নিজস্ব প্রতিবেদক :
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়ে টিকটক করে প্রতারণা ও শতাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করে ব্ল্যাকমেইল ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে টিকটক রাজ ওরফে আবদুর রাকিব ওরফে খোকন (২৬) নামে এক টিকটকারকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার রাজ বিজিবির ল্যান্স নায়েক হিসেবে র্যাবে প্রেষণে বদলি হন বলে পরিচয় দিতেন। র্যাবের ইউনিফর্ম পরে টিকটক ভিডিও তৈরি করে প্রতারণা করে বিয়ে করেন চারটি ও শতাধিক মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করে প্রতারণা করেছেন। গত সোমবার রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে র্যাবের ইউনিফর্ম, প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত মোবাইল, সিম ও বাঁশি জব্দ করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে টিকটক সেলিব্রিটি বানানোর নামে বিভিন্ন দেশে নারীপাচার চক্রের মূলহোতা আশরাফুল মন্ডল ওরফে বস রাফি, ম্যাডাম সাহিদা ও টিকটক হৃদয় বাবুর সহযোগী অনিকসহ বেশ কয়েকটি নারীপাচার চক্রের ৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গত সোমবার র্যাব-২ ও ৫ এর যৌথ অভিযানে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে টিকটকার রাজকে গ্রেপ্তার করা। টিকটকে নিজেকে র্যাবের সদস্য পরিচয়ে শতাধিক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি, ছবি ও ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল ও অর্থ আত্মসাতের বহু অভিযোগ রয়েছে। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, টিকটকার রাজ পেশায় বগুড়ার একটি আবাসিক হোটেলের নিরাপত্তা কর্মী। কিন্তু র্যাবের ইউনিফর্ম পরে নিজেকে র্যাব-৫ এ কর্মরত হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিল। গত দুবছর ধরে সে টিকটক, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে র্যাবের পরিচয় দিত। টিকটকে রাজের প্রায় ২ মিলিয়নের অধিক ভিউ ও প্রায় দেড় মিলিয়ন ফলোওয়ার রয়েছে। নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও নিজেকে উচ্চবিত্ত পরিচয় দিত। এ পরিচয় ফুটিয়ে তুলতে বিভিন্ন আলিশান বাড়ির সামনে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অফিসের সামনে যেয়ে ভিডিও তৈরি করতো। কমান্ডার মঈন আরও বলেন, রাজ টিকটকে বিভিন্ন মেয়েদের মধ্য থেকে যারা দামি অলংকার পরিধান করত ও যেসব মেয়েদের অবস্থা ভালো তাদের টার্গেট করত। এরপর তাদের বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে তাদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে হার, অলংকার ও অর্থ আত্মসাৎ করত। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি। আগে গার্মেন্টসে কাজ করলেও বর্তমানে বগুড়ায় একটি আবাসিক হোটেলের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে কাজ করে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পরে গত দেড় বছরে র্যাব কর্মকর্তা পরিচয়ে তিনটি বিয়ে করেছেন এবং প্রায় শতাধিক মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করে প্রতারণা করেছেন রাজ। যদিও পরে তার প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে সবাই তাকে ডির্ভোস দিয়ে চলে যায়। সে কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর চিত্র (ছবি) ধারণ করে মোবাইলে সংরক্ষণ করত। পরবর্তীতে ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিতো। র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সম্প্রতি টিকটকার রাজ র্যাব-৫ থেকে ঢাকায় র্যাব-২-এ বদলি হয়েছে এই বলে সে ঢাক্কায় আসে। ঢাকায় এসে সে আরও ভিডিও বানানোর পরিকল্পনা করে মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করতে চেয়েছিল। তবে এর আগেই এই প্রতারককে গ্রেপ্তার করে র্যাব।