ইসরায়েলের হামলায় গাজায় নিহত ৫৩, ধ্বংস বহু ভবন

- আপডেট সময়ঃ ০২:১৮:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৭ বার পড়া হয়েছে
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নতুন অভিযানে একদিনে আরও অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছেন। গাজা সিটিতে বোমাবর্ষণে ধসে পড়েছে একাধিক ভবন, যার মধ্যে আবাসিক টাওয়ারও রয়েছে। এদিকে হামলা শুরুর পর থেকে ক্ষুধায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪২২ জনে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, রোববার নিহতদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা। এছাড়া অপুষ্টিতে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। হামলায় গাজা সিটির ১৬টি ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এর মধ্যে তিনটি আবাসিক টাওয়ারও ছিল।
গাজা সিটির রেমাল এলাকার আল-কাওসার টাওয়ারে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ভবনটি ধ্বংস হয়ে যায়। অব্যাহত বোমাবর্ষণে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। এক ফিলিস্তিনি মারওয়ান আল-সাফি বলেন, আমরা জানি না কোথায় যাব। সমাধান দরকার… আমরা এখানে মরছি।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের পদ্ধতিগত বোমাবর্ষণকে গণহত্যা ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির কৌশল বলে নিন্দা জানিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল দাবি করছে তারা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তারা “স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শহর ও আবাসিক ভবন, তাঁবু এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থার দপ্তর” ধ্বংস করছে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) প্রধান ফিলিপ লাজারিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, গত চার দিনে গাজা সিটিতে তাদের অন্তত ১০টি ভবন ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি স্কুল ও দুটি ক্লিনিক ছিল, যেখানে হাজারো বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। তিনি বলেন, গাজায় কোনো জায়গাই নিরাপদ নয়। কেউ নিরাপদ নয়।
অবিরাম হামলায় হাজারো পরিবার দক্ষিণের আল-মাওয়াসির দিকে পালাচ্ছে। ইসরায়েল একে “নিরাপদ অঞ্চল” দাবি করলেও সেখানেও হামলার ঘটনা ঘটছে। পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিরা জানাচ্ছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে পানির ঘাটতি, খাবারের অভাব, শৌচাগারের সংকট—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। অনেক পরিবার খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে।
আরেকজন ফিলিস্তিনি আবেদআল্লাহ আরাম জানান, তার পরিবার তীব্র পানির সংকটে আছে। খাবার অপ্রতুল, শিশুরা অপুষ্টিতে ভুগছে। শীত আসছে, নতুন তাঁবুর জরুরি প্রয়োজন। এই এলাকায় আর বেশি মানুষ রাখা সম্ভব নয়।
আরেকজন বলেন, এক সপ্তাহ আগে আসার পরও তিনি আশ্রয় পাননি। আমার বড় পরিবার আছে— শিশু, মা, দাদীসহ। শুধু বোমা নয়, ক্ষুধাও আমাদের গ্রাস করছে। দুই বছর ধরে আমরা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পালাচ্ছি। এই গণহত্যামূলক যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কোনো আয় নেই, বাচ্চাদের খাওয়ানোর মতো কিছু নেই। বাস্তুচ্যুত হওয়া মানে যেন প্রাণটা শরীর থেকে টেনে বের করে নেওয়া।
জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) সতর্ক করেছে, আল-মাওয়াসির পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। সংস্থার মুখপাত্র টেস ইঙ্গ্রাম বলেন, গাজায় কোথাও নিরাপদ নয়, এমনকি কথিত মানবিক অঞ্চলও নয়। তিনি জানান, শরণার্থী শিবিরে জনসংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, ন্যূনতম চাহিদা মেটানোও কঠিন হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, এক নারীকে গাজা সিটি থেকে উচ্ছেদের পর রাস্তায় সন্তান জন্ম দিতে হয়েছে। এরকম হাজারো পরিবার এখন টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।