• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৭ অপরাহ্ন

বিবাহ বিচ্ছেদ, কারণ ও প্রতিকার

Reporter Name / ১৭৯ Time View
Update : সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

এ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা
বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন, একটি বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে নারী পুরুষ দুজন দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করে,কখনো পারিবারিক সম্মতিতে ও মতে কখনো নিজেদের পছন্দে । দেশ,কাল পাত্র ধর্ম,বর্ন ভেদে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা আনুষঙ্গিকতা অনেকটা ভিন্ন।
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে বিয়ে ইসলাম ধর্মে -“উঠ ছুড়ি, তোর বিয়ে লেগেছে, বরকনে পছন্দ হলো,কাজী ডাকো, নাম ঠিকানা বলে, কেউ একজন জিজ্ঞেস করো, রাজী!, বল কবুল! হলো বিয়ে,পরে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন যা বাধ্যতামূলক, তালাকের বেলায় সিটি কর্পোরেশনে নোটিশ, ৯০ দিন অপেক্ষা, তালাক কার্যকর,তালাক রেজিষ্ট্রেশন ও বাধ্যতামূলক।”
হিন্দু ধর্মে স্থান, এলাকাভিত্তিক প্রথাগত, আচারগত ভিন্নতা আছে, ছাদনা তলায় সাতপাকে বাঁধা,অগ্নিসাক্ষী, মন্ত্রপাঠ করে বিয়ে, বিচ্ছেদ নেই, আমাদের দেশে আলাদা থাকছে ভরনপোষণ পাওয়ার অধিকারী নারী। ভারতে কারণ দর্শীয়ে অনুমতি নিয়ে বিচ্ছেদ হচ্ছে।
বৌদ্ধধর্মে এলাকা ও রীতিনীতিতে ভিন্নতা থাকলেও বিয়ে মন্দিরে, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাধ্যমে মন্ত্রপাঠ করে কিংবা অন্যকোথাও মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে বিয়ে হতে পারে। বিবাহবিচ্ছেদের বেলায় বিয়ের কারণ দর্শিয়ে কোর্টকে জানিয়ে তালাক হয়।
সবচেয়ে সুন্দর রীতি খ্রিস্টান ধর্মীয় বিয়ের অনুষ্ঠানে। বিয়ে সাধারনত চার্চে অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব থেকেই বর-কন্যার ঠিকানা জানিয়ে নোটিশ দেয়া হয়। কারো কোন মন্তব্য,আপত্তি থাকলে জানাতে বলা হয়। পরে চার্চে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। দুজনের কল্যানে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। বিবাহবিচ্ছেদ আদালতে ডিক্রির মাধ্যমে করা যায়।
বিয়ে জীবনের জন্য কতোইনা গুরুত্বপূর্ন যার মাধ্যমে নারী পুরুষ একত্রে বৈধ ভাবে মিলিত হয়। রচনা করে স্বপ্নের সুখী নীড়। গড়ে তুলে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন।
সবাই চায় তার বিবাহিত জীবন সুখী হোক, জীবন মরনে দুজন মিলে কাটিয়ে দিক সফল জীবন। গড়ে তুলুক স্বপ্নীল একটি সুখের ঘর,তাদের নিয়ে রচিত হোক ভালবাসার প্রেমময়, আবেগবহুল কাহিনী।
বিধিবাম হলে বিয়ের পর নারী-পুরুষ যেমন সংসার শুরু করে, তেমনি শুরুর পর পরও অনেক সময় দেখা দেয় বিচ্ছেদের ঘন্টা ধ্বনি। কেন বিচ্ছেদ, কেনই বা সংসার করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। আইনজীবী হিসেবে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে আমার দেখা কারণ গুলি তুলে ধরছি একেবারে নিরেট অভিজ্ঞতার আলোকে।
শারীরিক অক্ষমতা:
শারীরিক অক্ষমতা, যৌন ব্যাধি,যৌনবিকারগ্রস্থ স্বামী বিয়ে বিচ্ছেদের একটি অন্যতম কারন, এটি লজ্জা কিংবা গোপন করা নয়। বিয়ে বন্ধনের অন্যতম বিষয় হলো স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য মিলন প্রকারান্তরে সন্তান গ্রহন।আমাদের সমাজে প্রায়শঃই দেখা যায় শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিত বাবা-মা তার সন্তান যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষম জানা সত্ত্বেও সন্তান কে বিয়ের আসরে বসিয়ে দেন। বাসর রাতেই অক্ষম স্বামীর হিংস্রতার শিকার হন মেয়েটি। কখনো পরিবারকে গোপন লজ্জাজনক কথাটি জানাতে বাধ্য হয়, কখনো বা গোপনে চিকিৎসা চালিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করে বিচ্ছেদের পথ বেছে নেন।
যৌতুকঃ
যৌতুক আমাদের দেশের জন্য এক সামাজিক ব্যাধি। যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ অনুসারে বরপক্ষ বা কনেপক্ষ যেকোন পক্ষের নিকট যৌতুক দাবীই অপরাধ হিসেবে গন্য। যৌতুকের জন্য স্বামী, স্বামীর পরিবারের সদস্যদের অত্যাচার নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার হয় নারী, কখনো মৃত্যুর মাধ্যমেও যৌতুকের বলী হতে হয় তাকে।যৌতুক দাবী কিংবা নির্যাতনের কোন বয়স বা সময় নেই। ৩৫ বছরের সংসারও ছেড়ে আসতে দেখা যায় নারীকে বিয়ে বিচ্ছেদের মাধ্যমে।
বাল্য বিয়ে:
বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুসারে ১৮ বছরের মেয়ে, ২১ বছরের ছেলের বিয়েকে বাল্যবিয়ে হিসেবে গন্য করা হয়েছে। গত দু’বছরে করোনা সময়ে বাল্য বিবাহ বেড়েছে ভয়াবহ ভাবে। স্কুল বন্ধ, বাবা মা ১৮ বছর উঠতি বয়সী মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে, অনেকটা ঝঞ্ঝাট মুক্ত হওয়ার জন্য। ছোট ছেলে মেয়েরা অনেকে নিজে পছন্দ করে পালিয়ে গিয়ে কিংবা বাবা মায়ের সম্মতিতে বিয়ে করে। নাবালিকা কন্যা বিয়ের পর তার লালিত স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝে যখন মিল খুঁজে পায়না, যখন তার স্বপ্ন ও প্রত্যাশা ভেঙ্গে যায়, তখনই বেছে নেয় বিয়ে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত।
বহু বিবাহ:
একজন নারী তার স্বামী কে একা পেতে চায়,স্বামীর ভাগ কাউকেই দিতে চায়না । অনেক সময় দেখা যায় স্বামী গোপনে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ, সংসারের প্রতি দায়িত্বহীনতা, উদাসীনতা তাকে কাঁদায়।সংসার-সন্তান থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় স্বামীর বহু বিবাহ মেনে নেয়া অনেক স্ত্রীর পক্ষে সম্ভব হয়না। ফলে নেয় বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত।
পরকীয়া:
বর্তমানে ডিজিটাল যুগের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপন,ফেসবুক, মেসেন্জার, ভাইবার, হোয়াটসএ্যাপ, ইমো ইত্যাদি সহজলভ্য হওয়ায় সবাই অতিসহজেই পেয়ে যাচ্ছে নতুন সঙ্গী। ফলে পরকীয়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষ গড়ে তুলছে এক্সট্রা-ম্যারিটাল সম্পর্ক। নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যা প্রযোজ্য। অন্যপুরুষ বা নারীতে আসক্ত পরিবারে সব সময় অশান্তি, নির্যাতন, অবিশ্বাস নিত্যদিনের ঘটনা? একসময় উভয়পক্ষ বিয়েবিচ্ছেদের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পথ বেছে নেয়।
মাদকাসক্তি:
আজকাল বাংলাদেশের ঘরে ঘরে মাদকের নীরব কান্না। যার সন্তান/স্বামী/স্ত্রী মাদকাসক্ত, যার ঘরে ঢুকেছে মাদকের ছোবল, সে জানে মাদকের ভয়াবহতা। বিয়ে বিচ্ছেদের জন্য আসা অধিকাংশের কাছ থেকে জানা যায় মাদকাসক্ত কোন মানুষ আর মানুষ থাকেনা। সে অমানুষে পরিনত হয়। অমানুষের সাথে সংসার করা যখন সম্ভব হয়না বলেই বিয়ে বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয়।
সন্দেহ, বিপথগামী স্বামী স্ত্রী ও বহুগামিতা:
স্বামী স্ত্রী দুজন দুজনকে সন্দেহ করা একটি মানসিক ব্যধি। সন্দেহ কারনে হয় দেখা যায় আজকাল সারাদিন মোবাইলে চ্যাটিং, যৌনবিকৃত কুরুচিপূর্ন ভিডিও তে আসক্ত স্বামী,স্ত্রী। সন্দেহ যখন নিঃস্বন্দেহভাবে ধরা দেয়, বাস্তবে রূপ নেয় তখন কুরুচিপূর্ণ ঘরে না থেকে বিয়ে বিচ্ছেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। বহুগামী নারী পুরুষ আর কুকুর একইগোত্র ভুক্ত। সুতরাং পঙ্কিল অবস্থা থেকে বেরিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদকে সঠিক পথ ভেবে বিচ্ছেদের পথ বেছে নেয় ভুক্ত ভোগী।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category