নিজস্ব প্রতিবেদক :
যাত্রাবাড়ীর গোলাপবাগ থেকে তৃতীয় লিঙ্গের মাকসুদুর রহমান ওরফে মেঘনা ডায়নার (৪৮) গলিত লাশ তার কক্ষেই এগারো দিন পড়েছিল। এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় শোয়েব আক্তার লাদেন নামে একজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ বলছে, যৌন সম্পর্কে অতিষ্ঠ হয়ে এই হত্যাকা-। আজ বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জিয়াউল আহসান তালুকদার এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, শনিবার বিকেলে গোলাপবাগের একতলা বাড়ির কক্ষ থেকে ডায়নার লাশ উদ্ধার করা হয়। এই হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার শেরপুরের নালিদতাবাড়ি থেকে শোয়েব আক্তার লাদেন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন লাদেন। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর এই হত্যাকা-ের কারণ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান। তিনি বলেন, লাদেন জানিয়েছেন গত ১৬ আগস্ট এই হত্যাকা- ঘটিয়ে বাড়ির ফটক টপকে পালিয়ে যান তিনি। ডায়নারা ছয় ভাই-বোন, সবাই আমেরিকার সিটিজেন এবং ডায়না নিজেও একজন আমেরিকান সিটিজেন। দুই বছর আগে ডায়না দেশে এসে ওই বাসায় বসবাস করছেন। তাই বাংলাদেশে তার কাছের কোনো স্বজন নেই। ডিসি জিয়াউল আহসান আরও বলেন, ডায়নার এক ফুফাতো ভাইয়ের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। তার ওই ফুপাতো ভাই ডায়নার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। তাই পুলিশকে খবর দেন। তিনি বলেন, লাদেন ডায়নার বাসায় কাজ করতেন। যখনই প্রয়োজন হতো, তখনই ডায়না তাকে ডাকতেন। এভাবেই তাদের মধ্যে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডায়না বাসায় একাই বসবাস করতেন জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি বাইরের কারও সঙ্গে মিশতেন না। তবে কিছু তরুণ তার বাসায় মাঝে-মধ্যে আসা-যাওয়া করতেন। ডায়নাকে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ছিলেন এবং তিনি সমকামি ছিলেন জানিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকা-ের কিছুদিন আগে লাদেন বিয়ে করেন। বিয়ের পরও লাদেন এবং ডায়নার মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক চলতে থাকে। কিন্তু লাদেনের বিয়ে ও নতুন জীবনকে ডায়না কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, লাদেনও ডায়নার সঙ্গে সম্পর্ক শেষ করে মুক্ত জীবনে ফিরতে চাইতেন। কিন্তু আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ডায়না লাদেনকে ছাড়তেন না। তিনি লাদেনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতেন, বিনিময়ে অর্থ দিতেন। ১৬ অগাস্ট শারীরিক সম্পর্কের একপর্যায়ে বাসার টেবিলে থাকা হাতুড়ি দিয়ে ডায়নার মাথায় আঘাত করেন বলে লাদেন পুলিশকে জানান। মাথায় ও হাঁটুতে উপর্যুপরি আঘাত করায় ডায়না রক্তাক্ত অবস্থায় অচেতন হয়ে বিছানায় পড়ে থাকেন। এ সময় লাদেন দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে বন্ধ মূল ফটক টপকে পালিয়ে যান। ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার জিয়াউল আহসান বলেন, ডায়না আশপাশের কারও সঙ্গে মিশতেন না। একতলা ওই বাড়ির দেওয়ালও অনেক উঁচু ছিল। তাই এতদিন লাশ পড়ে থাকার পরও আশপাশের কেউ টের পাননি।