নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানী মিরপুরে পুলিশের বেশ কয়েকটি ট্রাফিক বক্সে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার ১১ ব্যাটারিচালিত রিকশাচালককে দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ শনিবার এ মামলায় গ্রেপ্তার ১১ রিকশাচালককে আদালতে হাজির করে তদন্তের স্বার্থে প্রত্যেকের সাতদিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসী তাদের প্রত্যেকের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে ট্রাফিক পুলিশের ওপর হামলা ও একযোগে পাঁচটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে ভাঙচুরের বিষয়টি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় এটি পূর্বপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, রাজধানীর মিরপুর এলাকায় হাজারো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক ও নিয়ন্ত্রক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক নেতা। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী অবৈধ ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে নামলে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে মালিকপক্ষ। পুলিশের অভিযান বন্ধ করতে দীর্ঘদিন ধরে এমন হামলার পরিকল্পনা করা হয়। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাধারণ চালকদের রুটি-রুজির ভয় দেখিয়ে হামলায় মূল উসকানি দেন রিকশার মালিকরাই। গত শুক্রবার সকালে পল্লবীতে মূল সড়কে অবৈধভাবে অটোরিকশা চালানোর অভিযোগে ব্যাটারিচালিত দুটি রিকশা জব্দ করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অটোরিকশার চালকরা ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা করে। এ সময় ভাঙচুর করা হয় পুলিশের মোটরসাইকেল। হামলায় ট্রাফিক পুলিশের একজন কনস্টেবল আহতও হয়েছেন। এ হামলার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, হামলাকারীরা পুলিশ বক্সের ভেতর থেকে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে এসে রাস্তায় ফেলে মারধর করে। এ ছাড়া হামলাকারীরা দল বেধে অতর্কিতভাবে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলা করে ভাঙচুর চালায়। সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুর ও পল্লবী এলাকার প্রধান সড়কে হাজারো ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। এসব অটোরিকশার মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা। তারা বিভিন্ন মহলের সঙ্গে লিয়াজো রক্ষা করে অবৈধভাবে এসব অটোরিকশা রাস্তায় নামিয়েছে। এ ছাড়া অবাধে যেন এসব অটোরিকশা চলাচল করতে পারে সেজন্য বিভিন্ন মহলে মাসিক হারে টাকাও দেয় মালিকপক্ষ। তবে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সম্প্রতি মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় অবৈধ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযানে নামে ট্রাফিক পুলিশ। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে মালিকপক্ষ। তারা বেশ কয়েকদিন ধরেই বিভিন্নভাবে পুলিশের এ অভিযান বন্ধ করার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তাতেও সফল হতে না পেরে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সর্বশেষ পুলিশের অভিযান বন্ধ করার লক্ষ্যে হামলার পরিকল্পনা করে মালিকপক্ষ। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাধারণ চালকদের রুটি-রুজির ভয় দেখিয়ে পুলিশের ওপর হামলায় মূল উসকানি অটোরিকশার মালিকরা। সংঘবদ্ধভাবে অতর্কিতভাবে পুলিশের ওপর ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে হামলার বিষয়টি সাধারণ বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বলে করছেন পুলিশের কর্মকর্তারাও। কোনো পক্ষ অভিযানের বিষয়টি সামনে রেখে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী এ হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, পুলিশ বক্সে ও পুলিশের ওপর সংঘবদ্ধভাবে যে হামলাটি হয়েছে সেটি আসলে পূর্ব পরিকল্পিত। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ট্রাফিক পুলিশ কাজ করছিল। সেই কাজটি করতে গিয়েই ট্রাফিক পুলিশ হামলার শিকার হয়েছে। সংঘবদ্ধভাবে এ হামলার পেছনে অন্য কোনো ইন্ধন আছে কিনা জানতে চাইলে এসি আবদুল হালিম বলেন, আমরা সব বিষয়কে সামনে রেখেই তদন্ত করছি। হামলার সঙ্গে যারা জড়িত ছিল এবং যাদের ইন্ধনে হামলা হয়েছে সবাইে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ট্রাফিক পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) ইলিয়াস হোসেন বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মালিক পল্লবী ও মিরপুর এলাকার স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চালক নিয়ে এসে মিরপুর ও পল্লবী এলাকায় অবৈধভাবে এসব রিকশা দিয়ে ব্যবসা করতো। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক যখন এসব অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে অভিযান চলছিল তখন মালিকপক্ষের ইন্ধনে চালকরা একত্র হয়। সর্বশেষ মালিকপক্ষের উসকানিতেই চালকরা ইট-পাটকেল ও লাঠি সোটা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের ওপর ও পুলিশ বক্সে হামলা করে। এদিকে পাঁচটি ট্রাফিক পুলিশের বক্সে হামলা ঘটনায় অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করে পল্লবী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আহাদ আলী জানান, পুলিশ বক্সে ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় পুলিশের কাজে বাধা ও সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়। মামলায় অজ্ঞাত নাম-পরিচয়ের ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ বিষয়ে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।