নিজস্ব প্রতিবেদক :
সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রস্তাব করা হয়েছে অ্যাসফল্ট মিক্সিং প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্পের। ফলে এটিসহ নানা বিষয় প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের টেকসই সড়ক উন্নয়নের জন্য একটি অ্যাসফল্ট মিক্সিং প্ল্যান্ট স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পিইসি (প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি) সভা। আগামী ২ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠেয় সভায় সভাপতিত্ব করবেন ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সত্যজিত কর্মকার। সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বলেন, ‘যেকোনো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা জরুরি। সমীক্ষা ঠিক মতো হলে বাস্তবায়ন পর্যায় গিয়ে জটিলতা কম হয়। সেই ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম হয়।’ পরিকল্পনা কমিশনের যুগ্ম প্রধান মো. উবায়দুল হক স্বাক্ষরিত কার্যপত্রে বলা হয়, প্রকল্পের ধরণ বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রয়োজন। এ ছাড়া বর্তমানে প্রস্তাবিত অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট ছাড়াও সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সেক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা বিস্তারিত সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করা প্রয়োজন ছিল। এ ছাড়া সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন নির্দেশিকার আলোকে ডিপিপিতে সংযুক্ত এমটিবিএফ (মধ্য মেয়াদী বাজেট কাঠামো) তথ্য ছকটি সঠিকভাবে প্রণয়ন করা হয়নি। বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এ ছাড়া একটি এ্যাসফল্ট মিক্সিং প্লান্ট স্থাপন (মিনিমাম ১০০ ঘণ্টা বা টন) এবং প্ল্যান্টের জেনারেটর ও ইলেকট্রিক্যাল সাব স্টেশন অঙ্গে যথাক্রমে ২০ এবং ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ব্যয় নিয়েওসভায় আলোচনা করা যেতে পারে। আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ৪ হাজার ৫০০ বর্গমিটার ইয়ার্ডের জন্য ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন হয়েছে। এই ইয়ার্ডে কি কি কাজ করা হবে বা এর ডিজাইন কি বা ব্যয় প্রক্কলনের ভিত্তিসহ ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে সংযুক্ত করা হয়নি। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘পিইসি সভায় বিভিন্ন বিষয় প্রশ্ন তোলা হবে। এসব নিয়ে আলাপ আলোচনার পরই সুপারিশ দেবে পিইসি। এরপর ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুর্নগঠনের জন্য সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হতে পারে।’
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন জেলা এবং দেশের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। বর্তমান সরকারের দূরদর্শিতা এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলাকে বিভাগে উন্নীত করা হয়। নগর এলাকার পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাবে নবাগত এবং বসবাসরত নগরবাসীর নাগরিক সুবিধা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার বিভাগীয় শহর হিসাবে ২১.৭৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ময়মনসিংহ পৌরসভার সাথে আকুয়া ও বয়ড়া ইউনিয়ন সম্পর্ণ এবং খাগডহর, দাপুনিয়া, চর নিলক্ষীয়া, চর ঈশ্বরদিয়া ও ভাবখালী ইউনিয়নের আংশিক এলাকা অন্তভুক্ত করে দেশের ১২তম সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করে। প্রস্তাবে আরও বলা হয়, শহরকে টেকসই করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। এরমধ্যে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সড়ক উন্নয়ন ও ড্রেনেজ নেটওয়ার্কসহ নাগরিক সেবা উন্নতকরণ শীর্ষক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রকল্পটিতে ১৯৫ কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক নির্মিত হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়কাল ৪ বছর, ফলে প্রকল্পে কার্পেটিং সড়কগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন ও মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি অ্যাসফল্ট মিক্সিং প্ল্যান্ট স্থাপন জরুরি। এ ছাড়া বিদ্যমান কার্পেটিং সড়কগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য এই প্ল্যান্ট কার্যকর ভুমিকা রাখবে। এ কারণে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে, প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পটির ব্যয় ৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে পিইসি সভার কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পে ২.১৬ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ১২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এসফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ ছাড়া বিকল্প কোন লোকেশন নির্বাচন করা যায় কিনা অর্থাৎ যেখানে খাস জমি বা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব জমি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে কিনা? সেটি ভেবে দেখতে হবে। এ ছাড়া ৩০০ মিটার আভ্যন্তরীণ সড়ক (আরসিসি) নির্মাণে ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ব্যয় প্রাক্কলনের উৎস হিসেবে এলজিইডি রেইট সিডিউল ২০২২ উল্লেখ করা হলেও ডিটেইল ডিজাইনসসহ বিস্তারিত ব্যয় বিভাজন ডিপিপিতে উল্লেখ করা হয়নি। পাশাপাশি অপারেশন শেড, লেবার শেড, গেইট অফিস, কর্মচারী শেড, ডরমেটরি প্রভৃতি প্রতিটি নির্মাণে প্রতি বর্গমিটারে ৫৩ হাজার টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ব্যয় বিভাজন নিয়ে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে।