‘আমি আর এসবের মধ্যে নেই’- ক্ষমা চাইলেন আমির হামজা, সতর্ক করল জামায়াত

- আপডেট সময়ঃ ০৫:১০:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৮ বার পড়া হয়েছে
দেশের আলোচিত ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজার বিতর্কিত বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের পক্ষ থেকে মুফতি হামজাকে রাজনৈতিক কোনো বিতর্কিত বিষয়ে বক্তব্য না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। মুফতি আমির হামজা ঢাকা মেইলের কাছে এ কথা স্বীকার করেছেন।
তিনি বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে রোববার বেলা ১২টার দিকে এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, সংগঠন থেকে বিতর্কিত কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য দায়িত্বশীলরা আমাকে বলেছেন। দুজন কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল জানিয়েছেন- মাহফিলে কোনো বক্তব্য দেওয়ার সময় আমি যেন সতর্ক হই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোরআনের তাফসিরের বাইরে আর কিছু বলব না। কোনো বিষয়ে তুলনা করে কথা বলতে গেলেই প্যাঁচ লেগে যায়। আমি আর এসবের মধ্যে নেই।
তরুণ এই ওয়ায়েজিন আরও বলেন, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলে আযান দেওয়া নিয়ে আমার বক্তব্যের সমালোচনা হচ্ছে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের নাম বলতে গিয়ে মুহসিন হলের নাম বলে ফেলেছি। এটা মুখ ফসকে হয়ে গেছে। আমি এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। মুহসিন হলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের জামানায় অনেক জুলুম অত্যাচার হয়েছে। বাথরুমে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করার ঘটনা ছাত্রদের কাছে শুনেছি। এমন তো না সেখানে কোনো জুলুম হয়নি। কিন্তু আমার এভাবে বলা উচিত হয়নি। আগামীতে সতর্ক থাকব। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে মদের বোতল প্রসঙ্গে আমার কথা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। আমি তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছিলাম। ওই ক্যাম্পাসে কি হতো সবাই জানে। আমি কি অপরাধ করলাম। এখন বলেছে মদের বোতলে পানি খায়। আমি কি জানি! যদি তাই হয় আমি দুঃখিত। আমি এসব নিয়ে আর কিছুই বলব না।
ওয়াজ করতে গেলে নানা বিষয়ে তুলনা করে আমরা কথা বলি। এতে ভুল হয়। আওয়ামী লীগের আমলে আমি জেলখানায় ছিলাম। জেলখানায় আমার ওপর অত্যাচার হয়েছে। আমি এখনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ নই। কথা বলতে গেলে ভুল হয়ে যায়। এখন থেকে সতর্ক থাকব।
রাশমিকা মান্দানাকে নিয়ে দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে মুফতি আমির হামজা বলেন, মা হাওয়ার সৌন্দর্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে আমি একথা বলেছিলাম। এ জন্য আমি মাফ চেয়েছি। আর কোনোদিন এসব কথা বলব না। কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।
আমির হামজা বলেন, ওয়াজ করতে গেলে নানা বিষয়ে তুলনা করে আমরা কথা বলি। এতে ভুল হয়। আওয়ামী লীগের আমলে আমি জেলখানায় ছিলাম। জেলখানায় আমার ওপর অত্যাচার হয়েছে। আমি এখনো শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ নই। কথা বলতে গেলে ভুল হয়ে যায়। এখন থেকে সতর্ক থাকব।
দেশের আলোচিত ইসলামী বক্তা মুফতি আমির হামজার বাড়ি কুষ্টিয়ায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আল কুরআন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন তিনি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি তার বেশ কিছু বক্তব্য নিয়ে তুমুল বিতর্ক দেখা দেয়।
এক মাহফিলে ‘গত ১৬ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলে আজান দিতে দেওয়া হয়নি’ এ দাবি করে বক্তব্য দেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ওয়াজ মাহফিলে মুফতি আমির হামজার দেওয়া সে বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায় আমির হামজা বলছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে ১৬ বছর আজান দিতে দেয়নি জালেমরা। ছাত্রলীগের ভাইদের ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বলে ফজরের আজান দিতে দিত না। এবার ডাকসুতে শিবির প্যানেল জয়ী হওয়ার পর পরদিনই আজান আরম্ভ হয়েছে, আল্লাহু আকবার।’
সেই বক্তব্যের পর থেকেই বিভিন্ন মহলে সমালোচনা চলছে। বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছে ছাত্রদল। এমনকি ছাত্রশিবিরের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীরাও তার সমালোচনা করেছেন। আমির হামজার বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন আপ বাংলাদেশের সংগঠক ও ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি রাফে সালমান রিফাত। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে মুফতি আমির হামজার উদ্ভট, অসত্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
এর আগে ভারতের আলোচিত দক্ষিণী অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানাকে নিয়ে তার বক্তব্য ঘিরে তুমুল সমালোচনা হয়। তিনি বলেন, এখন বিশ্বে যত সুন্দর মানুষ আছে, আপনারা ইন্টারনেট ঘাঁটবেন-১৫৭ রাষ্ট্রের মধ্যে চেহারার কাটিংয়ে ১ নম্বরে রয়েছেন রাশমিকা মান্দানা। নাম শুনেছেন? চেহারার কাটিংয়ে এখন ১ নম্বরে আছেন। এই মহিলার দিকে একটু আল্লাহর নাম নিয়ে তাকাবেন। দেখেন তো কী সুন্দর করে আল্লাহ তাকে বানিয়েছেন। এর চেয়ে শতগুণে সুন্দর ছিল আমাদের আদি মাতা হাওয়া (আ.)।
তার এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে এটা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় সমালোচনা। তবে এই বক্তব্যের জন্য এক পর্যায়ে ক্ষমা চান আমির হামজা।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি জাহাঙ্গীরনগরে প্রথম ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি, সকাল বেলা কুলি করছেন মদ দিয়ে। ছাত্র পেটাচ্ছে শিক্ষককে।’
এছাড়াও গত বছরের অক্টোবর মাসে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় সিরাত মাহফিলে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিতর্কে জড়ান তিনি। সেখানে তিনি দাবি করেন, ‘জুলাই আন্দোলনে ১৫৭ জনের সমন্বয়কের ১০৭ জনই শিবিরের।’ তার এই বক্তব্যে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন শিবির নেতারাও।
তবে এ বিষয়ে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ ও জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মুহাম্মাদ খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, ‘ইসলাম বিতর্ক আদৌ পছন্দ করে না। ময়দানে বিশৃঙ্খলা হয় এমন বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়। তিনি যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা মোটেও কাম্য নয়। এসব বিষয়ে আমরা তাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। এর আগে তিনি ক্ষমাও চেয়েছেন। আমরা সাংগঠনিকভাবে বিষয়গুলো দেখছি।’
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আড়াই বছর কারা নির্যাতনের শিকার হন মুফতি আমির হামজা। ২০২১ সালের ২৪ মে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের ডাবিরাভিটা এলাকার গ্রামের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটিটিসির একটি দল। পরের দিন তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ৯২৫ দিন কারাগারে থাকার পর ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর কারামুক্ত হন তিনি।