০৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫ | ই-পেপার

সিনহা হত্যা মামলা: ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনের যাবজ্জীবন বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পাঁচ বছর আগে কক্সবাজারে পুলিশ চেকপোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনায় পাঁচ পুলিশসহ আট আসামিকে জজ আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। আসামিদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে দেওয়া হয় মৃত্যুদ-। সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব এবং পুলিশের তিন ‘সোর্স’ মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়। জজ আদালতের দেওয়া মৃত্যুদ-ের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) এবং আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি করে বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ মামলার রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, “আমরা নি¤œ আাদালতে এ মামলার সকল সাক্ষ্য প্রমাণ ও দলিলাদি এবং রায় পর্যালোচনা করেছি। পারিপাশির্^ক স্বাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এই মামলার ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হল, আাসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করা হল। সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, “সত্যের জয় হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত এ রায় কার্যকর হবে।” আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান ও সারওয়ার আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এম আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসিমউদ্দিন সরকার। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’ এ মামলা নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দিলে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাই কোর্টে শুনানি শুরু হয়। ২৯ মে শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ২ জুন দিন ঠিক করে দেয়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সিনহা মো. রাশেদ খানকে। মহামারীর মধ্যে ওই ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আইনি বাহিনীর বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করে সিনহাকে হত্যার ঘটনা সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়। সিনহা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, যিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর কয়েকজন তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় সিনহার বোন মামলা করার পর ১২ পুলিশসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন র?্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম। একজন আইনের লোক হয়েও ওসি প্রদীপ কীভাবে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বন্দুকযুদ্ধ সাজিয়ে খুন করে যাচ্ছিলেন টাকার জন্য, তা উঠে আসে তার তদন্তে। সেখানে বলা হয়, তথ্যচিত্র নির্মাণে কক্সবাজারে গিয়ে সিনহা ও তার সঙ্গীরা টেকনাফের নিরীহ মানুষের উপর ওসি প্রদীপের ‘অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের কাহিনী’ জেনে গিয়েছিলেন। এরপর বিপদ আঁচ করতে পেরে প্রদীপের পরিকল্পনায় সিনহাকে হত্যা করা হয়। প্রদীপের নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেন লিয়াকত। বাকিরা তাদের সহযোগিতা করেন। ২০২১ সালের ২৭ জুন ওই ১৫ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। সাত মাস পর ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি রায় ঘোষণা করেন। সেখানে ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতকে মৃত্যুদ- এবং তিন পুলিশসহ ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন তিনি। মামলার ১৫ আসামির মধ্যে বাকি চার পুলিশ সদস্য এবং তিন এপিবিএন সদস্যকে বেকসুর খালাস দেয় জজ আদালত। পরে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে আসে। কারাগারে থাকা দ-িত আসামিরা আপিল করেন।

ট্যাগস :

রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা বন্ধ হলে চাকরি হারাবেন বাংলাদেশি শিক্ষকরাও

সিনহা হত্যা মামলা: ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনের যাবজ্জীবন বহাল

আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৩:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :
পাঁচ বছর আগে কক্সবাজারে পুলিশ চেকপোস্টে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানকে হত্যার ঘটনায় পাঁচ পুলিশসহ আট আসামিকে জজ আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। আসামিদের মধ্যে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে দেওয়া হয় মৃত্যুদ-। সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব এবং পুলিশের তিন ‘সোর্স’ মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেওয়া হয়। জজ আদালতের দেওয়া মৃত্যুদ-ের অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) এবং আসামিদের করা আপিলের ওপর শুনানি করে বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ মামলার রায় দেয়। রায়ে বলা হয়, “আমরা নি¤œ আাদালতে এ মামলার সকল সাক্ষ্য প্রমাণ ও দলিলাদি এবং রায় পর্যালোচনা করেছি। পারিপাশির্^ক স্বাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এই মামলার ডেথ রেফারেন্স গ্রহণ করা হল, আাসামিদের আপিল ও জেল আপিল খারিজ করা হল। সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এবং কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, “সত্যের জয় হয়েছে। আমরা চাই দ্রুত এ রায় কার্যকর হবে।” আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এসএম শাহজাহান ও সারওয়ার আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এম আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসিমউদ্দিন সরকার। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’ এ মামলা নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত দিলে চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাই কোর্টে শুনানি শুরু হয়। ২৯ মে শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ২ জুন দিন ঠিক করে দেয়। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সিনহা মো. রাশেদ খানকে। মহামারীর মধ্যে ওই ঘটনা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। আইনি বাহিনীর বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করে সিনহাকে হত্যার ঘটনা সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়। সিনহা ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, যিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর কয়েকজন তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় সিনহার বোন মামলা করার পর ১২ পুলিশসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন র?্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম। একজন আইনের লোক হয়েও ওসি প্রদীপ কীভাবে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বন্দুকযুদ্ধ সাজিয়ে খুন করে যাচ্ছিলেন টাকার জন্য, তা উঠে আসে তার তদন্তে। সেখানে বলা হয়, তথ্যচিত্র নির্মাণে কক্সবাজারে গিয়ে সিনহা ও তার সঙ্গীরা টেকনাফের নিরীহ মানুষের উপর ওসি প্রদীপের ‘অবর্ণনীয় নির্যাতন-নিপীড়নের কাহিনী’ জেনে গিয়েছিলেন। এরপর বিপদ আঁচ করতে পেরে প্রদীপের পরিকল্পনায় সিনহাকে হত্যা করা হয়। প্রদীপের নির্দেশে সিনহাকে গুলি করেন লিয়াকত। বাকিরা তাদের সহযোগিতা করেন। ২০২১ সালের ২৭ জুন ওই ১৫ আসামির বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিলেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। সাত মাস পর ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি রায় ঘোষণা করেন। সেখানে ওসি প্রদীপ ও পরিদর্শক লিয়াকতকে মৃত্যুদ- এবং তিন পুলিশসহ ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেন তিনি। মামলার ১৫ আসামির মধ্যে বাকি চার পুলিশ সদস্য এবং তিন এপিবিএন সদস্যকে বেকসুর খালাস দেয় জজ আদালত। পরে মৃত্যুদ- কার্যকর করতে ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে আসে। কারাগারে থাকা দ-িত আসামিরা আপিল করেন।