নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজধানীর রামপুরায় বাসের চাপায় শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনা বিএনপি- জামায়াতের অতীত সহিংস অপকর্মের পুনরাবৃত্তি কিনা তা খতিয়ে দেখতে জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি এই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ায় তিনি গভীর শোকাহত ও ব্যথিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটি আয়োজিত ‘৫এ: ঞযব ঋৎড়হঃরবৎ ঞবপযহড়ষড়মু’ শীর্ষক সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, ঘটনাটি ঘটে রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে। এর ১২ মিনিট পর ১০টা ৫৭ মিনিটে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে ফেসবুক পেজ থেকে ঘটনাস্থল থেকে লাইভ করা হয় জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ১৭টি বাসে (৮টি) আগুন দেওয়া হয় এবং অসংখ্য গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবারও প্রশ্ন রেখে বলেন, এটা কী নিছক দুর্ঘটনা নাকি পূর্ব পরিকল্পিত? ওবায়দুল কাদের বলেন, রাত ১১টায় জামায়াত পরিচালিত ‘টেলিগ্রাম’ চ্যানেল খবরটি প্রকাশিত হয় এবং দুর্ঘটনার স্থান থেকেই সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। তিনি বলেন, খবরটি ছড়িয়ে পড়ার ১০ মিনিটের মধ্যেই প্রায় ১৫টি বাসে আগুন দেওয়াও শেষ হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিষয়টি আসলেই দুর্ঘটনা কিনা। ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন রেখে আরও জানতে চান, ঘটনার ১২ মিনিটেই নিরাপদ সড়ক চাই পেজ লাইভে গেলো কীভাবে? নাকি তারা আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল? বাশেরকেল্লা ১৫ মিনিটের মধ্যেই সব খবর পেয়ে গেল কীভাবে? আর বাকি ১০ মিনিটেই ১০টি গাড়িতে আগুন কীভাবে দেওয়া হলো? প্রশ্ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের। ওবায়দুল কাদের জানতে চান, এত জনবল রাত ১১টার পর ঘটনাস্থলে এলো কীভাবে? তাহলে তারা কী আগেই প্রস্তুত ছিল? সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সেনাবাহিনী, পুলিশ বা ফায়ার বিগ্রেড এত তাড়াতাড়ি পৌঁছাতে পারে না, যত দ্রুত গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। এত রাতে অল্প বয়সী শিক্ষার্থীরা কী এত দ্রুত পৌঁছে গেছে? তিনি বলেন, এমনিতেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে আন্দোলন চলছে, যারাই দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছেন তারা সবাই শিক্ষার্থী। গাড়ীতে কি ছাত্র ছাড়া অন্য আর যাত্রী থাকে না? বিষয়টি মোটেই দুর্ঘটনা নয় বলেও দাবি করেন তিনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে সরকার বদ্ধপরিকর।
বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ৫জি যুগে প্রবেশ করবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ওবায়দুল কাদের বলেন, ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় দেশে ৫জি প্রযুক্তির সেবা পরীক্ষামূলকভাবে শুভ উদ্বোধন করবেন। সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ৫জি চালুর কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০১৮ সালে ঘোষিত বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সর্বাধুনিক মোবাইল প্রযুক্তি সেবা ৫জি চালু করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসির নির্দেশনা মোতাবেক রাষ্ট্রীয় একমাত্র মোবাইল অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রাথমিক পর্যায়ে বর্তমান ৪জি নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগস্থাপন করে সীমিত পরিসরে আগামী ডিসেম্বর মাসে ৫জি চালু করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। প্রথমে ঢাকা শহরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সরকারি কার্যালয় ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে ৫জি সেবা চালু হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে এই সেবা দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহর ও শিল্প প্রতিষ্ঠাননির্ভর এলাকাসমূহে বিস্তারের পরিকল্পনা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ৫জি প্রযুক্তি সেবা কেবল গ্রাহকের মোবাইল ব্রডব্যান্ড ও ভয়েস কলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সরকার ও এন্টারপ্রাইজ এবং ইউটিলি সার্ভিস প্রোভাইডাররা আইওটি, হিউম্যান টু মেশিন, মেশিন টু মেশিন ডিভাইস ব্যবহার করে ক্রিটিক্যাল মিশন সার্ভিস, স্মার্ট গ্রিড, স্মার্ট সিটি, স্মার্ট ফ্যাক্টরি সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। মুজিববর্ষে এটি একটি বিশাল উদ্যোগ। ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল গ্রাহকরা অধিকতর উন্নত গুণগত মানের ভয়েস কল ও ৪জি থেকে ২০ গুণ দ্রুত মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারে সক্ষম হবে। সেতুমন্ত্রী বলেন, ৫জির মাধ্যমে চালকবিহীন গাড়ি চলবে রাস্তায়। ৫জি চালু হলে কল ড্রপের সংখ্যা কমে যাবে বলে আমরা আশা করি। মানুষ ও ডিভাইসের মধ্যে তৈরি হবে জিরো ডিসটেন্স কানেক্টিভিটি। বিগডাটা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নে ৫জি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ৫জি চালু হলে আমূল পরিবর্তন আসবে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কিংবা অগমেন্টেড রিয়েলিটির এক্সপেরিয়েন্স নেওয়া ৫জির কল্যাণে আরও সহজ হয়ে যাবে। ফেসবুকসহ বিশ্বের সব বড় কোম্পানিগুলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং মেটাভার্স নিয়ে কাজ করছে যা হবে অদূর ভবিষ্যতের মূল নিয়ামক প্রযুক্তি। আর এই প্রযুক্তিগুলোই আমাদের তরুণদের কাছে পৌঁছে দিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, বাংলাদেশকে ডিজিটাল করার লক্ষে ২০১৩ সালে শেখ হাসিনার সরকার ৩জি প্রযুক্তির সেবা চালু করে এবং ২০১৮ সালে চতুর্থ প্রজন্মের টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বা ফোরজি সেবা চালু করে, এরই ধারাবাহিকতায় আমরা মুজিববর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছি ৫জি যুগে। ২০২০ সালে করোনা কালে সারাদেশ লকডাউনে ছিল, থ্রিজি/ফোরজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছাত্ররা অনলাইনে ক্লাস করেছে, চিকিৎসক ঘরে বসে চিকিৎসা দিতে পারছেন, বিচার বিভাগ অনলাইনে তাদের বিচার কাজ চালিয়ে গেছেন। আর এসব কিছু সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেত্রীতে এবং আর্কিটেক্ট অব ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপ-কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, আগামীতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যেন বাংলাদেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারে সেজন্য প্রযুক্তিগত অবকাঠামো গড়ে তোলা, মানব সম্পদ উন্নয়ন এবং সরকারি সেবাসমূহ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একটি প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অক্লান্ত পরিশ্রম ও আত্মনিবেদন আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। আমরা স্বপ্ন দেখি, প্রধানমন্ত্রী ও তার আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করে শুধু ইকোনমিক ও পলিটিক্যাল ডিপ্লোমেসি নয়, সায়েন্স ডিপ্লোমেসি ও টেকনোলজিক্যাল ডিপ্লোমেসিতেও আগামী দিনে বাংলাদেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে। এবং এর মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপ-কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর। আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. সাহাব উদ্দিন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম। উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. রনক আহসানের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন- আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হোসেন মনসুর।