• বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার

ভিডিও কলে বিয়ে বৈধ না অবৈধ

Reporter Name / ২৩৫ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২

তানজিম আল ইসলাম
ইদানীং দেখা যায়, ভিডিও কল বা ভিডিও কনফারেন্সে ছেলেমেয়ের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। বেশির ভাগ বিয়েই হচ্ছে পরিবারের সম্মতিতে। ইন্টারনেট প্রযুক্তি আসার আগে টেলিফোনে বিয়ের চল ছিল একসময়। এখনো তা আছে। আর স্মার্টফোন তো রয়েছেই। এখন মেসেঞ্জার, ইমো, স্কাইপে বা বিভিন্ন ভিডিও কলের অ্যাপ আসার পর ভিডিও কলে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ঘটনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এ ধরনের টেলিফোন বা ভিডিও কলের মাধ্যমে হওয়া বিয়ের আইনগত ভিত্তি কী এর বৈধতাই–বা কতটা এ নিয়ে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট তানজিম আল ইসলাম
আইনের চোখে
মুসলিম আইন অনুযায়ী বিয়েকে একটি ধর্মীয় বিধান এবং একটি দেওয়ানি চুক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। একটি মুসলিম বিয়ে সম্পূর্ণ ও বৈধ হতে হলে কয়েকটি বাধ্যতামূলক উপাদান বা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে। প্রথমত, উভয় পক্ষের সম্মতি থাকতে হবে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে সুস্পষ্টভাবে বিয়ের প্রস্তাব দেবে এবং অন্য পক্ষের দ্বারা তা সুস্পষ্টভাবে গ্রহণ করতে হবে, তা হতে হবে সাক্ষীদের সামনে। মুসলিম বিয়েতে অবশ্যই সাক্ষী থাকতে হবে। সাধারণত দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাক্ষী অথবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী সাক্ষী থাকতে হবে। বিয়েতে অবশ্যই দেনমোহর নির্ধারণ করতে হবে। টেলিফোন বা ভিডিও কনফারেন্সের বিয়েতে এ আনুষ্ঠানিকতাগুলো কতটা থাকে, তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসলিম বিয়েতে একই বৈঠকে একই উপযুক্ত সাক্ষীদের সামনে স্পষ্ট উচ্চারণের মাধ্যমে পাত্র–পাত্রীর সম্মতি নিতে হয়। এর কোনো একটি বাদ গেলে বিয়েটি যথাযথ বা বৈধ হয় না। সাধারণত ভিডিও কলে পাত্র বা পাত্রী দুই প্রান্তে থাকলেও তাঁদের উভয় পক্ষের উপযুক্ত সাক্ষীর সামনে একই সময়ে বিয়ের প্রস্তাব প্রদান ও গ্রহণ করা না হলে বিয়ে সম্পন্ন হবে না। তবে ভিডিও কলের বিয়েতে যদি এ ধরনের আনুষ্ঠানিকতা বা উপাদানগুলো থাকে, তবে বিয়েটি বৈধ হতে পারে বলে অনেক ইসলামি চিন্তাবিদ মতামত দিয়েছেন। দুই পক্ষ মিলে একজন আইনজীবী বা প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারেন লিখিতভাবে এবং ভিডিও কলে বিয়ের সময় সেই প্রতিনিধি সাক্ষীদের সামনে নিয়ে দুই পক্ষের ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত থেকে বিয়ে পড়ালে সেটি যুক্তিযুক্ত হয় বলেও অনেকে মনে করেন।
আমাদের দেশের যে বিধিবদ্ধ আইন রয়েছে, তাতে বরের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর ও কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। এটি আইন অনুযায়ী একটি প্রধান শর্ত এবং দ্বিতীয়ত হচ্ছে বিয়েটি অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে।
কিন্তু ভিডিও কলে বিয়ে সম্পন্ন হলে বিয়ের নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। মুসলিম বিয়ে ও তালাক (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিয়ে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। আইন অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধন করার দায়িত্ব মূলত বরের। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় দুই বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদ- অথবা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় ধরনের সাজা খাটতে হবে। যে ক্ষেত্রে কাজি বিয়ে পড়িয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে কাজি তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ে নিবন্ধন করবেন। কাজি ছাড়া অন্য কেউ বিয়ে পড়ালে ৩০ দিনের মধ্যে বিয়েটি কাজির মাধ্যমে নিবন্ধন করাতে হবে। ভিডিও কলে বিয়ে পড়ানো হলে এক পক্ষ যেহেতু বিদেশে থাকে, সেহেতু বিয়ের নিবন্ধন করার ব্যাপারটি অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর নিবন্ধন তথা নিকাহনামা বা কাবিননামা ছাড়া বিয়ে প্রমাণ করা খুবই কষ্টসাধ্য। কারণ, ভিডিও কলে বিয়ে পড়ানোর পর কোনো কারণে যদি বিয়েটি অস্বীকার করা হয় কিংবা বিচ্ছেদ নিতে চায়, তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। একজন আরেকজনকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রটিও কাবিননামা ছাড়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
যা মনে রাখতে হবে
মুসলিম বিয়েতে নিবন্ধিত কাবিননামা হলো বিয়ের চুক্তিপত্র। বিয়ে নিবন্ধন করা থাকলে তালাকের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা সহজ হয়। স্ত্রীর দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায়ের জন্য কাবিননামার প্রয়োজন হয়। সন্তানের বৈধ পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য কাবিননামা লাগে। স্বামী বা স্ত্রীর মৃত্যু হলে উত্তরাধিকার হিসেবে সম্পত্তি আদায়ের ক্ষেত্রে কাবিননামার প্রয়োজন হয়। আবার স্ত্রী তালাক দিতে চাইলে কাবিননামায় তা সুনির্দিষ্টভাবে বলা থাকতে হবে। তাই ভিডিও কনফারেন্সে বা টেলিফোনে বিয়ে হলে দেশে এসে দ্রুত বিয়ের নিবন্ধন করে নেওয়া উচিত। অনেককে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ সম্পন্ন করে একজনকে নিবন্ধন করার জন্য ক্ষমতা বা সম্মতি প্রদান করতে দেখা যায়, তবে নিবন্ধনে যেহেতু বর ও কনের স্বাক্ষর প্রয়োজন হয়, তাই মতপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষর করা নিয়েও জটিলতা তৈরি হতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category