নিজস্ব প্রতিবেদক :
বায়ুদূষণের প্রধান উৎসগুলো চিহ্নিতকরণ ও তা হ্রাসের সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন এবং অস্বাস্থ্যকর, অতি অস্বাস্থ্যকর ও বিপজ্জনক বায়ু থেকে জনসাধারণকে রক্ষায় এলার্ট সিস্টেম প্রয়োগ এবং পোড়ানো ইটের বিকল্প কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের প্রতিবেদন চার মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও জনস্বার্থ পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে একটি সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং বায়ুর মান উন্নয়নের নির্দেশ কেন প্রদান করা হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৫ জন বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস. এম. মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন। আদালতে বেলা’র পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। এর আগে বায়ুদূষণ রোধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। রিট আবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের শুরু থেকেই বায়ুদূষণের দিক থেকে ঢাকা প্রায়ই উঠে আসছিল বিশ্বের শীর্ষে। শিকাগো ইউনিভার্সিটির এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট প্রকাশিত ‘এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস এবং ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। বায়ুর মান বা একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং তা স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যান্যের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। বায়ুর মান ৩০০-এর বেশি থাকা মানে ওই স্থানের বায়ু ‘বিপজ্জনক’, যা সবার জন্য ক্ষতিকর। রিটে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ২-২৩ ঘণ্টা বায়ুর মান ৩০০ থেকে ৪৪৯ এ ছিল। বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার ভিজ্যুয়াল অনুযায়ী, জানুয়ারিতে বিশ্বের ১০০টি শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান শীর্ষে ছিল আট দিন। ২০২২ সালের জানুয়ারির ২০ দিনের মধ্যে ১১ দিনই ঢাকা বায়ুদূষণের তালিকায় এক নম্বরে ছিল। এমন পরিস্থিতিতেও কোনও রকম স্বাস্থ্য সতর্কতা ছাড়াই নগরবাসী স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং দূষিত বায়ুই সেবন করছে। স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) তথ্যমতে, বিগত ৬ বছরে সর্বমোট ৩৮ দিন বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া গেছে। যার অর্থ বছরে ৭ দিনেরও কম সময় বিশুদ্ধ বায়ু সেবন করতে পারছে এ নগরবাসী। বায়ু দূষণ পরিস্থিতিতে প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে থাকলেও এদেশে কখনও জারি হয়নি। কোনোরূপ স্বাস্থ্য সতর্কতা না থাকায় প্রতিবছর বায়ুদূষণজনিত রোগে প্রায় ১.৫৩ লাখের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে থাকে।