নিজস্ব প্রতিবেদক :
বঙ্গবন্ধুর করা বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ‘রিভিজিং টা হিস্ট্রেরিক্যাল জার্নি অব দ্য কনস্টিটিউশান অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। আজ শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) রাজধানীর ধানমন্ডিতে নিজেদের মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। বিলিয়ার চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম জমির, এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহী চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, ব্যারিস্টার তানীয়া আমীর প্রমুখ। উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে কয়েকজন বক্তা সংবিধান থেকে ১৫তম সংশোধনীর সময় রাষ্ট্র ধর্ম বাদ না দেওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চান। প্রধান অতিথির বক্তব্যের সময় এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি এক কথায় বলতে পারি তখন আমি সংসদ সদস্য ছিলাম না। কিন্তু সেটা বলছি না। আপনারা বাস্তবে দেখেছেন বাংলাদেশের মানুষকে কীভাবে কিছুকিছু প্রোপাগান্ডা করে তাদের একটা বিশ্বাসের মধ্যে বিশ্বাসের জায়গায়…। এ সময় আইনমন্ত্রী রোকেয়া কবীরের বক্তব্যের উদ্ধৃতির দিয়ে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর সব কটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলে বললেন, সবাই বলে ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ ইসলাম ধর্ম (রাষ্ট্রধর্ম) হবে না কেন? এই যে চিন্তাটা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে এ চিন্তা থেকে আগে বের করে আনতে হবে। এ চিন্তা থেকে বের করে আনার প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। বুলি আওড়াচ্ছিনা। তাহলে মানুষ আমাদের ওপর আস্থা রাখবে। এ আস্থা রাখার পরে কিন্তু আমাদের যে বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারছি। আমাদের সেই জায়গাটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। বঙ্গবন্ধু যেটা তখন করতে পারতেন তাকে হত্যা করার পরে মানুষের সামনে সে অবস্থা ছিল না। ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের এমন একটা অবস্থার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানে তারা মনের কথা বলতে পারতো না। এ ভয়-জড়তা থেকে তাদের কাটিয়ে উঠে হবে। সেটাই যদি আমরা পারি তাহলে আমাদের যেটা ইচ্ছা, এটা বঙ্গবন্ধু করে গেছেন (৭২ এর সংবিধান)। সেটা আমরা বাস্তবে রূপ দিতে পারবো। আলোচনা শেষে বাইরে অপেক্ষামান সাংবাদিকরা রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এ রকম প্রশ্নে তদনগদ জবাব দেওয়া সম্ভব না। প্রথম কারণ হচ্ছে আগে সরকারের নীতি নির্ধারণীতে আলাপ-আলোচনা হয়ে তার পরে। দ্বিতীয় হলো যে দল সরকার গঠন করেছে সে দলের মধ্যেও আলাপ আলোচনা করতে হয়। তিনি বলেন, এখন আমি যেটা মনে করছি সেটা হচ্ছে। ১৫তম সংশোধনীতে আমাদের অরিজিনাল সংবিধানের তথা ৭২ সংবিধানে অনেকাংশে ফিরে গিয়েছি। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমেও আরও কিছু ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। সেখানে বাধা বিপত্তি আছে। এটা এখন বিচারাধীন। রাষ্ট্রধর্মের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এটার ব্যাপারে অবশ্যই চিন্তা ভাবনা আছে। তার কারণ হচ্ছে আমরা ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে চাই। কখন কোন সময় বাস্তবতার নিরিখে করা হবে বা করা হবে না এটা দল এবং সরকার সিদ্ধান্ত দেবে। সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচনের আগে কারাগারে পাঠানোর এখনও চিন্তা-ভাবনা নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন-বাড়াবাড়ি করলে..। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সাব-রেজিস্ট্রারদের জন্য আয়োজিত দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকেরা জানতে চেয়েছিলেন, আগামী নির্বাচনের আগে কী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে? জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, আমার মনে হয় না খালেদা জিয়াকে ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারায় তার দ-াদেশ স্থগিত রেখে শর্তযুক্তভাবে যে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তার পরিবর্তন আনার কোনো চিন্তা-ভাবনা সরকার করছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে আবারও জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এ দুটি বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, (খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানেরার) এখনও চিন্তা-ভবনা নেই। সেটা কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে অত্যন্ত স্পষ্ট করে বলেছেন বাড়াবাড়ি করলে…। দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছরের দ-িত সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ছিলেন। এরমধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে পরিবারের সদস্যদের আবেদনে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাকে সাময়িক সময়ের জন্য মুক্তি দেয় সরকার। এরপর খালেদা জিয়া রাজধানীর গুলশান এভিনিউয়ের নিজের বাসভবন ফিরোজায় যান। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফের মেয়াদ আরো বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে খালেদা জিয়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সবশেষে ১৯ সেপ্টম্বর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। প্রতিবার একই শর্তে তাকে কারাগারের বাইরে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শর্ত অনুযায়ী, মুক্ত থাকার সময়ে খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না।