• মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন
  • ই-পেপার
সর্বশেষ
এক সপ্তাহের মধ্যে হয়রানিমূলক গায়েবি মামলা প্রত্যাহার: আইন উপদেষ্টা ছাত্রশিবির ছাত্রসমাজের সবচেয়ে আপন: জামায়াত আমির বিশেষ ওএমএস’র মেয়াদ বাড়ছে না: অর্থ উপদেষ্টা নানামুখী অভিযানেও বন্ধ করা যাচ্ছে না নৌপথে মানব পাচার ভ্যাট মামলা ও বকেয়ায় আটক হাজার হাজার কোটি টাকা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ ক্ষুদ্রঋণ চালু করতে বাংলাদেশের সহযোগিতা চায় আর্জেন্টিনা বৈষম্যহীন দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে সাংবাদিকদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান ইসির চাহিদা অনুযায়ী সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে ইউএনডিপি সাকিব আল হাসানকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা রক্ত ঝরবে কিন্তু সীমান্ত সুরক্ষিত থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাজধানীবাসীর যানজট দুর্ভোগ শেষ হবে না আগামী তিন দশকে

Reporter Name / ৪৩৩ Time View
Update : সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীবাসীর নিত্য দুর্ভোগ হলো যানজট। এই দুর্ভোগ থেকে তাদের যেন মুক্তি নেই। দুর্ভোগের পাশাপাশি রাজধানীতে যানজটের কারণে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে এক কোটি ৯০ লাখ কর্মঘণ্টা। যানজটে নষ্ট হওয়া অতিরিক্ত সময়ের মূল্য গড়ে ঘণ্টায় ৭০ টাকা ধরে হিসাব করলে দেখা যায়, প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। রাজধানীর সড়কে পরিচালিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)-এর এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে রাস্তায় অবৈধ পার্কিং, ফুটপাত দখল, রাস্তার পাশে অস্থায়ী পাইকারি কাঁচা বাজার, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্রমিক ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা গড়ে না ওঠা, লেন মেনে যানবাহন না চালানো, ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা, ট্রাফিক পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, ট্রাফিক আইন ও রীতিনীতি সম্পর্কে অজ্ঞতা উল্লেখযোগ্য। ঢাকা শহর মূলত গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিতভাবে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে বসতবাড়ি পর্যন্ত সবকিছুতেই পরিকল্পনার অভাব রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানদ-ে একটি পরিকল্পিত শহরের ২৫ শতাংশ জমি যান চলাচলের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। সেই হিসাবে ঢাকা শহরের আয়তনের মাত্র সাত শতাংশ যান চলাচলের জন্য ব্যবহার করা হয়, যা প্রকৃত মানদ-ের মাত্র ২৮ শতাংশ। এ অবস্থার আশু সমাধানের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কেননা, সড়কগুলোকে প্রশস্ত করার কোনো সুযোগ নেই, নেই নতুন করে রাস্তা নির্মাণের অবকাশ। বরং বিভিন্ন ধরনের দখলদারি, অবৈধ পার্কিং ও রাস্তার ওপর নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখার কারণে রাস্তাগুলো ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে।
যানজট নিরসনে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত কয়েক দফা সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে, কিন্তু এর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। যানজট নিরসনে সরকারি নির্দেশনা সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সব কিছুই চলছে ফ্রিস্টাইলে। একই এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে শ্রেণি কার্যক্রম নির্ধারণের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষিত থাকছে। দেখা গেছে, কিছু এলাকায় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো একই সময়ে শুরু হচ্ছে। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আসা গাড়ি, রিকশা ও বিভিন্ন যানবাহন প্রায় একই সময়ে একই এলাকায় প্রবেশ করছে। এতে অসহনীয় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। রাজধানীর প্রায় সব এলাকায় এ ধরনের দৃশ্য নিত্যদিনের। তা ছাড়া বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা ও স্কুলের পরীক্ষার সময় এ ভোগান্তি আরো বৃদ্ধি পায়। যানজটের এ রেশ প্রধান সড়ক পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকার ব্যস্ততম সড়কগুলোর একটি মিরপুর-ফার্মগেট-মতিঝিল সড়ক। ২০১৭ সালে এ সড়কে শুরু হয় মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ। শুরুর পর থেকে দিন যত গড়িয়েছে, তত বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। সংকুচিত হয়ে যাওয়া রাস্তা, ফেলে রাখা নির্মাণসামগ্রী আর খোঁড়াখুঁড়িই এ দুর্ভোগের কারণ। জলাবদ্ধতা, অসহনীয় যানজট বর্তমানে রাজধানীর অন্যতম প্রধান এ সড়কটির নিত্যসঙ্গী, যা প্রভাব ফেলছে ঢাকার অন্যান্য সড়কেও। মেট্রোরেলের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালে। ততদিন দুর্ভোগ সঙ্গী করেই সড়কটি ব্যবহার করতে হবে ঢাকাবাসীকে। একটি আধুনিক নগরীতে মোট আয়তনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ রাস্তা বা সড়ক থাকা প্রয়োজন। অথচ ঢাকা শহরে প্রয়োজনের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সড়ক রয়েছে। ঢাকা শহরের মোট আয়তন এক হাজার ৩৫৩ বর্গকিলোমিটার। আর ঢাকার বর্তমান রাস্তার আয়তন দুই হাজার ২০০ কিলোমিটার, যার মধ্যে ২১০ কিলোমিটার প্রধান সড়ক। ট্রাফিক বিভাগের হিসাব মতে, সেই সড়কের কম করে হলেও ৩০ শতাংশ বা তারও বেশি দখল হয়ে আছে অবৈধ পার্কিং এবং বিভিন্ন দখলদারের হাতে। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ অটোমেটিক সিস্টেম বের করলেও তাতে কোনো কাজ হয়নি। উল্টো যানজট বেড়েছিল। বর্তমানে হাতের ইশারায়ই ট্রাফিক সিগন্যালগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে চলছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণকাজ। ঢাকা-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়কের ঢাকা-গাজীপুর অংশে পড়েছে এ প্রকল্প। সড়কটির মাঝখান দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিআরটি লেন। যান চলাচলের জায়গা কমে আসায় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই যানজট লেগে থাকে এ সড়কে। সামান্য বৃষ্টি হলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা, যা যানজট পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তোলে। ২০১৭ সালে বিআরটির নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকে বেহাল দশায় চলে গেছে সড়কটি। জানা যায়, যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে ঢাকাবাসী এমন দুর্ভোগ থেকে সহসাই মুক্তি পাচ্ছে না। উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল ছাড়াও ঢাকায় আরো পাঁচটি মেট্রোরেল লাইন নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এগুলো সম্পন্ন হবে ২০৩০ সালের মধ্যে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বলছে, ঢাকার সবক’টি মেট্রোরেলের কাজ শেষ করতে আরো কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। ২০২৭ নাগাদ তৈরি হওয়ার কথা আরেকটি বিআরটি লেন। ঢাকা এবং ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সম্পন্ন হতে লেগে যাবে আরো কয়েক বছর। পরিকল্পনাধীন তিনটি রিংরোড, ৮১ কিলোমিটারের বৃত্তাকার রেল, ২৫০ কিলোমিটারের বেশি সাবওয়ে নেটওয়ার্কের নির্মাণ শেষ হবে ২০৫০ সালে। অর্থাৎ ঢাকাবাসীকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত চলমান উন্নয়নকাজের দুর্ভোগ সঙ্গী করেই চলাচল করতে হবে।
করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের মার্চ মাস থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। তারপরও রাজধানীতে যানজট কমছে না। ট্রাফিক পুলিশের অবহেলা ও মেট্রোরেলের কাজের কারণে যানজটের এমন দশা। বর্তমানে ঢাকায় একটি মেট্রোরেল লাইনের কাজ চলমান। ২০২২ সাল নাগাদ ঢাকায় আরো দুটি মেট্রোরেল লাইনের কাজ শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে বিমানবন্দর-কমলাপুর, বিমানবন্দর-পূর্বাচলে নির্মাণ হবে এমআরটি-১। আমিনবাজার-গাবতলী থেকে নতুনবাজার-ভাটারায় নির্মাণ হবে এমআরটি-৫। বিদ্যমান সড়কগুলোর পাতাল ও উড়ালপথে নির্মাণ করা হবে এগুলো। লাইন দুটির একটি বড় অংশ হবে পাতালপথে। কিছু অংশ তৈরি হবে উড়ালপথে। যথাক্রমে ২০২৬ ও ২০২৮ সাল নাগাদ প্রকল্প দুটি শেষ হওয়ার কথা। কাজ শুরু হলে আমিনবাজার-গাবতলী-নতুনবাজার-ভাটারা, বিমানবন্দর-কমলাপুর ও নতুনবাজার-পূর্বাচল সড়কে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়বে ঢাকাবাসী। একইভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে আশুলিয়া-সাভার-গাবতলী থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কমলাপুরে এমআরটি-২ ও কমলাপুর-নারায়ণগঞ্জের মধ্যে এমআরটি-৪-এর নির্মাণকাজ অব্যাহত রাখবে ঢাকাবাসীর দুর্ভোগ।
মেট্রোরেলের কাজ শেষ হওয়ার আগেই সাবওয়ের কাজ শুরু করতে চায় সেতু কর্তৃপক্ষ। সংস্থাটির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০২ কিলোমিটার, ২০৪০ সালের মধ্যে আরো ৮৫ কিলোমিটার এবং শেষ ধাপে ২০৫০ সালের মধ্যে ৭১ কিলোমিটার সাবওয়ে লাইন নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানায় সংস্থাটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হলে ১১টি সাবওয়ের নির্মাণকাজে দীর্ঘদিনের জন্য দুর্ভোগে পড়বে ঢাকাবাসী।
বর্তমানে বিমানবন্দর-গাজীপুরে একটি বিআরটি লেনের কাজ চলমান। ২০২৭ সালের মধ্যে গুলিস্তানের মধ্যে আরেকটি বিআরটি লেন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কাজ শুরু হলে গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জ সড়কে যাতায়াতও কঠিন হবে উঠবে। সম্প্রতি শুরু হয়েছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ। মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত হলেও দেরিতে শুরু করার কারণে শেষ করতে কয়েক বছর সময় লেগে যাবে। নির্মাণকাজ চলাকালে সাভার-আশুলিয়া-বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর-বিমানবন্দর সড়কে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়বে ঢাকাবাসী।
তবে দুর্ভোগ এড়াতে ঢাকাকে ঘিরে ৮১ কিলোমিটারের একটি বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এরইমধ্যে একটি সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও করেছে সংস্থাটি। ৭১ কিলোমিটার উড়ালপথে, ১০ কিলোমিটার পাতালপথের এ বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি এখনো অনুমোদন না হলেও ২০৩৫ সালের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নির্মাণকাজ শুরু হলে প্রকল্পটিও দীর্ঘদিনের জন্য ঢাকাবাসীর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category