নিজস্ব প্রতিবেদক :
নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজার। অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে পণ্যের দাম। সরকারের দাম নির্ধারণের সুফল মিলছে না। নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়ায় বিভিন্ন সময় সরকার অন্তত ৩৬টি পণ্যের ‘যৌক্তিক’ দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। উৎপাদন ব্যয়, বিপণন, পরিবহণ ও মুনাফাসহ সব হিসাব বিবেচনায় নিয়ে সরকার ওই দাম নির্ধারণ করে। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামে বাজারে কোনো পণ্যই বিক্রি হচ্ছে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত পণ্যমূল্য অযৌক্তিক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। পণ্য সংকটের কারণে দাম বাড়ছে না। বরং ব্যবসায়ীদের কারসাজিই পণ্যের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ। বাজার সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাজারে ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। ব্যবসার নিয়ম বহির্ভূতভাবে একাধিক হাত বদল হচ্ছে পণ্য। ওসব হাতবদলের কারণেও পণ্যের যৌক্তিক দাম ঠিক থাকছে না। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে নিবিড় নজরদারি জোরালোভাবে অব্যাহত রাখতে হবে। অবশ্যই সরকারকে বাজারে পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু সরকার ভোক্তাবান্ধব না হয়ে ব্যবসায়ীবান্ধব পদ্ধতিতে নিত্যপণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করেছে। সরকারের পণ্যের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় ছোট, মাঝারি উৎপাদনকারী, ভোক্তাদের প্রতিনিধি, সাধারণ মানুষ যাতে জানতে পারে সেজন্য গণমাধ্যম কর্মী থাকলে ভালো হতো। কিন্তু বড় কয়েকটি গ্রুপকে ডেকে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়া সরকারি পণ্যমূল্য নির্ধারণ কাগজে আছে, বাস্তবে নেই। সূত্র জানায়, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নিত্যপণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে। সংস্থাটি প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করেছে ৬৫ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি ধরে। একইভাবে চিচিঙ্গার কেজি ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। ৩২ টাকা কেজির মিষ্টিকুমড়া হয়ে গেছে ৭০ টাকা। ৪০ টাকার পটোল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আর ৩৬ টাকার ঢেঁড়স কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকায়। সরকার প্রতি কেজি কাঁচামরিচের দাম নির্ধারণ করেছে ৬০ টাকা ২০ পয়সা। কিন্তু হচ্ছে ৩শ’রও বেশি টাকা কেজি দরে। একইভাবে সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি টাকায় বিক্রি হচ্ছে ঢেঁড়স, পটোল, মিষ্টিকুমড়াসহ সব ধরনের সবজি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া ৪০ টাকা কেজির ঝিঙ্গা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। লম্বা বেগুনের নির্ধারিত দাম ৪৬ টাকা। তবে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। একইভাবে মোটা চালের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি কেজি ৪৩ টাকা ৮৬ পয়সা। তবে তা বিক্রি হচ্ছিলো ৫৫ টাকায়। এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে। জেলায় জেলায় সমন্বিত কমিটি গঠন করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও মাঠে কর্মরত রয়েছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের মতে, আড়তদারদের যোগসাজশে পাইকারি, ব্যাপারী ও খুচরা ব্যবসায়ী সবাই একত্র হয়ে দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। কারওয়ান বাজারে প্রায় হাজার দেড়েক অবৈধ ফড়িয়া ব্যবসায়ী সক্রিয়। তাদের কোনো ধরনের নিবন্ধন, রসিদ বই বা অন্য কোনো অনুমোদন নেই। আর অভিযানে সবজির দাম বাড়াতে আড়তদারদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কৃষি অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকার নিত্যপণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করলেও বাজার মূলত চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে নির্ধারণ হয়ে থাকে। তবে বাজারে পণ্যের সংকট দেখা দিলে কারসাজির সুযোগ বেড়ে যায়। সেজন্যই বাজারে নজরদারি জোরদার করা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক দুই দফা বন্যায় কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার শীতের আগের এ সময়ে সবজির সরবরাহও কম থাকে। আশা করা যায় এক মাসের মধ্যে শীতের সবজি এলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ প্রসঙ্গে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম জানান, গবেষকরা এটা ভালো বলতে পারবেন। করণীয় হিসেবে অনেক কিছুই করার আছে। আইনি পদক্ষেপ নেয়া যায়, পণ্য আমদানি করা যায়। সারা দেশে জেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। বাজার স্বাভাবিক রাখার জন্য যাবতীয় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।