• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১২ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র টালবাহানা করছে: প্রতিমন্ত্রী কারিগরির সনদ বাণিজ্য: জিজ্ঞাসাবাদে দায় এড়ানোর চেষ্টা সাবেক চেয়ারম্যানের বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিতে কাতারের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির ফরিদপুরে ১৫ জনের মৃত্যু: অপেশাদার লাইসেন্সে ১৩ বছর ধরে বাস চালাচ্ছিলেন চালক বেনজীরের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট পাট পণ্যের উন্নয়ন ও বিপণনে সমন্বিত পথনকশা প্রণয়ন করা হবে: পাটমন্ত্রী কক্সবাজারে অপহরণের ২৬ ঘণ্টা পর পল্লী চিকিৎসক মুক্ত বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব যশোরে তীব্র তাপপ্রবাহে গলে যাচ্ছে সড়কের বিটুমিন জাল সার্টিফিকেট চক্র: জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যানকে

সরকারি খাতের চেয়ে আইপিপিগুলো থেকেই বেশি বিদ্যুৎ কিনছে বিপিডিবি

Reporter Name / ৩৩৮ Time View
Update : মঙ্গলবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :
সক্ষমতার বিচারে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে সরকারি খাতের অবদানের চেয়ে বেসরকারি খাতই বড় ভূমিকা রাখছে। ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) থেকেই বেশি বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন সংস্থা (বিপিডিবি)। তাতে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে সরকারের ব্যয় ও ভর্তুকি দুটোই বাড়ছে। তারপরও আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ ব্যয় ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে চলেছে। বিপিডিবি গত অর্থবছরে (২০২০-২১) আইপিপিগুলোকে ২৮ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি অর্থ পরিশোধ করেছে। যা বিদ্যুৎ কেনা বাবদ সংস্থাটির মোট ব্যয়ের ৫৬ শতাংশ। বিদ্যুৎ ক্রয় ও ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বিপিডিবি ওই অর্থ আইপিপিগুলোকে পরিশোধ করেছে। বিপিডিবি এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিপিবিডি বিদ্যুৎ কেনার একমাত্র রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। সংস্থাি প্রতি বছর নিজস্ব উৎপাদনের পাশাপাশি আইপিপিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ কিনে থাকে। সেক্ষেত্রে বর্তমানে আইপিপির ওপরেই বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বিপিডিবি। গত অর্থবছরে সংস্থাটি বিদ্যুৎ কেনা বাবদ ৪৯ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। তার মধ্যে আইপিপি থেকে ২৭ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে। ওই হিসেবে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ আইপিপিগুলোর পেছনে সরকারের ব্যয়কৃত অর্থের ৫৬ শতাংশেরও বেশি খরচ হয়েছে। অথচ বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে তার পরিমাণ অর্ধেকেরও কম ছিল। ওই সময় আইপিপি থেকে বিপিডিবি ১৭ হাজার ৫১৯ কোটি টাকার বিদ্যুৎ কিনেছিল। সূত্র জানায়, বর্তমানে আইপিপি থেকে বিদ্যুতের গড় ক্রয়মূল্যও বেড়েছে। গত অর্থবছরে বিপিডিপির নিজস্ব উৎপাদনকৃত প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ছিল ৪ টাকা ৪৬ পয়সা। আর আইপিপি থেকে কেনা বিদ্যুতের কিলোওয়াটপ্রতি দাম ছিল ৮ টাকা ২ পয়সা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৭ টাকা। ওই হিসেবে আইপিপির সরবরাহকৃত বিদ্যুতের গড় দাম কিলোওয়াটে ১ টাকা ২ পয়সা বেড়েছে। বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কমমূল্যে বিক্রি করায় বিপিডিবিকে এমনিতেই আর্থিক চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয় তার ওপর আইপিপির সরবরাহকৃত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি বিপিডিবির লোকসানের বোঝাকে আরো ভারী করে তুলেছে। গত অর্থবছরে সংস্থাটিকে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। সক্ষমতার বিচারে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো এগিয়ে থাকলেও দেশের বিদ্যুৎ খাতে আইপিপিগুলো ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে উঠছে। দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের মোট সক্ষমতা ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। তার মধ্যে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ১২ হাজার ৮০১ মেগাওয়াট। আর আইপিপি ও রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ৯ হাজার ২৩০ মেগাওয়াট। বর্তমানে সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি তেলনির্ভরতা কমাচ্ছে। উৎপাদন খরচ বিবেচনায় বিদ্যুৎ কেনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো গুরুত্ব পাচ্ছে। আর দেশে চালু আইপিপিগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই গ্যাসভিত্তিক। ওই কারণেই বিদ্যুৎ কেনায় আইপিপির আধিপত্য বাড়ছে। বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে এমন পরিকল্পনা থেকেই আইপিপি খাতে অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন দেয়া হয়। সেগুলো বর্তমানে উৎপাদনে রয়েছে। আবার কোনো কোনোটি উৎপাদনে না থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী সেগুলোকে প্রতি বছর বসিয়ে রেখেই প্রচুর অর্থ গুনতে হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এসবই বিপিডিবির খরচের বোঝাকে বাড়িয়ে তোলে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কেনায় সরকারের ব্যয় হয়েছিল ৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ হাজার ৪১০ কোটি টাকায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে ১৫ হাজার ৭৪৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ওই ধারা পরের দুই অর্থবছরেও অব্যাহত থাকে। সর্বশেষ গত অর্থবছরে তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে ২ হাজার ১৮০ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ সক্ষমতা যুক্ত হয়েছে। ফলে দেশে মোট বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৩১ মেগাওয়াট। ওই হিসেবে গত অর্থবছরে দেশের সক্ষমতা বেড়েছে ৮ শতাংশ। সেক্ষেত্রে আইপিপিগুলোই বড় ভূমিকা পালন করেছে। আর ওই সময়ে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসিয়ে রাখায় বিপিডিবির নিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ শতাংশ কমেছে। বিপরীতে আইপিপির বেড়েছে প্রায় ৩১ শতাংশ।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদন খরচ কম এমন সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ওই ধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সার্বক্ষণিক চালু রাখা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কেনা কমে আসতে পারে। তবে আইপিপি থেকে সব সময় বিদ্যুৎ কেনা হবে এমন চুক্তিতেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা হয়। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলো বসিয়ে রাখলেও সরকারকে মোটা অংকের অর্থ গুনতে হয়। সেজন্যই আইপিপির পরিবর্তে দেশের উৎপাদন সক্ষম হয়ে ওঠা সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে কেনা বাড়ালেই সবার লাভ হবে বেশি। কারণ ওসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কম দামে জ্বালানি সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও কম। আর আইপিপিসহ বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানি ব্যয় সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় অনেক বেশি। সেখানে উৎপাদন খরচও বেশি। সেজন্য বিপিডিবিকেও বিদ্যুৎ বাবদ বেশি মূল্য পরিশোধ করতে হয়।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিদ্যুতের নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন জানান, মূলত জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কমানোয় আইপিপি থেকে বিদ্যুৎ কেনা বেড়েছে। সরকারি জ্বালানি তেলভিত্তিক অনেকগুলো বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। ওই উৎপাদন খরচ বিবেচনায় বিদ্যুৎ ক্রয়ের ক্ষেত্রে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। আইপিপির আওতায় অনেকগুলো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। তাছাড়া বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম বাড়ায় গত অর্থবছরে সরকারি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়েছে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী আইপিপিগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনতেই হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category