• বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
মির্জা ফখরুলকে আর ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না: মেয়র তাপস নির্বাচনে জেতার গ্যারান্টি চায় বিএনপি: তথ্যমন্ত্রী খেলাপি ঋণ আদায়ের মামলা নিষ্পত্তির ধীরগতিতে আটকে পড়েছে বিপুল টাকা আপাতত ইসির অধীনেই থাকছে এনআইডি রোহিঙ্গা ইস্যুতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির ডেঙ্গু চিকিৎসায় অনিয়ম: ৩ হাসপাতালকে জরিমানা, ২ ডায়াগনস্টিক বন্ধ বান্দরবানে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস বান্দরবানে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে এলজিইডি কার্যালয়ে এ মেলা বান্দরবানে রুমায় কেএনএফ সদস্য গুলিবিদ্ধ বান্দরবানে “জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং কোভিড ১৯ প্রতিবেদন ” প্রকল্পের প্রচার সভা

মুদি দোকানি থেকে মানবপাচারকারী, মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ৮

Reporter Name / ২৮৮ Time View
Update : বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মুদি দোকানদার থেকে তিনটি ওভারসিজ এজেন্সির মালিক বনে যাওয়া মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচারকারী চক্রের অন্যতম হোতা টুটুল ও সহযোগী তৈয়বসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে র‌্যাব। মেহেরপুরের গাংনী থানার সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল (৩৮) এইচএসসি পাস করে প্রথমে ছিলেন মুদি দোকানদার। ঢাকায় আসা যাওয়ার মাঝে অধিক লাভের আশায় মানবপাচার চক্রে জড়িয়ে পড়েন। শুরুতে চক্রের দালাল হিসেবে বিভিন্ন এজেন্সিতে বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করতেন। পরে নিজেই খোলেন তিনটি ওভারসিজ প্রতিষ্ঠান। তবে ওই তিন প্রতিষ্ঠানের বৈধতা না থাকায় অন্য বৈধ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বেকার ও শিক্ষিত অর্ধ-শতাধিক নারী-পুরুষকে বিদেশে পাচার করেন। এভাবে হাতিয়ে দেন কোটি টাকা। টুটুলের এই প্রতারণার কাজে অন্যতম দালাল বা সহযোগী ছিলেন মো. তৈয়ব আলী (৪৫)। তিনিও চায়ের দোকানদার হলেও পরিচয় দিতেন স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার হিসেবে। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। তাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- গোপালগঞ্জের শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন (৩৮), মেহেরপুরের মো. মারুফ হাসান (৩৭) ও লালটু ইসলাম (২৮), শরিয়তপুরের আলামিন হোসাইন (৩০), কুষ্টিয়ার আব্দল্লাহ আল মামুন (৫৪)। ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, সম্প্রতি কয়েকজন নারী ভিকটিমের অভিভাবকের মধ্যপ্রাচ্যে মানবপাচার সংক্রান্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‌্যাব-৪ ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এর ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত বাড্ডা থানার লিংকরোডে টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজে অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ ৪ ভিকটিমকে উদ্ধার, ১০টি পাসপোর্ট, ৭টি ফাইল, ৪টি সিল, ১৭টি মোবাইল, ৫টি রেজিস্টার, ব্যাংকের চেক বই, ২টি কম্পিউটার, ৩টি লিফলেট এবং নগদ ১০ হাজার টাকাসহ ওই আট মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। মোজাম্মেল হক বলেন, এইচএসসি পাস টুটুল মেহেরপুরের গাংনী থানার কামন্দী গ্রামে মুদি দোকানদার হিসেবে কাজ করতেন। মাঝে মাঝে ঢাকায় আসতেন। লোভে পড়ে মানবপাচারকারী চক্রে জড়িয়ে পড়েন। শুরুতে চক্রের দালাল হিসেবে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে লোক পাঠানো শুরু করেন। পরে নিজেই রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় খুলে বসেন টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজ নামে তিনটি এজেন্সি। এর মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের বেকার ও শিক্ষিত বহু নারী ও পুরুষকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা প্রতারণামূলকভাবে গ্রহণ করেছেন টুটুল। আবু তৈয়ব, টুটুলের প্রতারণার অন্যতম সহযোগী। পড়াশুনা না জানা তৈয়ব চায়ের দোকানদার হলেও পরিচয় দিতেন স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার হিসেবে। টুটুলের প্ররোচনায় চক্রে জড়িয়ে প্রতারণামূলকভাবে বিদেশে মানবপাচারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। অনেককে দিয়েছেন চাকরির ভুয়া নিয়োগপত্রও। মানবপাচার চক্রের অন্যতম সহযোগী শাহ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন ও মারুফ হাসান ছিলেন বেতনভুক্ত কর্মচারী। জাহাঙ্গীর আলম, লালটু ইসলাম, আলামিন হোসাইন ও আব্দল্লাহ আল মামুন টার্গেট সংগ্রহ, প্রার্থীর পাসপোর্টের ব্যবস্থা, কথিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, টাকা সংগ্রহ, প্রাথমিক মেডিকেল সম্পূর্ণ করাসহ অন্যান্য কাজে সহায়তা করে আসছিল। প্রতারক টুটুল ও তৈয়বের নির্দেশে চক্রের সদস্যরা টার্গেট করে দেশের বেকার ও অস্বচ্ছল যুবক-যুবতীদের সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ বিভিন্ন দেশে লোভনীয় বেতনে কাজ দেওয়ার নাম করে প্রলুব্ধ করতো। এরপর বিদেশ যেতে আগ্রহীদের ঢাকায় মূলহোতা টুটুল ও তৈয়বের কাছে পাঠাতো। টুটুল ও তৈয়ব তাদের অফিসে এনে ভিকটিমদের বিদেশে বাসাবাড়িতে কাজের নামে পাঠানোর উদ্দেশ্যে ভুয়া রসিদ দেয়। এ বাবদ প্রতিজনের কাজ থেকে দুই থেকে ৫ লাখ টাকা নেয়া হতো। প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও পাচারকারী চক্রের কয়েকজন সদস্য নিজেদের উচ্চশিক্ষিত বলে পরিচয় দিতো। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বাসাবাড়িতে কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে ভিকটিমদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আদায় করতো। চক্রের কয়েকজন সদস্য অফিস স্টাফ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ভিকটিমদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতেন। এতে ভিকটিমদের মনে আর কোনো সন্দেহ থাকতো না। পাসপোর্ট অফিসের দালালেদের সঙ্গেও সখ্যতা ছিল চক্রের সদস্যদের। কথিত মেডিকেল টেস্ট শেষে নারী ভিকটিমদের বাসাবাড়িতে বিক্রি এবং পুরুষ ভিকটিমদের অমানবিক কাজে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের জেদ্দা ও রিয়াদ, জর্ডান ও লেবাননে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতেন। পাচার হওয়া ভিকটিমরা বিদেশে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারতেন না। যাদের বিদেশে পাঠানো সম্ভব হতো না তারা টাকা ফেরতে যোগাযোগ করলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হতো।
চক্রের অন্যতম মূলহোতা গ্রেপ্তার তৈয়ব নিজেকে স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিয়ে শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের উচ্চ বেতনে লোভনীয় চাকরির কথা বলে যোগাযোগ করেন। এরপর নিজ কার্যালয়ে নিয়ে আসতেন। বিভিন্ন বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনে চাকরিসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠানে ভুয়া চাকরির যোগদানপত্র দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন তৈয়ব। বৈধতা না থাকার পরও কিভাবে মানবপাচার করেছিলেন টুটুল-তৈয়ব চক্র, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, তাদের তিন ওভারসিজ প্রতিষ্ঠানের বৈধতা না থাকায় বৈধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষকে পাচার করেছেন। এ ছাড়া শতাধিক মানুষকে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মতো ভুক্তভোগী র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। প্রতারিত ভুক্তভোগীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা হয়রানির অভিযোগ তুলে মানববন্ধন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, বৈধ কোনো জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্য নয়। তবে বৈধতার আড়ালে কেউ যাতে মানবপাচার করতে না পারে সেজন্যই র‌্যাবের অভিযান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category