিগঞ্জ,মোঃ মাহমুদ ডাকুয়া(২০),পিতা গোলাম মোস্তফা, বরিশাল,মোঃ আবু হুরাইরা মিরাজ(২২),পিতা মৃত শামসুর রহমান মাগুরা, এবং পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কে এন এফ এর সদস্য লাল মোল সিয়াম বম,ফ্লাগ ক্রস,মালসম পাংকুয়া(৫২),পিতা -জলাসুর পাংকুয়া,বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি। র্যবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক খন্দকার আল মইন সাংবাদিকদের জানান গ্রেফতারকৃত কেএনএফ সদস্য লাল মোল সিয়াম বোম জঙ্গি অভিযানের পর তা নেতৃত্বেই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প হতে বিভিন্ন স্থানে সমতলে আত্বগোপন,চাঁদা,রসদ সরবরাহ,এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান সম্পর্কে জঙ্গিদের অবগত করত। আরেক সদস্য ফ্লাগ ক্রস জঙ্গিদের সাথে কেএনএফ প্রধান নাথান বম এর যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে কাজ করতো,সমতল থেকে পাহাড়ে বিভিন্ন পার্সেল তার নামে আসতো।গ্রেপ্তারকৃত মালসম পাংকুয়া জঙ্গিদের নিকট থেকে প্রাপ্ত নগদ অর্থ নাথান বোম এর কাছে পৌঁছে দেয়া ছিল তার মূল দাযড়ত্ব।এবং এই অর্থ দিয়ে অবৈধপথে অস্ত্রসহ সাংগঠনিক কাজে বিভিন্ন মালামাল ক্রয় করা হতো। উল্লেখ্য গতবছরের ২৩শে আগস্ট কুমিল্লায় নিখোঁজ ৮ জন তরুনের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয় থাকার তথ্য পায় র?্যাব।এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তায় সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পার্বত্য অঞ্চলে জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু করে র্যাব। গতবছরের ৩ অক্টোবর থেকে পার্বত্য এলাকায় জঙ্গি বিরোধী অভিযান শুরু করে র্যাব। ইতুমধ্যে বিভিন্ন সময়ে র্যাবের পরিচালিত অভিযানে নতুন জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাসহ সর্বমোট ৩৮ জন এবং পাহাড়ে অবস্থান,প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রমে জঙ্গিদের সহায়তার জন্য পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ এর ১৪ জন নেতা ও সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। অভিযানে আজ পর্যন্ত জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যও ৫৫জন কেএনএফ সদস্য ১৭ জন আটক হয়েছে!