নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ও সৌদি এয়ারলাইনস ছাড়া অন্য কোনো বিমানে হজযাত্রী যাওয়ার সুযোগ না রাখা ও হজযাত্রীদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেশি ভাড়া নেওয়ার ঘটনাকে ‘অমানবিক’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়কে একটি ‘অথর্ব মন্ত্রণালয়’ বলে মূল্যায়ন করেছেন আদালত। এ সময় হজের খরচ বাড়ার বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্ট ক্ষোভও প্রকাশ করেন। ‘হজ প্যাকেজ ২০২৩’ সংশোধন করে খরচ পুনরায় নির্ধারণে করা রিটের শুনানির দিন ধার্য করার সময় আজ মঙ্গলবার এমন মন্তব্য করেন আদালত। আজ বুধবার এ বিষয়ে শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। এসময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে হজ প্যাকেজের বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না, খোঁজ নিতে বলেছেন। হাইকোর্ট বলেন, হজের ফান্ড নিয়ে একমাত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিন্তা করেছিলেন, তারপর এ বিষয়ে আর কেউ কোনো চিন্তা করেননি। সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্য যে কোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট ক্রয় করার সুবিধা না থাকার বিষয়ে আদালত বলেন, এখানে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। হাইকোর্টের বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মোহাম্মদ মহসিন। সঙ্গে ছিলেন রিটকারী আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান। এছাড়াও অ্যাডভোকেট আবিদ হোসেন, অ্যাডভোকেট আহসান উল্লাহ, অ্যাডভোকেট আজগর হোসেন তুহিন, অ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসাইন মজুমদার। শুনানিতে আদালত আরও বলেন, মালেশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার হজ ফান্ড আছে। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার ফান্ড কম। একমাত্র বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন। তারপরে এ বিষয়ে কেউ চিন্তা করেনি। সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্য যে কোনো এয়ারলাইন্সের টিকিট ক্রয় করার সুবিধা না থাকার বিষয়ে আদালত বলেন, এখানে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সময় সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে নির্ধারণ করা হজ প্যাকেজ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকাকে অমানবিক উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, এ কারণে গরিব মানুষ হজে যেতে পারছে না। মানুষ বঞ্চিত হলে তাদের দায় নিতে হবে। আদালত বলেছেন, এ দেশের মানুষ গরিব। হজের জন্য বিমান ভাড়া ৫০ হাজার টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। আদালত আরও বলেন, প্রায় ৭ লাখ টাকায় হজ প্যাকেজ করায় গরীব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটা অমানবিক কাজ। শুনানির একপর্যায়ে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের যারা হজ কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তাদের সঙ্গে প্যাকেজের বিষয়ে কথা বলে জানাতে বলেছেন। একই সঙ্গে আদালত বুধবার (১৫ মার্চ) শুনানির জন্য রেখেছেন। শুনানিতে আদালত আরও বলেন, মালেশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার হজ ফান্ড আছে। বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার ফান্ড কম। বঙ্গবন্ধু এ বিষয়ে চিন্তা করেছিলেন। তারপরে এ বিষয়ে কেউ চিন্তা করেনি। সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্য যেকোনো এয়ারলাইন্সের টিকেট ক্রয় করার সুবিধা না থাকার বিষয়ে আদালত বলেন, এখানে ব্যবসা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শুনানি শেষে আদালতের বরাত দিয়ে আইনজীবী গাজী মোহাম্মদ মহসিন বলেন, আদালত বলেছেন এত পরিমাণ খরচ বেড়ে গেছে যে সাধারণ মানুষ হজে যেতে পারছে না। কোর্ট বলেছেন হজ প্যাকেজ একটি অমানবিক প্যাকেজ হয়েছে। আদালত দুখের সঙ্গে বলেছেন, গরিব মানুষ হজ থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে এর সঙ্গে যারা জড়িত তারা গুনার ভাগীদার হবেন। একজন ধর্মপ্রাণ মানুষের সারাজিবনের প্রত্যাশা থাকে একবার হজ করার। সেসব ধর্মপ্রাণ মানুষের স্বপ্ন চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অস্বাভাবিক হজ প্যাকেজের কারণে। এর আগে গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান হজ প্যাকেজের প্রকৃত খরচ নির্ধারণ করার নির্দেশনা চেয়ে এ রিট আবেদন দায়ের করেন। রিট আবেদনে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা থেকে কমিয়ে কমিয়ে হজ প্যাকেজের প্রকৃত খরচ নির্ধারণ করার নির্দেশনাসহ রুল চাওয়া হয়েছে। আবেদনে সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বাইরে অন্য যে কোনো এয়ারলাইন্সের টিকেট ক্রয় করার সুবিধা রাখার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আবেদনে বলা হয়, হজ প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া, বিমান ভাড়া এবং মোয়াল্লেম ফি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই দেশের সরকার হজ যাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে। এ কারণে টিকেট কিনতে হজ যাত্রীদের স্বাধীনতা ধ্বংস হয়। এর আগে গত ৬ মার্চ সরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি মৌসুমে নির্ধারণ করা হজের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ লাখ টাকা পুননির্ধারণ করতে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আল কোরআন স্টাডি সেন্টারের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট আশরাফ উজ জামান ধর্ম মন্ত্রণালয় বরাবরে এ নোটিশ পাঠান। গত ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার সচিবালয়ে হজ প্যাকেজ-২০২৩ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে সভা শেষে সাংবাদিকদের সিদ্ধান্ত জানান প্রতিমন্ত্রী। চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে সৌদি আরব যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের অনুমতি পাবেন। এ দিন এ বিষয়ে স্মারক জারি করে মন্ত্রণালয়। সেখানে বিমান ভাড়া দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা। নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবী জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ-সৌদি-বাংলাদেশ রুটে প্লেন ভাড়া ৭৬ হাজার টাকা থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা। প্রতি বছর দুই দেশের সরকার হজ যাত্রীদের সৌদি ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কিনতে বাধ্য করে। এ কারণে টিকেট কিনতে হজ যাত্রীদের স্বাধীনতা খর্ব হয়। এসবসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, চার লাখ টাকার মধ্যে হজ প্যাকেজ-২০২৩ সংশোধন,পরিবর্তন এবং পুর্ননির্ধারণ করতে বলা হয়।
সর্বশেষঃ
হজযাত্রীদের বিমানভাড়া বেশি নেওয়া অমানবিক: হাইকোর্ট
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ০৯:০২:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০২৩
- ১৩৭ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ