নিজস্ব প্রতিবেদক :
পদোন্নতির জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদকে তার এক সময়কার ছাত্র ও পরবর্তীতে সহযোগী অধ্যাপক ড.মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন খুন করার ঘটনাকে দেশের ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকান্ড বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার আপিল বিভাগ অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির মৃত্যুদন্ডাদেশ এবং দুইজনের যাবজ্জীবন বহাল রাখার পর এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। রায়ের পর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ মামলাটি দেশের ইতিহাসে একটি জঘন্যতম হত্যা মামলা। অধ্যাপক তাহের বলেছিলেন, নিয়ম অনুসারে মহিউদ্দিনের পদোন্নতি হবে না। একজন শিক্ষককে তার ছাত্র, পরবর্তীতে শিক্ষক হয়েছেন। তিনি শুধু তার নিজের একটা লাভের জন্য, অর্থাৎ প্রমোশনের জন্য একজন মানুষকে এভাবে হত্যা করা কোনোভাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এটা জঘন্য কাজ। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আজকের বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হলো। অন্যান্যের কাছে বার্তা যাবে যে এ ধরনের কাজ করলে আদালতের কাছ থেকে সর্বোচ্চ শাস্তি পেতে হবে। রায় কার্যকরের পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এ রায় প্রকাশের পর রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন আসামিরা। আপিল বিভাগ আবেদনটি খারিজ করলে রাষ্ট্রপতির মার্জনা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন তারা। রাষ্ট্রপতি সে আবদন নাকচ করলে তাদের দ- কার্যকর হবে। মঙ্গলবার সকালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ১৬ মার্চ উভয়পক্ষের (রাষ্ট্র ও আসামি) করা আপিলের ওপর শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৫ এপ্রিল দিন রেখেছিলেন আপিল বিভাগ। আদালতে ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অবন্তী নুরুল। বাদীপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথী। এ ছাড়া ছিলেন অধ্যাপক ড. এস তাহেরের মেয়ে আইনজীবী সাগুফতা। অন্যদিকে, আসামিপক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান ও অ্যাডভোকেট মো. তাজুল ইসলাম। ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে অধ্যাপক তাহেরের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত চারজনকে মৃত্যুদ- এবং দুইজনকে খালাস দেন। পরে হাইকোর্ট দুই আসামির মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখে অন্য দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদ- বহাল থাকা দুই আসামি ছিলেন- একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। আর সাজা কমিয়ে হাইকোর্ট মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সম্বন্ধী আবদুস সালামকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন। হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করেন। অন্যদিকে, সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়ায় দুজনের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ। পরে নিয়মানুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদ- নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন।