• রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:০০ পূর্বাহ্ন
  • ই-পেপার

ভয়াবহ একাধিক অগ্নি দুর্ঘটনার পরও যথাস্থানেই রয়েছে রাসায়নিকের গুদাম

Reporter Name / ৭৩ Time View
Update : শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকায় একাধিক ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা সত্ত্বেও সেখান থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরানো হয়নি। ঢিমেতালে চলছে ঢাকার বাইরে নিরাপদ স্থানে কেমিক্যাল পল্লী গড়ার কাজ চলছে। আর চাপা পড়ে আছে অস্থায়ী স্থানে গুদাম সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগও। গত এক যুগে পুরান ঢাকায় ছোট-বড় কারখানা ও বাসাবাড়িতে ৩ শতাধিক ছোট-বড় অগ্নিকা- ঘটেছে। তা সত্ত্বেও পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরে যায়নি। বিসিকি এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুরান ঢাকার বাসিন্দারা নিমতলী বা চুড়িহাট্টার মতো ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার পরও রাসায়নিক পদার্থের ঝুঁকি থেকে বের হতে পারেনি। যদিও সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে ফায়ার সার্ভিস নিমতলীর পর চুড়িহাট্টা অগ্নিকা-ে পুরান ঢাকা থেকে সব কেমিক্যাল গুদাম ও দোকান সরানোর ঘোষণা দিয়েছিল। সিটি করপোরেশন ওই ঘোষণা বাস্তবায়নে ১৫ দিনের অভিযান চালিয়েছিল এবং কয়েকটি গুদাম সিলগালাও করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বিশেষ পরিবর্তন আসেনি। বরং ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে রাসায়নিকের কেনাবেচা চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিগত ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলী ট্র্যাজেডিতে নারী, শিশুসহ ১২৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। ওই ঘটনার পর পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক পদার্থের দোকান ও গুদাম সরিয়ে নেয়ার জোরালো দাবি ওঠে। সরকারও এ নিয়ে সময় বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু এখনো রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। নিমতলীর পর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টায় বড় আগুনে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটে। রাসায়নিকের গুদাম ওই দুটি অগ্নিকা-ের উৎস।
সূত্র আরো জানায়, ঘনবসতি থেকে রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নিতে বিগত ২০১৮ সালে বিসিক কেমিক্যাল পল্লী, ঢাকা নামে একটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। আর ২০১৯ সালে চুড়িহাট্টায় আবারো কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকা-ে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তখন কেরানীগঞ্জে রাসায়নিক পল্লী স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে নতুন স্থান ঠিক হয় মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান। শুরুতে ওই প্রকল্প ২০২১ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরে সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন করা হয়। পাশাপাশি প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে ‘বিসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, মুন্সীগঞ্জ’ করা হয়। তাছাড়া প্রকল্পের ব্যয়ও ৮ গুণ বেড়েছে। প্রথমে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সংশোধনের পর ওই প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে এক হাজার ৬১৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ঢাকার কেরানীগঞ্জে ৫০ একর জমিতে কেমিক্যাল পল্লী হওয়ার কথা থাকলেও মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার তুলসীখালী ব্রিজসংলগ্ন গোয়ালিয়া, চিত্রকোট ও কামারকান্দা নামক তিনটি মৌজার মোট ৩১০ একর জমির ওপর ২ হাজার ১৫৪টি শিল্প প্লট তৈরির কথা রয়েছে।
এদিকে শুধু জমি অধিগ্রহণেই প্রকল্পের দুই বছর চলে গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এখনো মাটি ফেলে ওই জায়গা ও অবকাঠামো নির্মাণ উপযোগী করে তুলতে পারেনি। নিমতলী আগুনের ঘটনায় পুরান ঢাকায় অভিযানে প্রায় এক হাজার রাসায়নিক পদার্থের গুদাম বা কারখানার মধ্যে মাত্র ১২৭টির লাইসেন্স পাওয়া যায়। বর্তমানে পুরান ঢাকায় রাসায়নিকের গুদাম ও দোকান রয়েছে প্রায় ২২ হাজার। তার মধ্যে মাত্র ৮০০টি গুদামের অনুমোদন বা লাইসেন্স আছে। বিভিন্ন বাসাবাড়িতেও রয়েছে কেমিক্যাল ও পারফিউমের গুদাম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category