নিজস্ব প্রতিবেদক :
সড়ক দুর্ঘটনার তথ্যে গড়মিল আছে উল্লেখ করে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)-এর চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেছেন, সেকেন্ডারি ডাটা গণমাধ্যম থেকে পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়। সঠিক তথ্য নির্ধারণে সরকারিভাবে পরিসংখ্যান রাখা উচিত। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮। বহুল আলোচিত এ আইন পাস হওয়ার চার বছর পূর্ণ হলেও তা বাস্তবায়নে বিধিমালা তৈরি হয়নি। ফলে সড়ককে নিরাপদ করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও আইনের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সড়কে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না শৃঙ্খলা, বাড়ছে মৃত্যু। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত গ্লোবাল স্ট্যাটস রিপোর্ট অন রোড সেইফটি ২০১৮-এর তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় সড়ক দুর্ঘটনায়। বিশ্বব্যাপী শতকরা ৯০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশসমূহে, যার সংখ্যা উন্নত দেশগুলো তুলনায় তিনগুণ বেশি। সড়ক দুর্ঘটনাজনিত মানুষের মৃত্যু, পঙ্গুত্ব ও অসুস্থতা এবং সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতি লাঘবের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ এবং এর সদস্যভুক্ত প্রায় প্রতিটি দেশের সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়কের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া ইলিয়াস কাঞ্চন। উদ্যোগগুলো সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ কমানোর জন্য টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৬ অর্জনের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করা এবং গ্লোবাল প্ল্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেইফটি ২০২১-২০৩০ নিশ্চিত করতে কার্যকর কর্মপন্থা নির্ধারণ করে সেগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা। সংবাদ সম্মেলনে কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে ব্র্যাকের রোড সেইফটি প্রোগ্রামে ম্যানেজার এম. খালিদ মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকার তার সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের সহায়তায় সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় এর সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা বহুমাত্রিক হওয়ায় সরকারের একার পক্ষে তা নিরসন করা সম্ভব নয়। এর জন্য প্রয়োজন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও কার্যকর উদ্যোগ। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থাৎ জাতিসংঘ ঘোষিত সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট এসডিজির লক্ষ্য ৩.৬ ও ১১.২ পূরণের নিমিত্ত সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহের পাশাপাশি দেশের কিছু কার্যকর স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও এনজিও সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছে। রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের সদস্য সংস্থাসমূহ হলো-নিরাপদ সড়ক চাই; ব্র্যাক; ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন; অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বুয়েট); বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি; সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ; ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ অর্থপেডিক সোসাইটি; বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন এবং ইম্প্রেসিভ কমিউনিকেশন লিমিটেড। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময়ে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ প্রণয়ন। এই আইনের কিছু সরল দিক থাকলেও এর সীমাবদ্ধতা রয়েছে প্রচুর। যার মধ্যে অন্যতম হলো- আইনটিতে হেলমেট পরিধানের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এর মানদ- ও ব্যবহারবিধি আইনে অনুপস্থিত। আইনে গতিসীমা লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান বর্ণিত থাকলেও গতিসীমা নির্ধারণ, এর বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা ও গাইডলাইন সন্নিবেশিত হয়নি, যা বাস্তবায়ন অযোগ্য। এ ছাড়া যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা ও শিশুদের ক্ষেত্রে চাইল্ড রেস্ট্রেইন্ট বা শিশুদের জন্য নিরাপদ বা সুরক্ষিত আসন ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা আইনটিতে সংযোজন করা হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিবিউটরের কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর ড. শরিফুল আলম, কোয়ালিশনের সদস্য সংস্থার পক্ষ থেকে ব্র্যাকের রোড সেইফটি প্রোগ্রাম পরিচালক আহমেদ নাজমুল হুসেইন, বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান, বুয়েটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া, সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ, বিএনএনআরসির প্রধান নির্বাহী এএইচএম বজলুর রহমান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর রেজওয়ান নবীন, ইমপ্রেসিভ কমিউনিকেশনস লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিবুজ্জামান প্রমুখ।