ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

অভিযোগ তুলে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলেন শামীমা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময়ঃ ০৩:৩২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে

কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিত অভিযোগ করে কোনও প্রতিকার না পেয়ে পদত্যাগ করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শামীমা সুলতানা মায়া। দলের প্রধানের কাছে দেওয়া এই পদত্যাগপত্রে তিনি বলেছেন, ‘আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না কিংবা কোনও সরাসরি অভিযোগ তুলতে চাই না। তবে সত্য হলো আমি আমার বিবেক, সততা এবং নীতিকে কোনোভাবেই বিসর্জন দিতে চাই না।’

দলীয় প্রধানের কাছে পাঠানো এ পদত্যাগপত্র মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে সাংবাদিকদের পড়ে শোনান শামীমা সুলতানা মায়া। গত আগস্টে তিনি বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরে দলীয় প্রধানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তবে এর কোনও প্রতিকার পাননি বলে পদত্যাগের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

শামীমা সুলতানা মায়া রাজশাহীর একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি এনসিপিতে পদ পাওয়ার পর তার কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদের শপথ গ্রহণের দিন এসব ছবি তৎকালীন সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং তার স্ত্রী শাহীন আক্তার রেনীর সঙ্গে তোলা হয়েছিল। ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে এসব ছবি পোস্ট করে তাকে ‘আওয়ামী দোসর’ বলা হয়।

অভিযোগপত্রে মায়া বলেছিলেন, ‘আমি আগে কখনও কোনও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। কিন্তু আমার নামে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, নোংরা কমেন্ট করা হয়েছে সেখানে আমি নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও দলীয়ভাবে কোনও সমর্থন ও সহযোগিতা পাইনি। আমি সামাজিক ও ব্যবসায়িক সকল ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’

তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপির জেলা ও উপজেলা কমিটি নিয়ন্ত্রণ করছে মহানগর কমিটি। অভিযোগে লেখেন, ‘জেলার সকল উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল কাজ মহানগর কমিটি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং যারা জেলা কমিটিতে আছি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনও ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। প্রশাসনিকভাবে কোনোই সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি না। রাজশাহীতে একপক্ষ এনসিপিকে পক্ষভূত করার অপচেষ্টা করছে এবং সকল ক্ষেত্রে আমাদেরকে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে অপমান অপদস্থ করছে।’

এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছিলেন মায়া। এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন। পদত্যাগপত্রে মায়া বলেছেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে আমি উপলব্ধি করেছি এই পদে থেকে আমার নীতিগত অবস্থান অটুট রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। যেসব ঘটনা ঘটছে এবং যেভাবে সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমার ব্যক্তিগত আদর্শ ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে।’

গত ১৮ জুন এনসিপির জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ জুন অভিযোগ ওঠে, জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজু আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ফিরোজ আলমকে লাথি মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। পরদিন জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। এদিকে ফিরোজ আলমকে লাথি মারার ঘটনায় নাহিদুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও পরে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মায়ার পদত্যাগের বিষয়ে কথা বলতে নাহিদুল ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী জেলা কমিটিকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘জেলা কমিটির মায়া, ফিরোজ আলম ও সাইফুল ইসলাম নামের তিন জনের বিরুদ্ধে আওয়ামী সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। তাই দুই দিন আগে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এদের দল থেকে না সরালে জেলা ও মহানগরের অন্য সবাই আমরা একযোগে পদত্যাগ করবো। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হবে। অভিযোগ লেখা হচ্ছে। এটি জানতে পেরে মায়া আগাম পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

অভিযোগ তুলে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করলেন শামীমা

আপডেট সময়ঃ ০৩:৩২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিত অভিযোগ করে কোনও প্রতিকার না পেয়ে পদত্যাগ করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শামীমা সুলতানা মায়া। দলের প্রধানের কাছে দেওয়া এই পদত্যাগপত্রে তিনি বলেছেন, ‘আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না কিংবা কোনও সরাসরি অভিযোগ তুলতে চাই না। তবে সত্য হলো আমি আমার বিবেক, সততা এবং নীতিকে কোনোভাবেই বিসর্জন দিতে চাই না।’

দলীয় প্রধানের কাছে পাঠানো এ পদত্যাগপত্র মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে সাংবাদিকদের পড়ে শোনান শামীমা সুলতানা মায়া। গত আগস্টে তিনি বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরে দলীয় প্রধানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তবে এর কোনও প্রতিকার পাননি বলে পদত্যাগের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

শামীমা সুলতানা মায়া রাজশাহীর একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি এনসিপিতে পদ পাওয়ার পর তার কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদের শপথ গ্রহণের দিন এসব ছবি তৎকালীন সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এবং তার স্ত্রী শাহীন আক্তার রেনীর সঙ্গে তোলা হয়েছিল। ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে এসব ছবি পোস্ট করে তাকে ‘আওয়ামী দোসর’ বলা হয়।

অভিযোগপত্রে মায়া বলেছিলেন, ‘আমি আগে কখনও কোনও দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। কিন্তু আমার নামে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, নোংরা কমেন্ট করা হয়েছে সেখানে আমি নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও দলীয়ভাবে কোনও সমর্থন ও সহযোগিতা পাইনি। আমি সামাজিক ও ব্যবসায়িক সকল ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’

তিনি অভিযোগ করেন, এনসিপির জেলা ও উপজেলা কমিটি নিয়ন্ত্রণ করছে মহানগর কমিটি। অভিযোগে লেখেন, ‘জেলার সকল উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সকল কাজ মহানগর কমিটি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং যারা জেলা কমিটিতে আছি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনও ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। প্রশাসনিকভাবে কোনোই সাহায্য সহযোগিতা পাচ্ছি না। রাজশাহীতে একপক্ষ এনসিপিকে পক্ষভূত করার অপচেষ্টা করছে এবং সকল ক্ষেত্রে আমাদেরকে কাজ করতে বাধা দিচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে অপমান অপদস্থ করছে।’

এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছিলেন মায়া। এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন। পদত্যাগপত্রে মায়া বলেছেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা এবং নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে আমি উপলব্ধি করেছি এই পদে থেকে আমার নীতিগত অবস্থান অটুট রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। যেসব ঘটনা ঘটছে এবং যেভাবে সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমার ব্যক্তিগত আদর্শ ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে।’

গত ১৮ জুন এনসিপির জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ জুন অভিযোগ ওঠে, জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজু আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ফিরোজ আলমকে লাথি মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। পরদিন জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। এদিকে ফিরোজ আলমকে লাথি মারার ঘটনায় নাহিদুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও পরে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মায়ার পদত্যাগের বিষয়ে কথা বলতে নাহিদুল ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী জেলা কমিটিকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘জেলা কমিটির মায়া, ফিরোজ আলম ও সাইফুল ইসলাম নামের তিন জনের বিরুদ্ধে আওয়ামী সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। তাই দুই দিন আগে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এদের দল থেকে না সরালে জেলা ও মহানগরের অন্য সবাই আমরা একযোগে পদত্যাগ করবো। তাদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হবে। অভিযোগ লেখা হচ্ছে। এটি জানতে পেরে মায়া আগাম পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।’