০১:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ | ই-পেপার

বেশি লাভের আশায় ভুট্টার আবাদ ঝুঁকছে উত্তরাঞ্চলের কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ধান ও গমের চেয়ে দেশে ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। বর্তমানে ধানের চেয়ে দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে ভুট্টায়। তাছাড়া ভুট্টা চাষে পরিচর্যা কম করতে হয়। আর যেকোনো উঁচু জায়গায় চাষ করা যায়। ফলনও বেশি। আবার মাড়াইপ্রক্রিয়াও বেশ সহজ। বালাইনাশকের প্রয়োজনীয়তাও কম। মূলত বেশি লাভ ও নিশ্চিত বাজার তৈরি হওয়ায় ভুট্টা আবাদে ঝুঁকছে কৃষক। সেজন্য ইতিমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ধান ও গম চাষের বদলে কৃষকরা ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর দেশে ভুট্টার উৎপাদন বাড়ায় কমেছে আমদানিও। এমনকি এরই মধ্যে ভুট্টাকে কেন্দ্র করে দেশের উত্তরাঞ্চলে তৈরি হয়েছে নতুন একটি উদ্যোক্তা শ্রেণিও। দেশের উত্তরাঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হয়। দেশে ভুট্টা উৎপাদনে শীর্ষ ১০ জেলা হচ্ছে দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, রংপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ঝিনাইদহ, জামালপুর ও গাইবান্ধা। উদ্যোক্তা এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বছর বছর দেশে বাড়ছে ভুট্টার উৎপাদন। ফলে কমছে পশুখাদ্য তৈরির অপরিহার্য এ পণ্যটির আমদানিও। ইতিমধ্যে দেশের উৎপাদিত ভুট্টার ওপর নির্ভর করে ৮০ হাজার কোটি টাকার প্রাণিখাদ্য বা ফিডশিল্প গড়ে উঠেছে। গত এক দশকে দেশে ভুট্টার উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৫ু১৬ অর্থবছরে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ২৭ লাখ ৫৯ হাজার টন। এক দশকের ব্যবধানে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই উৎপাদন বেড়ে ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ৫৬ লাখ ২৭ হাজার টন। যদিও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। তাছাড়া দেশে ভুট্টারউৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি ভুট্টা চাষে আবাদি জমির পরিমাণও বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭৮ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। অথচ ২০১১-১২ অর্থবছরে ভুট্টার আবাদি জমির পরিমাণ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৮৩ লাখ হেক্টর। এক দশক আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৫৫ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। সূত্র জানায়, যে ফলস উৎপাদনে লাভ বেশি স্বাভাবিকভাবে সেদিকেই ঝুঁকবে কৃষক। ভুট্টা উৎপাদন করে ধান কিংবা গমের চেয়ে বেশি নগদ অর্থ পাচ্ছে কৃষক। আবার দেশে ভুট্টার একটা নিশ্চিত বাজারও রয়েছে। তাছাড়া ভুট্টার উৎপাদনশীলতাও বেশি। লাভজনক হওয়ায় এখন কৃষকরা ধানের জমিতেও ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে দেশের চাহিদার পুরো জোগানই অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে সামাল দেয়া যাবে। তখন আর আমদানির দরকার হবে না। সূত্র আরো জানায়, ভুট্টার বার্ষিক চাহিদা দেশে ৭০-৭৫ লাখ টন। বর্তমানে যার বেশির ভাগই স্থানীয় উৎপাদনে পূরণ হচ্ছে এবং দিন দিন কমছে আমদানি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ২১ লাখ ১৪ হাজার টন ভুট্টার আমদানি হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টনে দাঁড়ায়। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি অর্থবছর দেশে উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমদানি বেড়ে ১৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। মূলত প্রাণিখাদ্য বা ফিডশিল্পকে কেন্দ্র করে দেশে ভুট্টার বাজার তৈরি হয়েছে। গত দেড় দশকে দেশে পশুপালন ও পোলটি ্রশিল্প খাতের ব্যাপক সমপ্রসারণ ঘটেছে। দেশের ফিড খাত এখন ৮০ হাজার কোটি টাকার শিল্পে পরিণত হয়েছে। আর কৃষকেরা এখন ভুট্টা উৎপাদনকে ব্যবসা হিসেবে দেখছে। তাই উত্তরাঞ্চলে গমের জমিতে ভুট্টা চাষ বাড়ছে। দেশে আমদানি করা উচ্চফলনশীল ভুট্টার জাতগুলো বেশি জনপ্রিয়। এদিকে এ খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, নগদ অর্থে ফিড কারখানাগুলো বাজার থেকে শতভাগ ভুট্টা কিনে নিচ্ছে। দেশে এখন প্রায় ৩০০নিবন্ধিত ফিড মিল বা প্রাণিখাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠান মোট চাহিদার ৭০ ভাগ স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করছে। আর বাকি ৩০ শতাংশ ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। তবে উৎপাদন যত বাড়ছে, আমদানির পরিমাণও তত কমছে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হচ্ছে। আর ভুট্টার ভালো দাম পেয়ে কৃষকও খুশি। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিডব্লিউএমআরআই) গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, কৃষকেরা এখন ভুট্টা উৎপাদনকে ব্যবসা হিসেবে দেখছেন। তাই উত্তরাঞ্চলে গমের জমিতে ভুট্টা চাষ বাড়ছে। দেশে আমদানি করা উচ্চফলনশীল ভুট্টার জাতগুলো বেশি জনপ্রিয়। আমাদের নিজস্ব দুটি জাত থাকলেও সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা যথেষ্ট বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে পানি কম লাগে। উত্তরাঞ্চলের যেসব এলাকায় পানির সমস্যা বেশি, সেখানে ভুট্টার চাষ বাড়ছে। তাছাড়া ধানের তুলনায় বালাইনাশকও কম লাগে। তবে এবার মাড়াইয়ের সময় টানা বৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে লিফট দুর্ঘটনা

বেশি লাভের আশায় ভুট্টার আবাদ ঝুঁকছে উত্তরাঞ্চলের কৃষক

আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৯:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ জুলাই ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ধান ও গমের চেয়ে দেশে ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। বর্তমানে ধানের চেয়ে দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে ভুট্টায়। তাছাড়া ভুট্টা চাষে পরিচর্যা কম করতে হয়। আর যেকোনো উঁচু জায়গায় চাষ করা যায়। ফলনও বেশি। আবার মাড়াইপ্রক্রিয়াও বেশ সহজ। বালাইনাশকের প্রয়োজনীয়তাও কম। মূলত বেশি লাভ ও নিশ্চিত বাজার তৈরি হওয়ায় ভুট্টা আবাদে ঝুঁকছে কৃষক। সেজন্য ইতিমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ধান ও গম চাষের বদলে কৃষকরা ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর দেশে ভুট্টার উৎপাদন বাড়ায় কমেছে আমদানিও। এমনকি এরই মধ্যে ভুট্টাকে কেন্দ্র করে দেশের উত্তরাঞ্চলে তৈরি হয়েছে নতুন একটি উদ্যোক্তা শ্রেণিও। দেশের উত্তরাঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হয়। দেশে ভুট্টা উৎপাদনে শীর্ষ ১০ জেলা হচ্ছে দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, রংপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ঝিনাইদহ, জামালপুর ও গাইবান্ধা। উদ্যোক্তা এবং কৃষি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বছর বছর দেশে বাড়ছে ভুট্টার উৎপাদন। ফলে কমছে পশুখাদ্য তৈরির অপরিহার্য এ পণ্যটির আমদানিও। ইতিমধ্যে দেশের উৎপাদিত ভুট্টার ওপর নির্ভর করে ৮০ হাজার কোটি টাকার প্রাণিখাদ্য বা ফিডশিল্প গড়ে উঠেছে। গত এক দশকে দেশে ভুট্টার উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৫ু১৬ অর্থবছরে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ২৭ লাখ ৫৯ হাজার টন। এক দশকের ব্যবধানে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ওই উৎপাদন বেড়ে ৬৮ লাখ ৮৪ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ৫৬ লাখ ২৭ হাজার টন। যদিও চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ৬৬ লাখ টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। তাছাড়া দেশে ভুট্টারউৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি ভুট্টা চাষে আবাদি জমির পরিমাণও বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৭৮ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। অথচ ২০১১-১২ অর্থবছরে ভুট্টার আবাদি জমির পরিমাণ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৮৩ লাখ হেক্টর। এক দশক আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ দশমিক ৫৫ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। সূত্র জানায়, যে ফলস উৎপাদনে লাভ বেশি স্বাভাবিকভাবে সেদিকেই ঝুঁকবে কৃষক। ভুট্টা উৎপাদন করে ধান কিংবা গমের চেয়ে বেশি নগদ অর্থ পাচ্ছে কৃষক। আবার দেশে ভুট্টার একটা নিশ্চিত বাজারও রয়েছে। তাছাড়া ভুট্টার উৎপাদনশীলতাও বেশি। লাভজনক হওয়ায় এখন কৃষকরা ধানের জমিতেও ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। উৎপাদনের এই ধারা অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে দেশের চাহিদার পুরো জোগানই অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে সামাল দেয়া যাবে। তখন আর আমদানির দরকার হবে না। সূত্র আরো জানায়, ভুট্টার বার্ষিক চাহিদা দেশে ৭০-৭৫ লাখ টন। বর্তমানে যার বেশির ভাগই স্থানীয় উৎপাদনে পূরণ হচ্ছে এবং দিন দিন কমছে আমদানি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ২১ লাখ ১৪ হাজার টন ভুট্টার আমদানি হয়েছিল। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টনে দাঁড়ায়। তবে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি অর্থবছর দেশে উৎপাদন কিছুটা কম হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমদানি বেড়ে ১৪ লাখ টনে উন্নীত হয়েছে। মূলত প্রাণিখাদ্য বা ফিডশিল্পকে কেন্দ্র করে দেশে ভুট্টার বাজার তৈরি হয়েছে। গত দেড় দশকে দেশে পশুপালন ও পোলটি ্রশিল্প খাতের ব্যাপক সমপ্রসারণ ঘটেছে। দেশের ফিড খাত এখন ৮০ হাজার কোটি টাকার শিল্পে পরিণত হয়েছে। আর কৃষকেরা এখন ভুট্টা উৎপাদনকে ব্যবসা হিসেবে দেখছে। তাই উত্তরাঞ্চলে গমের জমিতে ভুট্টা চাষ বাড়ছে। দেশে আমদানি করা উচ্চফলনশীল ভুট্টার জাতগুলো বেশি জনপ্রিয়। এদিকে এ খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, নগদ অর্থে ফিড কারখানাগুলো বাজার থেকে শতভাগ ভুট্টা কিনে নিচ্ছে। দেশে এখন প্রায় ৩০০নিবন্ধিত ফিড মিল বা প্রাণিখাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠান মোট চাহিদার ৭০ ভাগ স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করছে। আর বাকি ৩০ শতাংশ ভুট্টা আমদানি করতে হচ্ছে। তবে উৎপাদন যত বাড়ছে, আমদানির পরিমাণও তত কমছে। তাতে বৈদেশিক মুদ্রারও সাশ্রয় হচ্ছে। আর ভুট্টার ভালো দাম পেয়ে কৃষকও খুশি। অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিডব্লিউএমআরআই) গবেষণা বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, কৃষকেরা এখন ভুট্টা উৎপাদনকে ব্যবসা হিসেবে দেখছেন। তাই উত্তরাঞ্চলে গমের জমিতে ভুট্টা চাষ বাড়ছে। দেশে আমদানি করা উচ্চফলনশীল ভুট্টার জাতগুলো বেশি জনপ্রিয়। আমাদের নিজস্ব দুটি জাত থাকলেও সীমাবদ্ধতার কারণে আমরা যথেষ্ট বীজ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে পানি কম লাগে। উত্তরাঞ্চলের যেসব এলাকায় পানির সমস্যা বেশি, সেখানে ভুট্টার চাষ বাড়ছে। তাছাড়া ধানের তুলনায় বালাইনাশকও কম লাগে। তবে এবার মাড়াইয়ের সময় টানা বৃষ্টির কারণে ফলন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।