• বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২৭ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
স্বল্প সময়ে নির্বাচনের দিকে যাবে অন্তর্বর্তী সরকার, আশা মির্জা ফখরুলের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা শিথিল করলো যুক্তরাষ্ট্র প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ক্রিকেটারদের সাক্ষাৎ সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় বাবরের জামিন যাত্রাবাড়ীতে ছাত্র হত্যা: হাইকোর্টে তানিয়া আমীরের জামিন এফএও বাংলাদেশকে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে: কৃষি উপদেষ্টা সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ ৪ সংসদ সদস্যের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বিচারকদের সতর্ক করলো সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি বাতিল তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ৪ দিনের রিমান্ডে

বেশি দামে আদানির বিদ্যুৎ কেনায় আরো বাড়বে পিডিবির লোকসান

Reporter Name / ১০৯ Time View
Update : মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
লোকসানের ভারে এমনিতেই নুয়ে পড়ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। তার মধ্যে বেশি দামে আদানির বিদ্যুৎ কেনায় পিডিবির লোকসান আরো বাড়বে। বর্তমানে বাংলাদেশ ভারত থেকে যে দামে বিদ্যুৎ আমদানি করে তার চেয়ে ৩ গুণ বেশি দামে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি করতে হবে। আদানির বিদ্যুৎ আগামী মার্চে আমদানি শুরু হবে। তাতে বাড়বে পিডিবির লোকসান। ভারতের উচ্চ করপোরেট ট্যাক্স, কয়লার দাম ও পরিবহন খরচ বেশি হওয়ায় ওই বিদ্যুতের দাম বেশি হবে। বিদ্যুৎ জ¦ালানি দ্রুত সরবরাহ আইনে সমঝোতার মাধ্যমে ওই বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। পিডিবি ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর আদানির সঙ্গে ক্রয়চুক্তি সই করে। আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ আনতে বাংলাদেশ সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ১০৬ কিলোমিটার ও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে জাতীয় গ্রিড পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইনের কমিশনিং ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করছে আদানি। এখন ২০০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ আসছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশকে আদানির প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুৎ ১৬-১৭ টাকায় কিনতে হবে। অথচ আমদানি করা কয়লা দিয়ে উৎপাদিত পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ৮-৯ টাকা। আদানির কেন্দ্র থেকে চলতি অর্থবছর (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ আমদানির সম্ভাব্য পরিমাণ ২৯৮ কোটি ৭০ লাখ ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা)। আর তাতে ব্যয় হবে ৫ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে ১৭ টাকা ৮৭ পয়সা। ওই দাম ভারত থেকে বর্তমানে আমদানি করা বিদ্যুতের গড় দামের প্রায় তিন গুণ। গত অর্থবছর ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম পড়ে ৬ টাকা ১১ পয়সা। চলতি অর্থবছর প্রতি ইউনিটের গড় দাম (আদানি ছাড়া) পড়বে ৬ টাকা ৪১ পয়সা।
সূত্র জানায়, এমনিতেই পিডিবি ডলার সংকট ও অর্থের অভাবে বিদ্যুৎ কেনার বকেয়া বিল দিতে পারছে না। ইতোমধ্যে ৮ মাসের বিল বকেয়া পড়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ বিভাগ অর্থ বিভাগের কাছে ৪ মাসের বিল বাবদ ১৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ভর্তুকি চেয়েছে। খরচ বেড়ে যাওয়ায় গত অর্থবছর পিডিবির লোকসান হয় ৩১ হাজার ৮ কোটি টাকা। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছর তার পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৫০৯ কোটি টাকা। এক বছরে লোকসান বেড়েছে ১৯ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেই (জুলাই ও আগস্ট) পিডিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। মূলত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পরিশোধিত উচ্চ ক্যাপাসিটি চার্জ পিডিবির লোকসানের একটি বড় কারণ। বিদ্যুৎ না কিনলেও চুক্তি অনুসারে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ওই অর্থ দিতে হয়। বিগত ২০০৮-০৯ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত পিডিবি বেসরকারি খাতে প্রায় ৯০ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করেছে। এখন আদানির বিদ্যুৎ আমদানির শুরুর পর ওই ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের হার আরো বাড়বে। ফলে পিডিবির লোকসানের পরিমাণও বাড়বে। কারণ আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আনতে বছরে প্রায় ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে। যা বর্তমানে ভারতকে দেওয়া ক্যাপাসিটি চার্জের দ্বিগুণ। বাংলাদেশকে ২৫ বছরে আদানিকে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ৯৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা দিতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ছাড়া বিনিয়োগের একটি বড় অংশ দেশেই ব্যয় হয়। তা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু বাংলাদেশের বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মতো একই রকম শর্তে আদানির বিদ্যুৎ কেনা হলেও তার সুফল ভোগ করবে ভারত। সে দেশের লোকজনের কর্মসংস্থান হবে। মেয়াদ শেষে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ভারতেই থেকে যাবে। অর্থাৎ আদানির বিদ্যুৎ কিনে বাংলাদেশের লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি। তাছাড়া আদানির সঙ্গে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে কয়লার দাম আন্তর্জাতিক বাজার দর অনুযায়ী দিতে হবে। তাতে জ¦ালানি খরচ বেশি পড়বে। পিডিবি চুক্তি অনুসারে বেসরকারি কেন্দ্রগুলোর জ¦ালানি খরচ বিদ্যুতের মূল্যের সঙ্গে পরিশোধ করে। সাধারণত কয়লার মূল্য নিউক্যাসল মূল্য সূচকের ভিত্তিতে গণনা করা হয়। যদি কোনো কোম্পানি উচ্চ মানের কয়লা বেশি পরিমাণে দীর্ঘমেয়াদে কেনে তাহলে বাল্ক মূল্যের ওপর ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের চুক্তিতে ওই ছাড়ের বিষয়টি উল্লেখ আছে। ফলে পিডিবি কয়লার হ্রাসকৃত দাম পরিশোধ করতে পারছে। কিন্তু আদানির চুক্তিতে তেমন কোনো শর্ত নেই। ফলে আন্তর্জাতিক দরে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। তাতে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাবে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম প্রায় ৩ গুণ বেড়েছে।
এদিকে আদানি বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান জানান, তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে আদানির বিদ্যুৎ সস্তা হবে। আদানির বিদ্যুৎ এলে তেলভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন কমবে। পাশাপাশি গ্যাস সংকটে থাকা বিদ্যুতের যে ঘাটতি হয় তা থেকেও পরিত্রাণ মিলবে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুৎ ঘাটতি ও লোভোল্টেজ সমস্যার সমাধান হবে। ফলে ওই বিদ্যুৎ আমদানি দেশের জন্য লাভজনক হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, আগামী মার্চ থেকে আদানির বিদ্যুৎ নেয়া হবে। ওই বিদ্যুৎ এলে ছোট বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। আগামী গরমে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে আদানির বিদ্যুৎ বড় ভূমিকা রাখবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category