ঢাকা ০৫:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

সমাপ্ত প্রকল্পের গাড়ি অপব্যবহারে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হলেও মন্ত্রণালয়গুলো নির্বিকার

  • দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২
  • ২৯৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সমাপ্ত প্রকল্পের গাড়ি অপব্যবহারে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হলেও মন্ত্রণালয়গুলো নির্বিকার। ইতিমধ্যে প্রকল্পের গাড়ির অপব্যবহার বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও কারোর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে বন্ধ হচ্ছে না কর্মকর্তাদের সরকারি টাকায় জ্বালানি কিনে প্রকল্পের গাড়ির অপব্যবহার। নিয়মানুযায়ী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হওয়ার পর তা সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে জমা দেয়ার কথা। কিন্তু মন্ত্রণালয়গুলো ওই নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দফায় দফায় চিঠি দেয়া হলেও কার্যত কোনো উন্নতি নেই। বরং আগের চেয়ে বেশি করে দুর্নীতি হচ্ছে। বরং অনেক কর্মকর্তাই সরকারের টাকায় কেনা ব্যক্তিগত গাড়ির জন্যও ৫০ হাজার টাকা নিচ্ছে, আবার সরকারি গাড়িও ব্যবহার করছে। সেজন্য তাদের কাউকেই শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়নি। কারণ অনেক সচিবও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। আর ওসব প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি কেনা হচ্ছে। প্রকল্প সমাপ্তি শেষে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে গাড়ি জমা হচ্ছে। বিধান অনুযায়ী ওসব গাড়ি চূড়ান্তভাবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু সেগুলো জমা না দিয়ে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ব্যবহার করছে। আর ওসব গাড়ির পেছনে মাসে মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে দেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকার জ্বালানি, ড্রাইভার ও ওভারটাইম খরচ।
সূত্র জানায়, গাড়ি নগদায়ন নীতিমালা যারা ব্যত্যয় করছে তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় সরাসরি পদক্ষেপ নেয়ার কথা। কিন্তু তা না করে দফায় দফায় চিঠি দিয়ে গাড়ির হিসাব চাওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা চিঠি দিয়ে জানানো হচ্ছে। কিন্তু অনেক মন্ত্রণালয় আগের মতোই গাড়ি ও জ্বালানি ব্যবহার করছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শত শত অফিসার বছরের পর বছর সমাপ্ত প্রকল্পের গাড়ি ও জ্বালানি অপব্যবহার করছে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ফলে প্রকল্পের গাড়ির অপব্যবহারও বন্ধ হচ্ছে না। সরকারি গাড়ির অপব্যবহারের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন জরুরি। আর সরকার আন্তরিক হলে তা বন্ধ করা খুবই সহজ।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি গাড়ি ও জ্বালানি ব্যবহারের দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। একসময় শুধু ক্যাডার অফিসাররা গোপনে ওসব সুবিধা গ্রহণ করলেও তা এখন নন-ক্যাডারদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হলেও কার্যত নেয়া হয় না। শুধু চিঠি দিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এদিকে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সরকারি গাড়ির অপব্যবহারের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ায় তা কিছুটা কমেছে। অনেক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত পদক্ষেপের তথ্যও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। আরো কিছু পদক্ষেপ চলমান আছে। যারা বিভিন্নভাবে গাড়ি ব্যবহার করছে তারাও তাদের যুক্তি দেখাচ্ছে। ওসব যাচাই করে দেখা হবে। যাদের জবাব সন্তোষজনক নয় তাদের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

পেঁয়াজ উৎপাদন নিয়ে কৃষকের লোকসানের শঙ্কা বাড়ছে

সমাপ্ত প্রকল্পের গাড়ি অপব্যবহারে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হলেও মন্ত্রণালয়গুলো নির্বিকার

আপডেট সময়ঃ ০৮:০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ জানুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সমাপ্ত প্রকল্পের গাড়ি অপব্যবহারে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হলেও মন্ত্রণালয়গুলো নির্বিকার। ইতিমধ্যে প্রকল্পের গাড়ির অপব্যবহার বন্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সব মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার চিঠি দেয়া হলেও কারোর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে বন্ধ হচ্ছে না কর্মকর্তাদের সরকারি টাকায় জ্বালানি কিনে প্রকল্পের গাড়ির অপব্যবহার। নিয়মানুযায়ী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প শেষ হওয়ার পর তা সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে জমা দেয়ার কথা। কিন্তু মন্ত্রণালয়গুলো ওই নিয়মের তোয়াক্কা করছে না। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দফায় দফায় চিঠি দেয়া হলেও কার্যত কোনো উন্নতি নেই। বরং আগের চেয়ে বেশি করে দুর্নীতি হচ্ছে। বরং অনেক কর্মকর্তাই সরকারের টাকায় কেনা ব্যক্তিগত গাড়ির জন্যও ৫০ হাজার টাকা নিচ্ছে, আবার সরকারি গাড়িও ব্যবহার করছে। সেজন্য তাদের কাউকেই শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়নি। কারণ অনেক সচিবও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। আর ওসব প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন ধরনের গাড়ি কেনা হচ্ছে। প্রকল্প সমাপ্তি শেষে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে গাড়ি জমা হচ্ছে। বিধান অনুযায়ী ওসব গাড়ি চূড়ান্তভাবে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরে জমা হওয়ার কথা। কিন্তু সেগুলো জমা না দিয়ে অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ব্যবহার করছে। আর ওসব গাড়ির পেছনে মাসে মন্ত্রণালয়ের বাজেট থেকে দেয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকার জ্বালানি, ড্রাইভার ও ওভারটাইম খরচ।
সূত্র জানায়, গাড়ি নগদায়ন নীতিমালা যারা ব্যত্যয় করছে তাদের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় সরাসরি পদক্ষেপ নেয়ার কথা। কিন্তু তা না করে দফায় দফায় চিঠি দিয়ে গাড়ির হিসাব চাওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার কথা চিঠি দিয়ে জানানো হচ্ছে। কিন্তু অনেক মন্ত্রণালয় আগের মতোই গাড়ি ও জ্বালানি ব্যবহার করছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে শত শত অফিসার বছরের পর বছর সমাপ্ত প্রকল্পের গাড়ি ও জ্বালানি অপব্যবহার করছে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কর্মকর্তাদের শাস্তিমূলক কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ফলে প্রকল্পের গাড়ির অপব্যবহারও বন্ধ হচ্ছে না। সরকারি গাড়ির অপব্যবহারের অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে শাস্তির দৃষ্টান্ত স্থাপন জরুরি। আর সরকার আন্তরিক হলে তা বন্ধ করা খুবই সহজ।
সূত্র আরো জানায়, সরকারি গাড়ি ও জ্বালানি ব্যবহারের দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। একসময় শুধু ক্যাডার অফিসাররা গোপনে ওসব সুবিধা গ্রহণ করলেও তা এখন নন-ক্যাডারদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হলেও কার্যত নেয়া হয় না। শুধু চিঠি দিয়েই নিজের দায়িত্ব শেষ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এদিকে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সরকারি গাড়ির অপব্যবহারের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ায় তা কিছুটা কমেছে। অনেক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত পদক্ষেপের তথ্যও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। আরো কিছু পদক্ষেপ চলমান আছে। যারা বিভিন্নভাবে গাড়ি ব্যবহার করছে তারাও তাদের যুক্তি দেখাচ্ছে। ওসব যাচাই করে দেখা হবে। যাদের জবাব সন্তোষজনক নয় তাদের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হবে।