• শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০৯ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ
সংসদ নির্বাচনে কোনো হুমকি দেখছি না: আইজিপি ধানের দাম কম, উৎপাদন খরচ ফেরত পাচ্ছে না চাষীরা, ক্ষতির মুখে কৃষক ১৭০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দেবে না আওয়ামী লীগ বান্দরবানে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন শান্তিরক্ষার দায়িত্বে সরকার সচেতন থাকবে: আইনমন্ত্রী পদধারী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অবশ্যই দলীয় শৃঙ্খলা মাথায় রাখতে হবে: তথ্যমন্ত্রী হরতাল-অবরোধের প্রভাব পণ্য পরিবহনে, বাড়তি ব্যয়ের বোঝা ভোক্তাদের কাঁধে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে উৎসাহিত করা হবে: এলজিআরডি মন্ত্রী বিশ্বকাপ ব্যর্থতা, অনুসন্ধানে বিসিবির কমিটি পোর্তোকে হারিয়ে নক আউট পর্বে বার্সেলোনা

হালকা শিল্প থেকে বাড়ছে রপ্তানি আয়

Reporter Name / ১৪৬ Time View
Update : শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বা হালকা প্রকৌশল শিল্প থেকে রপ্তানি আয় বাড়ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও জাতীয় বিনিয়োগ বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৪০ হাজারের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এ খাত ঘিরে চলমান, যেখানে সরাসরি নির্ভরশীল প্রায় ৮০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের নিবন্ধিত চারশ উদ্যোক্তা সারাদেশে হালকা প্রকৌশল ও সংশ্লিষ্ট শিল্পনির্ভর কারখানা গড়ে তুলেছেন। হালকা শিল্পকে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছে সরকার। হালকা প্রকৌশল খাত থেকে প্রায় ১০ হাজার বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ঢালাই, যন্ত্রাংশ, ডাইস ও মোল্ড, হালকা মেশিন, সুইচ, শেড, চ্যানেল, পরিবাহী তার, ফ্যান, বাইসাইকেল, ফিটিংস, কন্সট্রাকশন যন্ত্রপাতি, ব্যাটারি, স্ট্যাবিলাইজার, কার্বন রড, পরিবহন যন্ত্রাংশ, ইঞ্জিন যন্ত্রাংশ, নাট-বল্টু, প্ল্যাস্টিক পণ্য, ধাতব ফার্নিচার, তৈজসপত্র, অগ্নিনির্বাপক, গ্যাস সিলিন্ডার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দেশের কৃষি, খাদ্য, পাট ও টেক্সটাইল, কাগজ, সিমেন্ট, জাহাজ নির্মাণ, কেমিক্যাল, ওষুধ, গাড়ি, নৌ ও রেলওয়ে শিল্পের অন্তত ৫০ শতাংশ চাহিদা এ খাত মেটায়। দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে এ খাত থেকে রপ্তানি আয় বেড়ে ৫১ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ খাতে ৩১ দশমিক ১, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩০ দশমিক ৯, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৭ দশমিক ৫, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ৭ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় আসে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আসে ৪৪ দশমিক ৭ কোটি ডলার। জানা গেছে, উত্তরোত্তর সাফল্যে কারণে ‘লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের উন্নয়ন ও ই-ওয়েস্ট প্রক্রিয়াকরণের সুবিধাদি সৃষ্ট’ প্রকল্পের মাধ্যমে এ খাত আরও এগিয়ে নিতে চায় সরকার। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য দেশের হালকা ও মাঝারি প্রকৌশল খাতের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। চট্টগ্রামে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং উন্নয়ন কেন্দ্র এবং রাজশাহী ও সাভার চামড়া গবেষণা কেন্দ্রে ম্যাটেরিয়ালস কেন্দ্র স্থাপন করা হবে প্রকল্পের আওতায়। এছাড়া ঢাকা ক্যাম্পাসে ম্যাটেরিয়ালস কেন্দ্র এবং ই-বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শিল্প কারখানার মাধ্যমে উৎপাদিত কন্সট্রাকশন ম্যাটেরিয়াল (স্টিল, কংক্রিট, সিমেন্ট ইত্যাদি), লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের উৎপাদিত পণ্য (স্পেয়ার পার্টস, ইত্যাদি) এবং ইলেকট্রিক্যাল ম্যাটেরিয়ালের (ক্যাবলস্, ইনস্যুলেটর ইত্যাদি) মানোন্নয়নের জন্য বিশেষায়িত গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করা হবে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গবেষণা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযোগ এবং স্থাপন করা হবে যৌথ গবেষণা কেন্দ্র। প্রকল্পটি অনুমোদনের পর বাস্তবায়ন হবে জুন ২০২৪ মেয়াদে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল গফুর বলেন, রপ্তানি পণ্য হিসেবে বাইসাইকেল অনেক এগিয়ে গেছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে পণ্যটি এখন বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া লৌহজাত ঢালাই, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, প্রকৌশল যন্ত্র, পরিবাহী তার, মরিচাহীন ইস্পাত সামগ্রীও বিদেশে যাচ্ছে। এসব খাতে অনেক মানুষ জড়িত। তারা কীভাবে আরও উন্নয়ন করতে পারে কীভাবে তাদের আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা যায় সে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এখন সম্ভাবনাময় খাত। আমরা চেষ্টা করছি এ খাতে আরও উন্নতি করার। সংশ্লিষ্টদের আরও সাপোর্ট দেওয়া হবে। এজন্যই প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বিসিএসআইআর সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাপী উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ইতিহাস থেকে দেখা যায়, ম্যাটেরিয়ালস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন সর্বদাই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মানসম্পদ, সহজলভ্যতা এবং সুলভ পণ্য ও সেবার চাহিদা থেকেই মূলত শিল্পায়নের সূচনা হয়। শিল্পায়নের চালিকাশক্তি হলো উন্নত কাঁচামাল, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং সংশ্লিষ্ট সেবা, যা ম্যাটেরিয়াল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে বাংলাদেশের শিল্প এরইমধ্যে নিজস্ব উদ্যম আর প্রচেষ্টা বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। এ অবস্থাকে এগিয়ে নিতে ম্যাটেরিয়াল প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পকে হতে হবে আরও সংহত। এজন্য প্রয়োজন কারিগরি সক্ষমতার উন্নয়নকারী একটি আধুনিক গবেষণাগার। বিএসআইআর বলছে, বাংলাদেশ সরকার হালকা প্রকৌশল খাতকে সামনে রেখে বেশ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজধানীর আশপাশে ‘হালকা প্রকৌশল গুচ্ছগ্রাম’ তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে গার্মেন্টস শিল্পের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে এ হালকা প্রকৌশল খাত। এদিকে বাংলাদেশ ফরেন এইড ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে পরিচালিত এক গবেষণায় হালকা প্রকৌশল খাতের কিছু প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বৈদেশিক বৃহৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজার, মানসম্পন্ন কাঁচামালের অভাব, আমদানি পণ্যের মান যাচাই সুবিধার স্বল্পতা, উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সীমিত জ্ঞান, উৎপাদিত পণ্যের গুণগত ও দৃশ্যমান মানের ঘাটতি লক্ষণীয়। এ ছাড়া রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মান যাচাই করার জন্য স্বীকৃত গবেষণাগারের অভাব, সুস্থ বিনিয়োগের বিপরীতে বাজারদরের অসঙ্গতি রয়েছে। আছে দক্ষতার অভাব, কেন্দ্রীয় গবেষণা ও উন্নয়ন ঘাটতিও। এসব কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে এবং এ খাতের চলমান সমস্যা সমাধানে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা দরকার বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। মূলত স্বাধীনতার পরই দেশে হালকা প্রকৌশল শিল্পের যাত্রা। প্রথমে বিভিন্ন শিল্প ও যানবাহনের কিছুকিছু যন্ত্রাংশ তৈরি এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হয় পুরান ঢাকার ধোলাইখালসংলগ্ন চারপাশ এলাকার টিপু সুলতান রোড, বাংলাবাজার, বংশাল, মদন পাল লেনসহ গুটি কয়েক কারখানায়। তখন প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে অনেক দুর্বলতা ছিল এ খাতে। ১৯৮৬ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ধোলাইখাল-জিঞ্জিরা প্রকল্প নামে ৫ কোটি টাকা বিসিকের মাধ্যমে ঋণ বরাদ্দ দেয়ার পর এ খাত বিকশিত হতে থাকে। তখন উদ্যোক্তাদের বন্ধক ছাড়াই ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়। এর মধ্যে ৭ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি এবং ৩ লাখ টাকার চলতি মূলধন। গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সাবকন্ট্রাক্টিং ব্যবস্থাও চালু করা হয়। এতে দেশি কারখানাগুলোতে চাহিদার অন্তত একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়। এতে এ খাতের উদ্যোক্তারা উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ হয়ে নতুন যন্ত্রাংশ ও যন্ত্র তৈরির কাজ বাড়িয়ে দেন। পরে ধোলাইখাল-জিঞ্জিরা মডেল নামে প্রকল্পে আরো ১৫ কোটি টাকা দেশব্যাপী বরাদ্দ দেয়া হয়। সেই সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া উদ্যোগের সুফল মিলছে এখন। বর্তমানে এ খাতে প্রত্যক্ষভাবে ৮০ লাখ মানুষ নির্ভরশীল। পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হলে এই খাতে আরও কর্মসংস্থান তৈরি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category