ঢাকা, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫ | ই-পেপার

আগামী নির্বাচনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই : নাহিদ

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০৬:০১:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

আগামী সংসদ নির্বাচনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই মুহূর্তে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। আমরা বিচার বিভাগকে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জায়গায় টেনে আনতে চাই না। এর নানা ক্ষতিকর দিক আমরা অতীতে দেখেছি।’

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এটা ঐক্যমত কমিশনের বিষয় যেহেতু, এটা গণভোটে গেলেই চূড়ান্ত হবে। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনেই আমাদের নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।’

নাহিদ বলেন, ‘তবে এই সরকারের কিছু সমালোচনা এসেছে। আমাদের জায়গা থেকেও বলেছি। কিছু উপদেষ্টাদের বিষয়েও কথা এসেছে। এটা যথাযথভাবেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অ্যাড্রেস করা উচিত। সরকারের সেই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা উচিত। এজন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো রদবদলের প্রয়োজন হলে সরকার করতে পারে।’

এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘শাপলা না দেওয়ার বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের একটা স্বেচ্ছাচারিতা। কারণ, নির্বাচন কমিশন যদি কোনো ধরনের ব্যাখা ছাড়া একটা বিষয় চাপিয়ে দিতে চায়, আমরা ধরে নেবো নির্বাচন কমিশন অন্য কোনো শক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়, ন্যায়বিচার করতে সক্ষম নয়, নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না, গায়ের জোরে পরিচালিত হচ্ছে। তখন জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হবে। যদি আমাদের সাংবিধানিক ব্যাখা দেওয়া হয়, আমরা অন্য যে কোনো প্রতীক নিতে প্রস্তুত আছি। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা কোনো বাধা নেই।’

এনসিপি যাতে নির্বাচনমুখী কার্যক্রম করতে না পারে, সেই উদ্দেশ্য থেকেই শাপলা প্রতীক নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে অভিযোগ করে নাহিদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কোনো রাজনৈতিক শক্তি এটা করছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের অভিযোগ নতুন নয়। আমরা কিন্তু কমিশন গঠনের শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলাম, এই গঠনটা কোন আইনের ভিত্তিতে হলো।’

নাহিদ বলেন, ‘এখন প্রতীক ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে আমাদের নির্বাচন করতে দেবে না, তখন এটাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের নির্বাচন কার্যক্রম থামিয়ে রাখিনি। আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাই চলছে। খুব শিগগিরই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করব। আমরা চাই, আগামী সংসদে তরুণদের ভয়েস থাকবে। পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য মানুষ, যারা সমাজ পরিবর্তনে কাজ করতে চায়, সেই ধরনের মানুষগুলোকে আমরা উঠিয়ে আনতে চায়। প্রবাসীদের সমন্বয়ে নারী ও সংখ্যালঘুদের সমন্বয়ে প্রার্থী তালিকা করতে চাই।’

এনসিপি এখনও পর্যন্ত কোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘যদি আমাদের জোটে যেতে হয়, তা অবশ্যই একটা নীতিগত জায়গা থেকে আসবে। জুলাই সনদ বা সংস্কার বিষয়ে কারা বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের সহযোগিতা করছে, সেই জায়গা থেকে জোটের বিষয়ে চিন্তা করতে পারি। যদি সংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় বা যাদের ইতিহাসের অনেক দায়ভার আছে, তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকবার ভাবতে হবে। কারণ, জনগণের অনেক প্রত্যাশা আমাদের কাছে। আমরা নিজেদের শক্তিতেই দাঁড়াতে চাই।’

বাস্তবায়নের রূপরেখা ছাড়া জুলাই সনদ কেবলই আনুষ্ঠানিকতা বলে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, ‘জুলাই সনদ যেদিন স্বাক্ষর হয়, সেদিনই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে নিশ্চিত হবে, সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এটি কেবলই একটা আনুষ্ঠানিকতা। কাগজের সাইন, যার মূল্য কেবলই কাগজে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে এ রকম ত্রিদলীয় রূপরেখা দেখেছিলাম, যেটা জনগণকে লোক দেখানো এবং ক্ষমতায় যাওয়ার পরে ভুলে যাওয়া। এই ভুল আমরা করবো না। তবে আমরা বলেছি, আমরা স্বাক্ষর করতে চাই। এই সংস্কারের পুরো অগ্রযাত্রাতেই আমরা ছিলাম। অবশ্যই আমরা সংস্কার চাই। স্বাক্ষর করার জন্যই আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা বলেছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে আমরা সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় দেখতে চাই। একটি হচ্ছে, নোট অব ডিসেন্ট বলে কোনো কিছু থাকবে না। যে সমস্ত বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে অথবা ঐক্যমত কমিশন সংবিধান সংস্কারের জন্য যে সমস্ত বিষয়কে লিপিবদ্ধ করেছে, সেই বিষয়গুলো গণভোটে যাবে এবং জনগণ রায় দেবে সেই বিষয়গুলো পরিবর্তিত হবে কি না।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেই ঘোষণা করতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ অনুমোদিত হবে এবং এই আদেশটা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। এই আদেশের বা সংস্কারের ভিত্তিটা হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে এই ধরনের সাংবিধানিক আদেশ দেওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এই আদেশ দিতে পারেন না। সেটা বৈধ হবে না, জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বৈধতার জায়গা থেকে এই আদেশটি জারি করবেন। পরবর্তীতে যে সংসদ হবে সেখানে একটা সংস্কার পরিষদ হওয়ার কথা, সেখানে এই সকল পরিবর্তিত বিষয়গুলো সন্নিবিশিত হবে। এগুলো যখন নিশ্চিত হবে, সেখানে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করবো।’

নাহিদ বলেন, ‘আমরা বলেছি, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যেন নির্বাচন হয়। এজন্য সব পক্ষকেই কাজ করতে হবে। পতিত শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। যদি ক্ষমতার লোভে কোনো দল কিংবা কোনো শক্তি যদি মনে করে তারা এককভাবেই সবকিছু করবে বা এই জাতীয় ঐক্য ভেঙে দেবে বা জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়াবে, তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। তারা সংসদ টেকাতে পারবে না। সংসদ টেকাতে তাদের কষ্ট হবে এবং জনগণের আস্থা তারা পাবে না। তাই সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান করবো, সংস্কারের পক্ষে থাকার।’

তবে নির্বাচনের পক্ষে বিচার প্রক্রিয়ার রোডম্যাপ দিতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অবশ্যই বিচারের রোডম্যাপ দিতে হবে। সারাদেশে যে আট শতাধিক মামলা আছে সেগুলোর কী হবে তা জানাতে হবে। ট্রাইব্যুনালে যে গুমের মামলা চলমান আছে, সেটি যেন অব্যাহত থাকে। ট্রাইব্যুনালের সব কার্যক্রম যাতে পরবর্তী সরকারের সময়েও চলমান থাকে, এই ধরনের প্রতিশ্রুতি সব রাজনৈতিক দল ও সরকারের পক্ষ থেকে থাকতে হবে।’

জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দলের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাই। এটা একটা মীমাংসিত বিষয় ছিল। পিআর ছাড়া উচ্চকক্ষের তো কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই। নিম্নকক্ষে পিআর নিয়ে আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন সামগ্রিক ঐক্যমত কমিশনের আলাপটাকে ডাইভার্ট করেছে, মনোযোগটা অন্যদিকে সরিয়েছে। যে সমস্ত দল এই আন্দোলনে ছিল, আমরা তাদের আহ্বান করেছি সেটা থেকে সরে এসে সত্যিকার যে সংস্কার প্রয়োজন সেটির ব্যাপারে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক শক্তি নয়। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে বিচারের প্রক্রিয়ায় আছে ট্রাইব্যুনালে। আওয়ামী লীগ কোনোদিনই নির্বাচনে বিশ্বাস করেনি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। শেখ মুজিবের আমল থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত তারা বার বার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক কোনো দল নয়।’

তিনি বলেন, ‘তারা চেষ্টাই করবে নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে। নির্বাচন যাতে না হয়, বাংলাদেশে যেন স্থিতিশীলতা না হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তিও চেষ্টা করবে। তাই ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা যে কোনে প্রকার ছাড় দিতে প্রস্তুত আছি। কারণ, আমরা মনে করি আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা গেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ এখনও নানাভাবে রয়ে গেছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনীতি এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ আছে। আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদী শ্রেণি রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পর্যন্ত জামিন পেয়ে নানা জায়গায় তাণ্ডব চালাচ্ছে।’

জাতীয় পার্টির বিচার দাবি করে নাহিদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে বলছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া নাকি নির্বাচন হবে না। এই সাহস তারা কীভাবে পায়! সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের সকল গুম-খুনকে বৈধতা দিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমরা মনে করি না তারা গণতন্ত্রের পক্ষের কোনো দল। তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত এবং এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।’

এসময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসিফ নেহাল, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আগামী নির্বাচনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই : নাহিদ

আপডেট সময়ঃ ০৬:০১:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

আগামী সংসদ নির্বাচনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই বলে মনে করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই মুহূর্তে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই। আমরা বিচার বিভাগকে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জায়গায় টেনে আনতে চাই না। এর নানা ক্ষতিকর দিক আমরা অতীতে দেখেছি।’

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এটা ঐক্যমত কমিশনের বিষয় যেহেতু, এটা গণভোটে গেলেই চূড়ান্ত হবে। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনার সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনেই আমাদের নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।’

নাহিদ বলেন, ‘তবে এই সরকারের কিছু সমালোচনা এসেছে। আমাদের জায়গা থেকেও বলেছি। কিছু উপদেষ্টাদের বিষয়েও কথা এসেছে। এটা যথাযথভাবেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অ্যাড্রেস করা উচিত। সরকারের সেই নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা উচিত। এজন্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো রদবদলের প্রয়োজন হলে সরকার করতে পারে।’

এনসিপিকে শাপলা প্রতীক না দেওয়া প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘শাপলা না দেওয়ার বিষয়টা নির্বাচন কমিশনের একটা স্বেচ্ছাচারিতা। কারণ, নির্বাচন কমিশন যদি কোনো ধরনের ব্যাখা ছাড়া একটা বিষয় চাপিয়ে দিতে চায়, আমরা ধরে নেবো নির্বাচন কমিশন অন্য কোনো শক্তির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, এই নির্বাচন কমিশন স্বাধীন নয়, ন্যায়বিচার করতে সক্ষম নয়, নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে না, গায়ের জোরে পরিচালিত হচ্ছে। তখন জনগণের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হবে। যদি আমাদের সাংবিধানিক ব্যাখা দেওয়া হয়, আমরা অন্য যে কোনো প্রতীক নিতে প্রস্তুত আছি। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা কোনো বাধা নেই।’

এনসিপি যাতে নির্বাচনমুখী কার্যক্রম করতে না পারে, সেই উদ্দেশ্য থেকেই শাপলা প্রতীক নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে অভিযোগ করে নাহিদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কোনো রাজনৈতিক শক্তি এটা করছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের অভিযোগ নতুন নয়। আমরা কিন্তু কমিশন গঠনের শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলাম, এই গঠনটা কোন আইনের ভিত্তিতে হলো।’

নাহিদ বলেন, ‘এখন প্রতীক ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে আমাদের নির্বাচন করতে দেবে না, তখন এটাকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। আমাদের নির্বাচন কার্যক্রম থামিয়ে রাখিনি। আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাই চলছে। খুব শিগগিরই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করব। আমরা চাই, আগামী সংসদে তরুণদের ভয়েস থাকবে। পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য মানুষ, যারা সমাজ পরিবর্তনে কাজ করতে চায়, সেই ধরনের মানুষগুলোকে আমরা উঠিয়ে আনতে চায়। প্রবাসীদের সমন্বয়ে নারী ও সংখ্যালঘুদের সমন্বয়ে প্রার্থী তালিকা করতে চাই।’

এনসিপি এখনও পর্যন্ত কোনো জোটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘যদি আমাদের জোটে যেতে হয়, তা অবশ্যই একটা নীতিগত জায়গা থেকে আসবে। জুলাই সনদ বা সংস্কার বিষয়ে কারা বাংলাদেশের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে, আমাদের সহযোগিতা করছে, সেই জায়গা থেকে জোটের বিষয়ে চিন্তা করতে পারি। যদি সংস্কারের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় বা যাদের ইতিহাসের অনেক দায়ভার আছে, তাদের সঙ্গে জোটে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকবার ভাবতে হবে। কারণ, জনগণের অনেক প্রত্যাশা আমাদের কাছে। আমরা নিজেদের শক্তিতেই দাঁড়াতে চাই।’

বাস্তবায়নের রূপরেখা ছাড়া জুলাই সনদ কেবলই আনুষ্ঠানিকতা বলে মন্তব্য করে নাহিদ বলেন, ‘জুলাই সনদ যেদিন স্বাক্ষর হয়, সেদিনই আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কীভাবে নিশ্চিত হবে, সেটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এটি কেবলই একটা আনুষ্ঠানিকতা। কাগজের সাইন, যার মূল্য কেবলই কাগজে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরে এ রকম ত্রিদলীয় রূপরেখা দেখেছিলাম, যেটা জনগণকে লোক দেখানো এবং ক্ষমতায় যাওয়ার পরে ভুলে যাওয়া। এই ভুল আমরা করবো না। তবে আমরা বলেছি, আমরা স্বাক্ষর করতে চাই। এই সংস্কারের পুরো অগ্রযাত্রাতেই আমরা ছিলাম। অবশ্যই আমরা সংস্কার চাই। স্বাক্ষর করার জন্যই আমরা অপেক্ষা করছি। আমরা বলেছি, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে আমরা সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয় দেখতে চাই। একটি হচ্ছে, নোট অব ডিসেন্ট বলে কোনো কিছু থাকবে না। যে সমস্ত বিষয়ে ঐক্যমত হয়েছে অথবা ঐক্যমত কমিশন সংবিধান সংস্কারের জন্য যে সমস্ত বিষয়কে লিপিবদ্ধ করেছে, সেই বিষয়গুলো গণভোটে যাবে এবং জনগণ রায় দেবে সেই বিষয়গুলো পরিবর্তিত হবে কি না।’

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেই ঘোষণা করতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ অনুমোদিত হবে এবং এই আদেশটা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। এই আদেশের বা সংস্কারের ভিত্তিটা হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান। বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে এই ধরনের সাংবিধানিক আদেশ দেওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান প্রেসিডেন্ট এই আদেশ দিতে পারেন না। সেটা বৈধ হবে না, জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। ড. মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বৈধতার জায়গা থেকে এই আদেশটি জারি করবেন। পরবর্তীতে যে সংসদ হবে সেখানে একটা সংস্কার পরিষদ হওয়ার কথা, সেখানে এই সকল পরিবর্তিত বিষয়গুলো সন্নিবিশিত হবে। এগুলো যখন নিশ্চিত হবে, সেখানে আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে স্বাক্ষর করবো।’

নাহিদ বলেন, ‘আমরা বলেছি, ফেব্রুয়ারির মধ্যেই যেন নির্বাচন হয়। এজন্য সব পক্ষকেই কাজ করতে হবে। পতিত শক্তি নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। যদি ক্ষমতার লোভে কোনো দল কিংবা কোনো শক্তি যদি মনে করে তারা এককভাবেই সবকিছু করবে বা এই জাতীয় ঐক্য ভেঙে দেবে বা জনগণের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে দাঁড়াবে, তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। তারা সংসদ টেকাতে পারবে না। সংসদ টেকাতে তাদের কষ্ট হবে এবং জনগণের আস্থা তারা পাবে না। তাই সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান করবো, সংস্কারের পক্ষে থাকার।’

তবে নির্বাচনের পক্ষে বিচার প্রক্রিয়ার রোডম্যাপ দিতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘নির্বাচনের আগে অবশ্যই বিচারের রোডম্যাপ দিতে হবে। সারাদেশে যে আট শতাধিক মামলা আছে সেগুলোর কী হবে তা জানাতে হবে। ট্রাইব্যুনালে যে গুমের মামলা চলমান আছে, সেটি যেন অব্যাহত থাকে। ট্রাইব্যুনালের সব কার্যক্রম যাতে পরবর্তী সরকারের সময়েও চলমান থাকে, এই ধরনের প্রতিশ্রুতি সব রাজনৈতিক দল ও সরকারের পক্ষ থেকে থাকতে হবে।’

জামায়াতে ইসলামীসহ কিছু দলের পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা উচ্চকক্ষে পিআর চাই। এটা একটা মীমাংসিত বিষয় ছিল। পিআর ছাড়া উচ্চকক্ষের তো কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই। নিম্নকক্ষে পিআর নিয়ে আন্দোলনের কোনো প্রয়োজন ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন সামগ্রিক ঐক্যমত কমিশনের আলাপটাকে ডাইভার্ট করেছে, মনোযোগটা অন্যদিকে সরিয়েছে। যে সমস্ত দল এই আন্দোলনে ছিল, আমরা তাদের আহ্বান করেছি সেটা থেকে সরে এসে সত্যিকার যে সংস্কার প্রয়োজন সেটির ব্যাপারে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থাকি।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক শক্তি নয়। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে বিচারের প্রক্রিয়ায় আছে ট্রাইব্যুনালে। আওয়ামী লীগ কোনোদিনই নির্বাচনে বিশ্বাস করেনি, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। শেখ মুজিবের আমল থেকে শেখ হাসিনা পর্যন্ত তারা বার বার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক কোনো দল নয়।’

তিনি বলেন, ‘তারা চেষ্টাই করবে নির্বাচনকে ভণ্ডুল করতে। নির্বাচন যাতে না হয়, বাংলাদেশে যেন স্থিতিশীলতা না হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তিও চেষ্টা করবে। তাই ফ্যাসিবাদের প্রশ্নে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা যে কোনে প্রকার ছাড় দিতে প্রস্তুত আছি। কারণ, আমরা মনে করি আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করা গেছে, কিন্তু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ এখনও নানাভাবে রয়ে গেছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনীতি এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ আছে। আওয়ামী লীগের সুবিধাবাদী শ্রেণি রয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পর্যন্ত জামিন পেয়ে নানা জায়গায় তাণ্ডব চালাচ্ছে।’

জাতীয় পার্টির বিচার দাবি করে নাহিদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করছে। জাতীয় পার্টি প্রকাশ্যে বলছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া নাকি নির্বাচন হবে না। এই সাহস তারা কীভাবে পায়! সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের সকল গুম-খুনকে বৈধতা দিয়েছে। তারা আওয়ামী লীগের পাতানো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আমরা মনে করি না তারা গণতন্ত্রের পক্ষের কোনো দল। তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত এবং এটা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব।’

এসময় এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব নাহিদা সারোয়ার নিভা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক হান্নান মাসউদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আসিফ নেহাল, রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমনসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।