ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

‘অবৈধ’ খেলোয়াড় নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ হলে বিশ্বকাপ থেকে বাদ নাইজেরিয়া

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৫:২৩:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ৮ বার পড়া হয়েছে

আগামী বছরের ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছে নাইজেরিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এনএফএফ)। অভিযোগে বলা হয়েছে, আফ্রিকা অঞ্চলের প্লে-অফ ফাইনালে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) একাধিক অযোগ্য খেলোয়াড় মাঠে নামিয়েছে।

গত মাসে মরক্কোয় অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের পর টাইব্রেকারে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্লে-অফে জায়গা করে নেয় ডিআর কঙ্গো। আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই প্লে-অফ থেকে কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের শেষ দুটি টিকিট নির্ধারিত হবে।

তবে এনএফএফের অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পরিচয় বদলানো কয়েকজন খেলোয়াড়। নাইজেরিয়ার দাবি, ওই ম্যাচে ডিআর কঙ্গোর হয়ে খেলা অ্যারন ওয়ান-বিসাকা ও অ্যাক্সেল তুয়ানজেবে আইনগতভাবে খেলার জন্য বৈধ নন। কারণ, কঙ্গোর আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি নেই, অথচ এই খেলোয়াড়দের ইউরোপীয় ও ফরাসি পাসপোর্ট রয়েছে।

নাইজেরিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সানুসি বলেন, ‘আমাদের দাবি, ফিফাকে ভুল তথ্য দিয়ে তাদের খেলার অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

কঙ্গোর আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই, কিন্তু তাদের কয়েকজন খেলোয়াড় একাধিক দেশের পাসপোর্টধারী। আমরা এটিকে ফিফার নিয়ম ভঙ্গ এবং প্রতারণা বলেই মনে করি।’

এনএফএফ জানিয়েছে, তারা অভিযোগের পক্ষে প্রয়োজনীয় নথি ও আইনি যুক্তি ফিফার কাছে জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি, তবে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ডিআর কঙ্গো ফুটবল ফেডারেশন (ফেকোফা) অভিযোগটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। লেপার্ডসের অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আইনের ফাঁক খুঁজে জেতার চেষ্টা করছে নাইজেরিয়া। বিশ্বকাপ খেলতে হয় মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আইনজীবীদের কৌশলে নয়।’

সেখানে নাইজেরিয়াকে ‘খারাপ পরাজিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগটিকে অখেলোয়াড়সুলভ বলেও উল্লেখ করা হয়।

ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো খেলোয়াড় একবারই জাতীয় দল পরিবর্তনের আবেদন করতে পারেন এবং সেটি লিখিতভাবে ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষ।

ফিফা একটি দেশের হয়ে খেলতে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট থাকার শর্ত দিলেও, একাধিক পাসপোর্ট রাখার বিষয়ে বাধা নেই। তবে কঙ্গোর জাতীয় আইনে দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত নয়, এটিকেই মূল যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছে নাইজেরিয়া।

ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পৌঁছালে কয়েকটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

প্রথমত, প্রমাণ অপর্যাপ্ত মনে হলে অভিযোগ খারিজ করে ডিআর কঙ্গোর যোগ্যতা বহাল রাখা হতে পারে। দ্বিতীয়ত, তদন্ত করে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি পেলে ফেডারেশনকে জরিমানা বা সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে, যদিও ম্যাচের ফল অপরিবর্তিত থাকবে। সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রে খেলাধুলাভিত্তিক শাস্তি—ম্যাচ বাতিল, প্রতিপক্ষকে জয় দেওয়া বা পয়েন্ট কর্তনের মতো সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

এর আগে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অযোগ্য খেলোয়াড় খেলানোর দায়ে ইকুয়েটোরিয়াল গিনির ছয় পয়েন্ট কেটে নেয় ফিফা। যদিও সেই সিদ্ধান্ত পরে প্রত্যাহার করা হয়, তবে পয়েন্ট আর ফেরত পায়নি তারা। একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাও স্থগিত খেলোয়াড় নামানোর কারণে লেসোথোর বিপক্ষে জয় হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত হিসেবে গণ্য হয়েছিল।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

‘অবৈধ’ খেলোয়াড় নেওয়ার অভিযোগ প্রমাণ হলে বিশ্বকাপ থেকে বাদ নাইজেরিয়া

আপডেট সময়ঃ ০৫:২৩:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

আগামী বছরের ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দিয়েছে নাইজেরিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এনএফএফ)। অভিযোগে বলা হয়েছে, আফ্রিকা অঞ্চলের প্লে-অফ ফাইনালে ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) একাধিক অযোগ্য খেলোয়াড় মাঠে নামিয়েছে।

গত মাসে মরক্কোয় অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে নির্ধারিত সময়ের পর টাইব্রেকারে নাইজেরিয়াকে হারিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্লে-অফে জায়গা করে নেয় ডিআর কঙ্গো। আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই প্লে-অফ থেকে কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপের শেষ দুটি টিকিট নির্ধারিত হবে।

তবে এনএফএফের অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক পরিচয় বদলানো কয়েকজন খেলোয়াড়। নাইজেরিয়ার দাবি, ওই ম্যাচে ডিআর কঙ্গোর হয়ে খেলা অ্যারন ওয়ান-বিসাকা ও অ্যাক্সেল তুয়ানজেবে আইনগতভাবে খেলার জন্য বৈধ নন। কারণ, কঙ্গোর আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের অনুমতি নেই, অথচ এই খেলোয়াড়দের ইউরোপীয় ও ফরাসি পাসপোর্ট রয়েছে।

নাইজেরিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সানুসি বলেন, ‘আমাদের দাবি, ফিফাকে ভুল তথ্য দিয়ে তাদের খেলার অনুমতি নেওয়া হয়েছে।

কঙ্গোর আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই, কিন্তু তাদের কয়েকজন খেলোয়াড় একাধিক দেশের পাসপোর্টধারী। আমরা এটিকে ফিফার নিয়ম ভঙ্গ এবং প্রতারণা বলেই মনে করি।’

এনএফএফ জানিয়েছে, তারা অভিযোগের পক্ষে প্রয়োজনীয় নথি ও আইনি যুক্তি ফিফার কাছে জমা দিয়েছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে ফিফার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বিবিসি, তবে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ডিআর কঙ্গো ফুটবল ফেডারেশন (ফেকোফা) অভিযোগটি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। লেপার্ডসের অফিসিয়াল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আইনের ফাঁক খুঁজে জেতার চেষ্টা করছে নাইজেরিয়া। বিশ্বকাপ খেলতে হয় মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে, আইনজীবীদের কৌশলে নয়।’

সেখানে নাইজেরিয়াকে ‘খারাপ পরাজিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগটিকে অখেলোয়াড়সুলভ বলেও উল্লেখ করা হয়।

ফিফার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো খেলোয়াড় একবারই জাতীয় দল পরিবর্তনের আবেদন করতে পারেন এবং সেটি লিখিতভাবে ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষ।

ফিফা একটি দেশের হয়ে খেলতে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট থাকার শর্ত দিলেও, একাধিক পাসপোর্ট রাখার বিষয়ে বাধা নেই। তবে কঙ্গোর জাতীয় আইনে দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদিত নয়, এটিকেই মূল যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছে নাইজেরিয়া।

ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পৌঁছালে কয়েকটি সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

প্রথমত, প্রমাণ অপর্যাপ্ত মনে হলে অভিযোগ খারিজ করে ডিআর কঙ্গোর যোগ্যতা বহাল রাখা হতে পারে। দ্বিতীয়ত, তদন্ত করে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি পেলে ফেডারেশনকে জরিমানা বা সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে, যদিও ম্যাচের ফল অপরিবর্তিত থাকবে। সবচেয়ে গুরুতর ক্ষেত্রে খেলাধুলাভিত্তিক শাস্তি—ম্যাচ বাতিল, প্রতিপক্ষকে জয় দেওয়া বা পয়েন্ট কর্তনের মতো সিদ্ধান্তও আসতে পারে।

এর আগে ২০২৬ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে অযোগ্য খেলোয়াড় খেলানোর দায়ে ইকুয়েটোরিয়াল গিনির ছয় পয়েন্ট কেটে নেয় ফিফা। যদিও সেই সিদ্ধান্ত পরে প্রত্যাহার করা হয়, তবে পয়েন্ট আর ফেরত পায়নি তারা। একইভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাও স্থগিত খেলোয়াড় নামানোর কারণে লেসোথোর বিপক্ষে জয় হারিয়ে ৩-০ ব্যবধানে পরাজিত হিসেবে গণ্য হয়েছিল।