• বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০৯ অপরাহ্ন

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রকৃতিক দুর্যোগ: আরও খারাপ হতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি

Reporter Name / ১১ Time View
Update : শুক্রবার, ৩০ আগস্ট, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক :
গত জুলাই থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে, পাশাপাশি প্রকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে দেখা দিয়েছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেপ্টেম্বরে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হতে পারে বলে মত দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকাসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে মেয়র-কাউন্সিরলরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বরখাস্ত-বদলিসহ নানা ধরনের পদক্ষেপের কারণে মশকনিধন কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে, যার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরও বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকার কারণে সেখানে এডিস মশার প্রজনন হার বেড়ে যেতে পারে। সম্প্রতি দেশে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু খারাপ আকার ধারণ করতে পারে জানিয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ২০-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা যদি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে হয়, তখন যেকোনো মশার প্রজনন কমে যায়। তাপপ্রবাহে মশার প্রজনন কমলেও বৃষ্টিপাত হলেই মশার প্রজনন বাড়তে শুরু করবে। আমাদের দেশে সাধারণত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর জন্য উচ্চ ঝুঁকি থাকে। এ সময়টাতে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়, মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রাও থাকে। আমরা মাঠ পর্যায়ে এডিস মশা নিয়ে যে গবেষণা করি তাতে মশার ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, ও বৃষ্টিপাত এই কয়েকটি প্যারামিটার নিয়ে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করি। এই ফোরকাস্টিং মডেলে দেখতে পাচ্ছি সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরো বাড়বে। তবে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ জোরদার করতে পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকবে। ইতিমধ্যে কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ার পর মাঠপর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব অপেক্ষাকৃত বেশি লক্ষ করছি। কয়েকটি জেলায় কাজ করে আমরা এডিস মশার ঘনত্ব গতবারের তুলনায় বেশি পেয়েছি। জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, বরিশাল, বরগুনা ও গাজীপুর। তবে এইসব জেলার মধ্যে কয়েকটি জেলাতে বন্যা ও ভারী বর্ষণের কারণে অনেক মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস হয়েছে। যেসব এলাকাতে বন্যা হয়েছে সেসব এলাকায় বর্তমানে মশা কমে যাবে এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমবে। তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে মশার ঘনত্ব আবার বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এদিকে এডিস মশা প্রতিরোধে দেশব্যাপী বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্বের ওপর জোর দেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোশতাক হোসেন। তিনি বলেন, শুধু পানির পাত্র পরিষ্কার করাই যথেষ্ট নয়। বৃষ্টির পানি জমা ঠেকাতে আবর্জনাও পুঁতে ফেলতে হবে। অন্যথায় তা মশার প্রজননস্থলে পরিণত হতে পারে। তিনি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবিলায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। মোশতাক বলেন, এক্ষেত্রে সরকারের নেতৃত্ব ও সহায়তায় কমিউনিটিভিত্তিক সম্পৃক্ততা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গুতে প্রাণহানি কমাতে তিনি বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা সংস্কারেরও আহ্বান জানান তিন ধাপে চিকিৎসা দেওয়ার মাধ্যমে-প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও হাসপাতালে সেবা। বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানান, প্রাথমিক স্তরে রোগীর রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়ার জন্য শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা স্থাপন করা, যাতে হাসপাতালের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না হয়। তিনি গ্রাম ও উপজেলা পর্যায়ে জনবল, ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক সুবিধার অভাবের কথাও উল্লেখ করেন, যার ফলে প্রাথমিকভাবে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হয়। মাধ্যমিক স্তরে চিকিৎসাসেবার আওতায় থাকবে অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়স্ক ও শিশুসহ যাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেশি, তারা। এতে করে বড় হাসপাতাল ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটগুলোর ওপর তেমন চাপ পড়বে না। সবশেষে শুধুমাত্র গুরুতর রোগীদের বড় হাসপাতালে স্থানান্তর করা উচিত। কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমানও সতর্ক করে বলেন, বর্তমানে বৃষ্টির যে ধরন, এতে প্রজননস্থল বেড়ে এডিসের সংখ্যাও বাড়বে। তাই এখন এডিসের প্রজননস্থল ধ্বংস করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিকূল আবহাওয়ায় কীটনাশক প্রয়োগ কম কার্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই প্রজননক্ষেত্র ধ্বংস করার দিকেই এখন নজর দেওয়া উচিত। এদিকে এবছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণ হিসেবে বিগত সরকারের আমলে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যাবস্থাপনাকেও দায়ী করছেন অনেকে। জানা যায়, এডিস ও কিউলেক্স প্রজাতির মশা নিধনে সারা বছরই ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’, ‘চিরুনি অভিযান’, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা’, ‘জেল-জরিমানা’ করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। প্রতিদিনই দেওয়া হয় ধোঁয়া, ছিটানো হচ্ছে ওষুধ। এরপরও কাজের কাজ তেমন হয়নি। মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সিটি করপোরেশনে দু-এক বছর পরপরই মহামারি আকারে দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গু। এভাবে মশকনিধন কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রশ্ন তুলছিলেন বিশেষজ্ঞরা। ক্ষুব্ধ সাধারণ নাগরিকরাও। তাদের অভিযোগ ছিল, অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা, কর্মপরিকল্পনা না থাকাসহ নানান কারণে মশা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না সিটি করপোরেশন। বিশেষ করে প্রতিদিন বিকেলে ধোঁয়া দিয়ে বা ফগিং করে মশা তাড়ানোর পদ্ধতি ছিল ভুল। এতদিন এ অভিযোগে তেমন পাত্তা না দিলেও কিছুদিন আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) স্বীকার করে, এ পদ্ধতি ভুল ছিল এবং এতে অর্থের অপচয় হয়েছে। এরপর নানান মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কীট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে মশক নিধনে গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যদিকে নাগরিকদের অভিযোগ, মশা নিধনের নামে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেছে সিটি করপোরেশন। এ ছাড়া ডেঙ্গুজ¦রে মারা গেছেন নগরের কয়েকশ মানুষ। সিটি করপোরেশনকে এর দায়ও নিতে হবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মৃত্যুও হচ্ছে। এখন ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক ও সচেতন হওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশান সবাইকে তৎপর হতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/