নিজস্ব প্রতিবেদক :
ধর্ষণের অভিযোগে কিশোরীর করা মামলা থেকে বিচারিক আদালতে অব্যাহতি পাওয়া বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে পিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য বলা হয়। পাশাপাশি কিশোরীর মানসিক চিকিৎসা করার জন্যও বলেছেন আদালত। নির্ধারিত দিনে আজ সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি ড. বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে কিশোরীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। এর আগে গত ২৯ জুন ধর্ষণের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া বিজিবি সদস্যের বিচার চেয়ে হাইকোর্টের এজলাসের সামনে দাঁড়ানো কিশোরীর পক্ষে করা আপিল গ্রহণ করে বিচারিক আদালতের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আসামি সেই বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামানকে চার সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর আগে গত ২৬ জুন কিশোরীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী বদরুন নাহার আপিল আবেদনটি করেন। আদালতে ওইদিন কিশোরীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের প্যানেল আইনজীবী বদরুন নাহার। আর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। এর আগে গত ২৬ জুন ধর্ষণের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া বিজিবি সদস্যের বিচার চেয়ে হাইকোর্টের এজলাসের সামনে দাঁড়ানো সেই কিশোরীর পক্ষে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন আইনজীবী বদরুন নাহার। আপিলে নারাজি আবেদন গ্রহণ করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়। তবে এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি আদালত। গত ১৫ জুন সকালে ওই কিশোরী তার মাকে সঙ্গে নিয়ে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আসেন। সে সময় ওই কিশোরী আদালতের এজলাস কক্ষের ডায়াসের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তখন আদালত জানতে চান, কে আপনারা? কী চান? জবাবে ওই কিশোরী নিজের নাম ও পরিচয় জানিয়ে সঙ্গে থাকা ব্যক্তি তার মা বলে আদালতকে জানায়। ওই সময় কিশোরী বলেন, আমার বয়স ১৫ বছর। আমি ধর্ষণের শিকার। একজন বিজিবি সদস্য আমাকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু নীলফামারীর আদালত (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল) তাকে খালাস দিয়ে দিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের টাকা পয়সা নেই। আমরা আপনার কাছে বিচার চাই। এরপর আদালত ওই কিশোরীর কাছে জানতে চান, যে তার কাছে মামলা সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র আছে কি না? তখন কিশোরী মামলার কাগজ আছে বলে আদালতকে জানান। ওই সময় উপস্থিত সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইডের আইনজীবী বদরুন নাহারকে মামলাটির দেখভাল করতে বলেন আদালত। জানা যায়, নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার এক ভ্যানচালকের সন্তান ওই ভুক্তভোগী কিশোরী। বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর ধর্ষণ মামলা করেন কিশোরীর মা। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর বিকেলে সৈয়দপুর শহরের সাজেদা ক্লিনিকে জন্ম নেওয়া বোনের নবজাতককে দেখানোর কথা বলে বিজিবি সদস্য আক্তারুজ্জামান তার প্রতিবেশী বাড়ির কিশোরীকে তার পরিবারের অগোচরে মোটরসাইকেলে করে শহরে নিয়ে যায়। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কিশোরীর বড় বোন তার মাকে জানায়, আক্তারুজ্জামানের বোন তাকে জানিয়েছে (ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে) তার ছোট বোন আজ বাড়ি ফিরবে না। পরদিন সকাল ৮টায় আক্তারুজ্জামানের বোন ভুক্তভোগী কিশোরীর জন্য জামা নিতে তাদের বাড়িতে আসে। মাংসের ঝোল লাগায় আগের দিন পরে থাকা জামা ধুয়ে দেওয়া হয়েছে বলে আক্তারুজ্জামানের বোন কিশোরীর ঘর থেকে তার আরেকটি জামা নিয়ে যায়। এরপর রাত ৯টার দিকে আক্তারুজ্জামান মোটরসাইকেলে করে ভুক্তভোগী কিশোরীকে তার বাড়িতে রেখে যায়। বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর ওই কিশোরী অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকায় পরদিন (১১ নভেম্বর) স্থানীয় হুজুরের কাছে তাকে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক করানো হয়। এতেও কিশোরী সুস্থ না হওয়ায় ১২ নভেম্বর সকালে নীলফামারীর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই দিনই কিশোরীকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) স্থানান্তর করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য কিশোরীকে নীলফামারীর ওই হাসপাতাল থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার আগে কিশোরীকে পর্যবেক্ষণের পর নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালের ছাড়পত্রে যৌন নিপীড়নের কথা উল্লেখ করা হয়। পরে এ ঘটনায় কিশোরীর মা একই বছরের ২১ নভেম্বর মামলা করেন। তবে গত ১৭ মে তদন্তের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অপরাধের প্রমাণ না পাওয়ার কথা বলা হলে নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আসামিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। এরপরই ওই কিশোরী বিচার চেয়ে হাইকোর্টে আসেন।