বান্দরবান প্রতিনিধি :
রোয়াংছড়ির উপজেলার ৩৪৯নং ঘেড়াও মৌজার হেডম্যান মংশৈনু মারমা নৈরাজ্যের স্বিকার হয়েছেন ওই মৌজার ঘেরাও প্রাংসা পাড়া গ্রাম প্রধান(কারবারী)থোয়াই অং প্রু খিয়াং। ওই মৌজার হেডম্যানের অবৈধ কাজে বাধা দেওয়ায় তাকে কারবারী পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ তুলেছেন রোয়াংছড়ি উপজেলার ৩৪৯নং ঘেড়াও মৌজার ঘেরাও প্রাংসা পাড়া গ্রাম প্রধান (কারবারী) থোয়াই অং প্রু খিয়াং। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৩ সালে জেলা প্রশাসকের নিয়োগে কারবারী দ্বায়িত্ব পেয়েছিলেন থোয়াই অং প্রু খিয়াং। প্রায় ১৮ বছর নিজ এলাকায় কারবারী দ্বায়িত্ব পালন করে এসেছেন সৎ ও নিষ্ঠার সাথে।কিন্তু হেডম্যানের বিভিন্ন অবৈধ কাজের বাধা প্রদান করলে কারবারী প্রতি ক্ষেপে যান হেডম্যান। পরে তার বিরুদ্ধের অপ্রচার করতে থাকেন ওই মৌজার হেডম্যান। শুধু তাই নয় গ্রাম প্রধান কারবারী বেতন ভাতা ও বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। অভিযোগের উঠে এসেছে, গেল ১-৪-২০২১ তারিখে হেডম্যানের প্যাডের মাধ্যমে ঘেরাও প্রাংসা কারবারীকে অব্যাহতি একটি নোটিশ দেন ৩৪৯নং ঘেড়াও মৌজার হেডম্যান মংশৈনু মারমা। তার ওই প্যাডের উল্লেখ করা হয়- আপনি ঘেরাউ প্রাংসা পাড়াতে সুদীর্ঘ বছর ধরে পাড়ার কারবারী দ্বায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। আপনি একজন পাড়া প্রতিনিধি হিসেবে নিজ কর্তব্য ও দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন নাই। যার জন্য পাড়াবাসীগন আমার আদালতে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আপনি আপনার দলবল নিয়ে রিজার্ভ বন হতে বাশঁ,গাছ কর্তন করে বিক্রয় করেন। আপনি একজন ক্রিমিনাল টাইপের মানুষ। বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারী কাজ কর্মের লিপ্ত ও জড়িত আছে। ইহা আইনের জঘন্য অপরাধ। আপনাকে কারবারী পদ থেকে অব্যহতি দেওয়া হল।এদিকে একই তারিখের অংশৈহ্লা খিয়াং নামের একই গ্রামের বাসিন্দাকে কারবারী পদে দ্বায়িত্ব দেন হেডম্যান। এলাকাবাসীর অভিযোগ করেন জেলা প্রশাসক কিংবা রাজার বাহাদুরের কোন নোটিশ ছাড়া কিভাবে একজন কারবারীকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন কারবারীকে দ্বায়িত্ব দিয়েছেন। এমন কাজকর্ম দেখে হতবাক ওই গ্রামের বাসিন্দা’রা। এছাড়াও তার কাছে কোন অভিযোগ পত্র ও দাখিল করেননি ওই এলাকার বাসিন্দারা। অন্যদিকে ২৬-৯-২০২১ সালে ওই গ্রামের কারবারী সনদ পত্রের জন্য বোমাং রাজার বাহাদুর বরাবর আবেদন করে অংশৈহ্লা খিয়াং। সেখানে ২৪ টি পরিবারের বসবাস করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। কিন্তু সেখানে গ্রমের মানুষের বসবাস ১৭টি পরিবার। তবে তার এই আবেদনে রাজার কোন স্বাক্ষর দেখা যায়নি। শুধু ওই মৌজার হেডম্যান মংশৈ নু মারমা স্বাক্ষর ও সুপারিশ লেখা ছাড়া আর কোন কিছু দেখা মেলেনি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে হেডম্যান পাথর ব্যবসা করতেন। ঝিরি খাল থেকে পাথর তুলে বিভিন্ন স্থানে পাচার করত। সেই পাথর তোলার কারণের ঝিরি ও খালের পানি ও শুকিয়ে গেছে। শুধু পাথর নন রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে অবৈধ ভাবে গাছ কেটে বিক্রি করতেন তিনি। সব কিছু শেষে যখন তিনি ঘেরাও প্রাংসা পাড়াতে জমি বিক্রি করতে যান তখনি বাধা প্রদান ও প্রতিবাদ করেছিলেন ওই গ্রামের কারবারী থোয়াই অং প্রু খিয়াং। সেইদিন পর থেকে এসব অবৈধ কাজ না করার জন্য ও কারবারি কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন হেডম্যান। কিন্তু সে ক্ষোভ দিনের পর দিন কারবারীকে পরিবর্তন করা দফায় দফায় চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই এলাকাবাসীর অভিযোগ আছে বলে কার্বারী কে অব্যাহতি দেন তিনি। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন,গ্রামবাসীর অজান্তে পুরানো কারবারীকে বহিস্কার করে নতুন কারবারী নিয়োগ করেছেন।নতুন কারবারীকে নিয়োগ না মানলে এলাকাবাসী জায়গা দেয়া হবে নাহ। এমনকি নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে হেডম্যান নিজের রাজত্ব চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ ওই এলাকার বাসিন্দাদের। এছাড়াও বহিরাগত ৩৪১ নং মৌজার কেরিং খিয়াং,মানিক খিয়াং,লালমিথাং বম সহ বেশ কয়েকজনকে নিজের মৌজার হেডম্যনের সনদ পত্র দিয়ে ৩৪৯নং ঘেড়াও মৌজার প্রবেশ করান হেডম্যান। ভুক্তভুগী ঘেরাও প্রাংসা পাড়া গ্রাম প্রধান (কারবারী) থোয়াই অং প্রু খিয়াং বলেন, আমি বিগত ১৮ বছর ধরে গ্রাম প্রধান (কারবারী) দ্বায়িত্ব পালন করে এসেছি। আমার এলাকার ১৬ টি পরিবারের বসবাস। আমার নামে হেডম্যানের কাছে কোন অভিযোগ করেননি এলাকাবাসী। হেডম্যানের বিভিন্ন অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করার কারণের আমাকে কারবারী থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। তিনি আরো বলেন,কয়েক বছর আগে হেডম্যান পাথর উত্তোলন, রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে গাছ কাটাসহ বিভিন্ন অবৈধ কাজ করতেন। আমি চুপ ছিলাম। কিন্তু যখন অবৈধ ভাবে খাস জায়গা বিক্রি করতে যাচ্ছিল তখন আমি বাধা দিয়েছিলাম। তারপর পর থেকে আমার নামে বদনাম সহ কারবারী দ্বায়িত্ব পদ থেকে অব্যহতি দিয়েছে। শুধু তাই নই আমার কারবারি বেতন ভাতা তিনি বন্ধ করে রেখেছেন। আমাকে কারবারি পদ থেকে অব্যাহতি দিলে বোমাং সার্কেল কিংবা জেলা প্রশাসক দিবে হেডম্যানের দেওয়ার কোন আইন নাই। আমি এর সঠিক বিচার চাই। ওই এলাকার পাড়াবাসী রেবিকা খিয়াং বলেন, হেডম্যান আমার জায়গাটিকে জোরপুর্বক চহ্লামং কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। চেসথুই কিয়াং বলেন,অন্যের মৌজা থেকে এসে আমার জায়গায় বহিরাগত কেরি খিয়াংকে হেডম্যানের রিপোর্ট দিয়েছে। সে এখন আমার জায়গায় দখল করে আছে। ৩৪৯ নং ঘেড়াও মৌজার হেডম্যান মংশৈনু মারমা সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কারবারি অব্যাহতির বিষয়টি সত্যতা স্বীকার করে।তিনি বলেন,কারবারি গ্রামের মানুষকে অত্যাচার করত। বিভিন্ন জায়গা গাছ বিক্রি করত। পাড়াবাসীর অভিযোগের কারনের তাকে অব্যাহতি দিয়েছি। কারবারীকে হেডম্যান কার্বারীকে অব্যাহতি দেওয়ার আইন আছে কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,আইন আছে নাকি নাই সেটা আমি জানিনা। আমি আমার কাজ করেছি এলাকাবাসির অভিযোগের ভিত্তিতে। রোয়াংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান মেহ্লা অং মারমা বলেন, গ্রামের মানুষের কোন লিখিত অভিযোগ ছাড়া ওই এলাকার কারবারীকে অব্যাহতি দেওয়া হেডম্যানের কোন আইন নাই। যদি অব্যাহতি দেওয়া হয় তাহলে বোমাং সার্কেল চীফ কিংবা জেলা প্রশাসক মহোদয় পারবেন। এবং এটি খুব অন্যায়। বান্দরবান বোমাং সার্কেল চীফ অফিস কার্যালয়ের হেডক্লার্ক সহকারী সচিব অংজাই উ খিয়াং জানান,