নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর বলেছেন, সব রাজনৈতিক দলের আমাদেরকে আস্থায় নেওয়া উচিত। কারণ আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন করেছি, কেউ বলতে পারবে না কোনো পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছি। আজ বুধবার নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এমন মন্তব্য করেন। মো. আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে, সেগুলোর নানারকম পরিস্থিতি ছিল। একটি বড় রাজনৈতিক দল কোনো নির্বাচনেই অংশ নিচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের যারা সাপোর্টার তারা তো ভোট দিতে আসেন না। এজন্য ভোট কাস্টিং কমে যাচ্ছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে করোনার মধ্যে আমাদের কিছু নির্বাচন করতে হয়েছে। স্বাভাবিক কারণে তখন অনেকে ভয়ে ভোট দিতে আসেননি। এ ছাড়া উপ-নির্বাচনগুলো যখন হয়, তার মেয়াদ থাকে অল্প এবং এতে সরকারের কোনো পরিবর্তন হয় না। তাই ভোটদানেও জনগণের আগ্রহ কম থাকে। সামনে যে জাতীয় নির্বাচন হবে তাতে কিন্তু সরকার পরিবর্তন হতে পারে। সেই সুযোগ যেহেতু এখানে রয়েছে, তাই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যে দলকে ভোট দেবে, তারা সরকার গঠন করবে। তো সেক্ষেত্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে এ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন করেছি প্রত্যেকটাই সুষ্ঠুভাবে করার চেষ্টা করেছি। আশা করি সংসদ নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আমাদের পক্ষ থেকে যত রকম ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা নেব। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে বলে আমরা মনে করি। যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না তাদেরকে আনার জন্য শেষ পর্যন্ত ইসির কোনো ভূমিকা থাকবে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনো আছে, শেষ পর্যন্ত থাকবে। বুঝতে হবে আমাদের ভূমিকাটা কী। আমরা আশাও করি যে, সবদল নির্বাচনে আসবে। কারণ আমাদের কাজ হলো নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করা। আমরা যদি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করি, তাহলে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে। যারা আসছেন না তারা বলছেন যে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এটা তারা মনে করেন না। কিন্তু এই মনে করার পেছনে অন্তত আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। সংবিধান এবং আইন আমাদের যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়েছে, আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে তার পুরোটা প্রয়োগ করে সুষ্ঠু নির্বাচন করব। সেই প্রতিশ্রুতি আমরা ভোটারদের এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে দিতে চাই। ভোটার দিবসের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভোটার দিবসের উদ্দেশ্য হচ্ছে- সার্কভুক্ত দেশগুলোর একটা সংস্থা আছে। তারা একসময় দেখলেন যে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ভোটারদের যে অধিকার, দায়িত্বগুলো রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে তারা সচেতন নয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বা চর্চার ক্ষেত্রে ভোট এবং ভোটারের ভূমিকা সবচেয়ে বড়। জনগণ যদি ভোটার হওয়া এবং ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে নিস্ক্রীয় থাকে, তারা যদি আগ্রহ না দেখায়, তাহলে তো গণতন্ত্রের যে সুষ্ঠু চর্চা, সেটা কিন্তু অনেকটা নিখুঁত হয় না। এজন্যই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, প্রতিবছর সার্কভুক্ত দেশগুলো তাদের বিধানমত বছরে একটি দিন ভোটার দিবস হিসেবে পালন করবেন। যাতে দেশের সব মানুষ জানতে পারেন যে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভোটারদের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে, ভোটদানে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। এই জিনিসটা একটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জানানো। সে অনুযায়ী ২০১৮ সাল থেকে আমরা এটি করে আসছি। আগে ১ মার্চ এই দিবসটি পালন করা হতো। এখন ২ মার্চ পালন করা হয়। এদিন যারা আগের ভোটার আছেন, যারা মারা গেছেন তাদের নাম কাটা, নতুন ভোটার হয়েছেন এটি হিসাব করে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে কতজন ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তা এদিন জানতে পারবেন। এদিকে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, ভয়ভীতিহীন নির্বাচন ও ভোটের নির্বিঘœ পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সর্বোচ্চ তৎপর। নিজেদের মেয়াদের প্রথম বছরে এ পর্যন্ত যত নির্বাচন হয়েছে তাতে বাধা, অনিয়মের অভিযোগ এসেছে সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বুুধবার লিখিত বক্তব্য এমন তৎপরতার কথা জানান নির্বাচন কমিশনার ব্রি.জে. (অব.) আহসান হাবিব খান। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বর্তমান ইসির অধীনে পাঁচ শতাধিক নির্বাচন হয়েছে; এর সিহংভাগই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)। এসব ভোটে নির্ভরযোগ্য কোনো অভিযোগ তো আসেনি এবং সংক্ষুব্ধ কেউ আদালতেও দ্বারস্থ হয়নি। ইভিএমের নির্বাচনে ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোট দেওয়া প্রসারিত করেছে। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রের গোপন কক্ষে অবাঞ্ছিত লোকের উপস্থিতি ও কেন্দ্রে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ওই কমিশনার বলেন, ভোটার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনী এজেন্ট, গণমাধ্যমকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের ‘সেফটির বিষয়ে কমিশন বদ্ধপরিকর। সারাবছরই ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছি। হালনাগাদে নির্ধারিত কর্মসূচির বাইরেও সারাবছরই যোগ্যরা ভোটার হতে পারছেন। ভোটার হওয়ার পাশাপাশি তাদের এনআইডি সেবাও সহজীকরণে সব ধরনের পদক্ষেপ রয়েছে। প্রত্যেক ভোটারের নাগরিক অধিকার তার ভোটাধিকার। এ অধিকার রক্ষায় আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি এবং তা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, ইসির মত হচ্ছে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে সবাইকে। যেকোনো উপায়েই জিততে হবে এমন প্রবণতা থেকে যেমন বেরিয়ে আসতে হবে, তেমনি পরাজয় মেনে নেওয়া প্রবণতা থাকতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শুধু ভালো নির্বাচন করবো; কিন্তু যিনি বা যারা পরাজিত হবেন তিনি বা তারা সমালোচনায় মুখর হবেন তা সমীচীন নয়। নির্বাচনের গুণগত সংস্কৃতির বিকাশে ভোটার, দল, অংশীজনসহ সবার সহযোগিতা দরকার। ভোট নিয়ে কল্পনাপ্রসূত কোনো শঙ্কার বশবর্তী হয়ে নির্বাচন বর্জনের সংস্কৃতিও কাক্সিক্ষত নয় বলে মন্তব্যও করেন তিনি। আহসানন হাবিব খান বলেন, সব দলকে ভোটের আসার বিষয়ে ইসির আহ্বান বরাবরই অব্যাহত থাকে জানিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটাধিকার মুখের কথা নয়, এটাকে অর্থবহ করতে আমাদের সব ধরনের উদ্যোগ, সর্বোচ্চ সদিচ্ছা থাকবে। আমরা চাই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচন হোক অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক। সাবেক এ সেনা কর্মকর্তা আশ্বস্ত করেন, ভোটে আসেন সবাই, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক। গোলযোগ, সহিংসতা পরিহার করতে হবে; নির্বাচন কমিশনও অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর অবস্থান রয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে ভোটের মাঠেও ভারসাম্য থাকবে। ভোটে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে। ভোটকেন্দ্রে আসতে ভোটারদের বাধা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, নির্বাচনী এজেন্টদের বাধা-বিপত্তিতে শাস্তি বাড়ানোর সুপারিশও করেছে এ কমিশন। ভোটের নির্বিঘœ পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান জানান, ভোটাররাও উৎসবমুখরভাবে কেন্দ্রে আসবেন, নিরাপদে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে ঘরে ফিরে যাবেন। ভোটার দিবসেই শুধু নয়, আমরা সব সময় আশ্বস্ত করতে চাই- আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে পালন করবো। পাশাপাশি সবার সহযোগিতাও কামনা করি। ভালো নির্বাচনও উপহার দিতে সক্ষম হবো।
সর্বশেষঃ
রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত আমাদেরকে আস্থায় নেওয়া: ইসি
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ০৮:২০:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ মার্চ ২০২৩
- ১০৬ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ