ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

ঈদযাত্রায় যানজট নিরসনে দেশের ৪৬ পয়েন্টে কাজ করছে বিআরটিএ

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ১১:০৪:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩
  • / ১২৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঈদযাত্রা সাবলীল করতে ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএর) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, কোথাও যেন কোনো রকম যানজট তৈরি না হয় সেজন্য ৪৬ পয়েন্ট (যানজটপ্রবণ স্থান) নির্ধারণ করেছি। এই ৪৬ পয়েন্টে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা রাত-দিন কাজ করছেন। পাশাপাশি ঢাকা শহরের ২০ পয়েন্ট চিহ্নিত করেছি, যেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। আমরা চাই কোনোভাবেই যেন সাধারণ মানুষের ঈদযাত্রা ব্যাহত না হয়। আজ বুধবার মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ঈদযাত্রা যাতে স্বস্তিদায়ক হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। ঈদযাত্রা সাবলীল রাখতে প্রধানমন্ত্রী নিজে মনিটরিং করছেন। এছাড়াও বিআরটিএ’র ভিজিলেন্স টিম ও মনিটরিং টিম বাস কাউন্টারে কাজ করছে। পাশাপাশি স্পেশাল মোবাইল কোর্ট টিম কাজ করছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে কাজ করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তিনি বলেন, আমরা ১৫ দিন আগে থেকেই বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে সব কর্মচারী-কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। আমরা টার্মিনাল ভিত্তিক ভিজিলেন্স টিম বা মনিটরিং টিম গঠন করেছি। যেন যাত্রীদের থেকে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে। মহাখালী বাস টার্মিনালের শৃঙ্খলা রক্ষায় বিআরটিএ’র ভিজিলেন্স টিমকে কাজ করতে দেখা যায়। মহাখালী বাস টার্মিনালে কর্তব্যরতরা জানান, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকেই তারা কাজ শুরু করেছেন। কেউ অভিযোগ দিলেই ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে তা খতিয়ে দেখছেন।
রাজধানীর যানজট কেড়ে নিচ্ছে ঈদযাত্রার স্বস্তি: টানা ছুটি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বাড়ি ফিরছে মানুষ। স্বস্তির যাত্রার প্রত্যাশায় বাসা থেকে বের হলেও অনেকক্ষেত্রে তা ম্লান হচ্ছে নিমিষেই। রাজধানীর যানজটে তৈরি হচ্ছে গাড়ির জটলা। ফলে সময়মতো কাউন্টারে গাড়ি পৌঁছাতে না পারায় হচ্ছে শিডিউল বিপর্যয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ধোলাইপাড় ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টারগুলোর সামনে দীর্ঘ যানজট। কোনো কোনো গাড়ি সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে। এতে যানজট আরও দীর্ঘ হচ্ছে। পুলিশ বলছে, ঈদযাত্রার কারণে গাড়ির চাপ অনেক বেশি। এছাড়াও সড়কে সংস্কার কাজের জন্য টার্মিনালে গাড়ি দাঁড়াতে না পারায় তৈরি হচ্ছে জটলা। তবে দ্রুত তা সমাধানের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এসব এলাকার সড়কের শৃঙ্খলায় সায়েদাবাদে কন্ট্রোল রুম বসিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। সেখান থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ারী জোনের ডিসি (ট্রাফিক) মো. নাজির আহমেদ খান বলেন, গাড়ির অনেক চাপ আছে। পাশাপাশি সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সংস্কার কাজ চলছে বিধায় গাড়ি দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ফলে অনেক বাসই মানিকনগর হয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে যাচ্ছে। আবার যেগুলো টার্মিনালের ভেতরে রাখার কথা, জায়গা না থাকায় সেসব বাস রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে। ফলে সড়কে জটলা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে অধিকাংশ বাস কাউন্টার সড়কের পাশেই। ফলে রাস্তায় দাঁড়িয়েই সেসব বাসে যাত্রী উঠানো হয়। এসব কারণেই যানজট তৈরি হচ্ছে। ওয়ারী জোনের ট্রাফিক বিভাগ সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ডিএমপি থেকেও সহায়তা পাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি। তবে বিকেলে এই জটলা কমে আসবে।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে গাড়ির চাপ: ঈদের ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরছেন কর্মজীবী নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ৩০ হাজার ২৫১টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে মোট টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৫৫০ টাকা। গতকাল বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) জানায়, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব টাঙ্গাইল অংশে ১৭ হাজার ২৫৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে ও টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ২৬ লাখ চার হাজার ৯৫০ টাকা এবং সেতু পশ্চিম সিরাজগঞ্জ অংশে ১২ হাজার ৯৯৫টি যানবাহন পারাপার হয় ও এক কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ বাড়ছে। ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৩০ হাজার ২৫১টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে মোট টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৫৫০ টাকা। ভোগান্তি রোধে সেতুর টাঙ্গাইল অংশে ১১টি এবং সিরাজগঞ্জ অংশে ৯টি টোল বুথ কাজ করছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেই ঈদযাত্রার ভোগান্তি:ধ ঈদ ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে গত মঙ্গলবার যানবাহনের ধীরগতি ছিল। তবে গতকাল বুধবার সকাল থেকে যানজট কিংবা যানবাহনের কোনো চাপ নেই। তাই যাত্রীরা নির্বিঘেœ একস্থান থেকে আরেক স্থানে চলাচল করছেন। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। সানারপাড় থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পরিবার নিয়ে শিমরাইল এলাকায় এসেছেন বিল্লাল হোসেন নামের এক চাকরিজীবী। তিনি বলেন, থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। তাই দেরি না করে আজই পরিবার নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম মহাসড়কে যানজট থাকতে পারে। কিন্তু এসে দেখি একদম ফাঁকা। আশা করছি ভোগান্তি ছাড়াই গ্রামের বাড়ি যেতে পারবো। রায়হান হোসেন পেশায় ব্যাংকার। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর গরম থাকায় সকালেই গ্রামে চলে যাচ্ছি। গ্রামে সবার সঙ্গে ঈদ পালন করতে না পারলে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে। সোলায়মান মিয়া নামের এক বাসচালক বলেন, এখনো পর্যন্ত মহাসড়কে কোথাও কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। তাই খুব তাড়াতাড়ি সায়েদাবাদ থেকে শিমরাইল এলাকায় চলে আসতে পেরেছি। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মহাসড়কের পরিস্থিতি এমন থাকলে আমাদের এবার যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) এ কে এম শরফুদ্দিন বলেন, গত মঙ্গলবার মহাসড়কে যাত্রীদের পাশাপাশি যানবাহনের চাপ থাকলেও সকালে কোনো চাপ নেই বললেই চলে। যানজট নিরসনে আমার এরিয়ার প্রতিটি পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশা করছি এবার যাত্রীরা নির্বিঘেœই তাদের গন্তব্যস্থলে যেতে পারবে।
পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বাড়লেও নেই ঈদযাত্রার ভোগান্তি: ঈদযাত্রার প্রথম দিনে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে। দূরপাল্লার বাসের তুলনায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের চাপ বেশি। অনেকটা স্বস্তি নিয়েই ফেরি পার হচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। গতকাল বুধবার সকালে পাটুরিয়া ঘাট ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ঘাটের যানজট এড়াতে ছোট গাড়িগুলোকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূর থেকে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ঘাটে পাঠানো হচ্ছে। ফেরির জন্য গাড়িকে মাত্র ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। আর মোটরসাইকেলসহ বড় গাড়ি ও যাত্রীরা ঘাটে পৌঁছেই ফেরিতে উঠতে পারছেন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা নৌ অঞ্চলের ডিজিএম খালিদ নেওয়াজ বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে গতকাল বুধবার ভোর থেকে ছোট গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাপ বেড়েছে। তবে কোনো যানজট নেই। বর্তমানে ছোট বড় ১৯টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তিনি আশা করেন, এবারও বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট পার হতে পারবেন ঘরমুখো মানুষ।
ভোগান্তিতে সায়েদাবাদ কাউন্টারের যাত্রীরা: গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, বাস কাউন্টারগুলোতে রয়েছে ঘুরমুখো মানুষের ভিড়। অনেকে টিকিট না পেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ সায়েদাবাদে গাড়ি না পেয়ে এগোচ্ছেন ধোলাইপাড়ের দিকে। বাস কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানীর কিছুকিছু জায়গায় জ্যাম রয়েছে। ফলে, গাড়ি আসতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় মানুষের সমস্যা হচ্ছে। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার স্টাফ মো. ওসমান বলেন, সায়েদাবাদে আসা গাড়িগুলো জ্যামের মুখে পড়ছে। তাই কাউন্টারে গাড়ি আসতে লেট করছে। দেখা গেছে ঢাকার বাইরে থেকে দ্রুত গাড়ি চলে এলেও সায়েদাবাদে এসে বিভিন্ন মোড়ে জ্যামে গাড়ি বসে থাকে। এতে যাত্রীদেরও ভোগান্তি হয়। ঝিনাইদহগামী যাত্রী সামসুল ইসলাম বলেন, আমি উত্তরা থেকে সায়েদাবাদে এসেছি, যাবো ঝিনাদাহ। খুব সকাল সকাল বের হয়ে এখানে এসেছি। বাড়িতে মা আছে, তাই তীব্র গরমেও বাড়ি যাচ্ছি। মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে এইটুকু কষ্ট করতেই হবে। বরিশালগামী যাত্রী সুমন মোল্লা বলেন, আমি সকালে এসেছি। কোনো কোনো গাড়িতে ভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে। তাই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। ভাড়া অন্যান্য সময় পাঁচশত টাকা হলেও এখন ৭০০/৮০০ টাকা চাইছে। সেজন্য দাঁড়িয়ে আছি, কমে পেলে গাড়িতে উঠবো। হিমাচল পরিবহনের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা আগের মতো যাত্রী পাচ্ছি না। এখন অনেক গাড়ি কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে চলে যায়। তাই যাত্রীরা সেখানে চলে যায়। সায়েদাবাদে যানজট থাকে তাই মানুষ এখন ওদিক থেকেই ফ্লাইওভার দিয়ে চলে যায়। আগের চেয়ে টিকিট বিক্রি এখন অনেক কম। এখন ঈদের সময়ও যাত্রী সেভাবে পাই না।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ঈদযাত্রায় যানজট নিরসনে দেশের ৪৬ পয়েন্টে কাজ করছে বিআরটিএ

আপডেট সময়ঃ ১১:০৪:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঈদযাত্রা সাবলীল করতে ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএর) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, কোথাও যেন কোনো রকম যানজট তৈরি না হয় সেজন্য ৪৬ পয়েন্ট (যানজটপ্রবণ স্থান) নির্ধারণ করেছি। এই ৪৬ পয়েন্টে আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা রাত-দিন কাজ করছেন। পাশাপাশি ঢাকা শহরের ২০ পয়েন্ট চিহ্নিত করেছি, যেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। আমরা চাই কোনোভাবেই যেন সাধারণ মানুষের ঈদযাত্রা ব্যাহত না হয়। আজ বুধবার মহাখালী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ঈদযাত্রা যাতে স্বস্তিদায়ক হয় সেজন্য আমরা কাজ করছি। ঈদযাত্রা সাবলীল রাখতে প্রধানমন্ত্রী নিজে মনিটরিং করছেন। এছাড়াও বিআরটিএ’র ভিজিলেন্স টিম ও মনিটরিং টিম বাস কাউন্টারে কাজ করছে। পাশাপাশি স্পেশাল মোবাইল কোর্ট টিম কাজ করছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে কাজ করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। তিনি বলেন, আমরা ১৫ দিন আগে থেকেই বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়েছি। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে সব কর্মচারী-কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। আমরা টার্মিনাল ভিত্তিক ভিজিলেন্স টিম বা মনিটরিং টিম গঠন করেছি। যেন যাত্রীদের থেকে কেউ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে। মহাখালী বাস টার্মিনালের শৃঙ্খলা রক্ষায় বিআরটিএ’র ভিজিলেন্স টিমকে কাজ করতে দেখা যায়। মহাখালী বাস টার্মিনালে কর্তব্যরতরা জানান, গত মঙ্গলবার বিকেল থেকেই তারা কাজ শুরু করেছেন। কেউ অভিযোগ দিলেই ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে তা খতিয়ে দেখছেন।
রাজধানীর যানজট কেড়ে নিচ্ছে ঈদযাত্রার স্বস্তি: টানা ছুটি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বাড়ি ফিরছে মানুষ। স্বস্তির যাত্রার প্রত্যাশায় বাসা থেকে বের হলেও অনেকক্ষেত্রে তা ম্লান হচ্ছে নিমিষেই। রাজধানীর যানজটে তৈরি হচ্ছে গাড়ির জটলা। ফলে সময়মতো কাউন্টারে গাড়ি পৌঁছাতে না পারায় হচ্ছে শিডিউল বিপর্যয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ছে মানুষ। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, ধোলাইপাড় ঘুরে দেখা গেছে, কাউন্টারগুলোর সামনে দীর্ঘ যানজট। কোনো কোনো গাড়ি সড়কে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে। এতে যানজট আরও দীর্ঘ হচ্ছে। পুলিশ বলছে, ঈদযাত্রার কারণে গাড়ির চাপ অনেক বেশি। এছাড়াও সড়কে সংস্কার কাজের জন্য টার্মিনালে গাড়ি দাঁড়াতে না পারায় তৈরি হচ্ছে জটলা। তবে দ্রুত তা সমাধানের উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। এসব এলাকার সড়কের শৃঙ্খলায় সায়েদাবাদে কন্ট্রোল রুম বসিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। সেখান থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। যানজটের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ারী জোনের ডিসি (ট্রাফিক) মো. নাজির আহমেদ খান বলেন, গাড়ির অনেক চাপ আছে। পাশাপাশি সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে সংস্কার কাজ চলছে বিধায় গাড়ি দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ফলে অনেক বাসই মানিকনগর হয়ে ফ্লাইওভার দিয়ে যাচ্ছে। আবার যেগুলো টার্মিনালের ভেতরে রাখার কথা, জায়গা না থাকায় সেসব বাস রাস্তায় দাঁড়াচ্ছে। ফলে সড়কে জটলা তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে অধিকাংশ বাস কাউন্টার সড়কের পাশেই। ফলে রাস্তায় দাঁড়িয়েই সেসব বাসে যাত্রী উঠানো হয়। এসব কারণেই যানজট তৈরি হচ্ছে। ওয়ারী জোনের ট্রাফিক বিভাগ সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ডিএমপি থেকেও সহায়তা পাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি। তবে বিকেলে এই জটলা কমে আসবে।
বঙ্গবন্ধু সেতুতে গাড়ির চাপ: ঈদের ছুটি পেয়ে বাড়ি ফিরছেন কর্মজীবী নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কেও যানবাহনের চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু দিয়ে ৩০ হাজার ২৫১টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে মোট টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৫৫০ টাকা। গতকাল বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) জানায়, গত মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব টাঙ্গাইল অংশে ১৭ হাজার ২৫৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছে ও টোল আদায় হয়েছে এক কোটি ২৬ লাখ চার হাজার ৯৫০ টাকা এবং সেতু পশ্চিম সিরাজগঞ্জ অংশে ১২ হাজার ৯৯৫টি যানবাহন পারাপার হয় ও এক কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৬০০ টাকা টোল আদায় হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ বাড়ছে। ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৩০ হাজার ২৫১টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে মোট টোল আদায় হয়েছে দুই কোটি ৪৪ লাখ ২১ হাজার ৫৫০ টাকা। ভোগান্তি রোধে সেতুর টাঙ্গাইল অংশে ১১টি এবং সিরাজগঞ্জ অংশে ৯টি টোল বুথ কাজ করছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নেই ঈদযাত্রার ভোগান্তি:ধ ঈদ ঘিরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে গত মঙ্গলবার যানবাহনের ধীরগতি ছিল। তবে গতকাল বুধবার সকাল থেকে যানজট কিংবা যানবাহনের কোনো চাপ নেই। তাই যাত্রীরা নির্বিঘেœ একস্থান থেকে আরেক স্থানে চলাচল করছেন। গতকাল বুধবার সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়। সানারপাড় থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পরিবার নিয়ে শিমরাইল এলাকায় এসেছেন বিল্লাল হোসেন নামের এক চাকরিজীবী। তিনি বলেন, থেকে ঈদের ছুটি শুরু হয়েছে। তাই দেরি না করে আজই পরিবার নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি। ভেবেছিলাম মহাসড়কে যানজট থাকতে পারে। কিন্তু এসে দেখি একদম ফাঁকা। আশা করছি ভোগান্তি ছাড়াই গ্রামের বাড়ি যেতে পারবো। রায়হান হোসেন পেশায় ব্যাংকার। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর গরম থাকায় সকালেই গ্রামে চলে যাচ্ছি। গ্রামে সবার সঙ্গে ঈদ পালন করতে না পারলে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে। সোলায়মান মিয়া নামের এক বাসচালক বলেন, এখনো পর্যন্ত মহাসড়কে কোথাও কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। তাই খুব তাড়াতাড়ি সায়েদাবাদ থেকে শিমরাইল এলাকায় চলে আসতে পেরেছি। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত মহাসড়কের পরিস্থিতি এমন থাকলে আমাদের এবার যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। এ বিষয়ে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার শিমরাইল ক্যাম্পের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) এ কে এম শরফুদ্দিন বলেন, গত মঙ্গলবার মহাসড়কে যাত্রীদের পাশাপাশি যানবাহনের চাপ থাকলেও সকালে কোনো চাপ নেই বললেই চলে। যানজট নিরসনে আমার এরিয়ার প্রতিটি পয়েন্টে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশা করছি এবার যাত্রীরা নির্বিঘেœই তাদের গন্তব্যস্থলে যেতে পারবে।
পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বাড়লেও নেই ঈদযাত্রার ভোগান্তি: ঈদযাত্রার প্রথম দিনে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়েছে। দূরপাল্লার বাসের তুলনায় প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের চাপ বেশি। অনেকটা স্বস্তি নিয়েই ফেরি পার হচ্ছেন ঘরমুখো মানুষ। গতকাল বুধবার সকালে পাটুরিয়া ঘাট ঘুরে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ঘাটের যানজট এড়াতে ছোট গাড়িগুলোকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূর থেকে গ্রামীণ সড়ক দিয়ে ঘাটে পাঠানো হচ্ছে। ফেরির জন্য গাড়িকে মাত্র ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। আর মোটরসাইকেলসহ বড় গাড়ি ও যাত্রীরা ঘাটে পৌঁছেই ফেরিতে উঠতে পারছেন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা নৌ অঞ্চলের ডিজিএম খালিদ নেওয়াজ বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে গতকাল বুধবার ভোর থেকে ছোট গাড়ি ও মোটরসাইকেলের চাপ বেড়েছে। তবে কোনো যানজট নেই। বর্তমানে ছোট বড় ১৯টি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। তিনি আশা করেন, এবারও বড় ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট পার হতে পারবেন ঘরমুখো মানুষ।
ভোগান্তিতে সায়েদাবাদ কাউন্টারের যাত্রীরা: গতকাল বুধবার সকালে রাজধানীর সায়েদাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, বাস কাউন্টারগুলোতে রয়েছে ঘুরমুখো মানুষের ভিড়। অনেকে টিকিট না পেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ সায়েদাবাদে গাড়ি না পেয়ে এগোচ্ছেন ধোলাইপাড়ের দিকে। বাস কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, মূলত রাজধানীর কিছুকিছু জায়গায় জ্যাম রয়েছে। ফলে, গাড়ি আসতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় মানুষের সমস্যা হচ্ছে। শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার স্টাফ মো. ওসমান বলেন, সায়েদাবাদে আসা গাড়িগুলো জ্যামের মুখে পড়ছে। তাই কাউন্টারে গাড়ি আসতে লেট করছে। দেখা গেছে ঢাকার বাইরে থেকে দ্রুত গাড়ি চলে এলেও সায়েদাবাদে এসে বিভিন্ন মোড়ে জ্যামে গাড়ি বসে থাকে। এতে যাত্রীদেরও ভোগান্তি হয়। ঝিনাইদহগামী যাত্রী সামসুল ইসলাম বলেন, আমি উত্তরা থেকে সায়েদাবাদে এসেছি, যাবো ঝিনাদাহ। খুব সকাল সকাল বের হয়ে এখানে এসেছি। বাড়িতে মা আছে, তাই তীব্র গরমেও বাড়ি যাচ্ছি। মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে এইটুকু কষ্ট করতেই হবে। বরিশালগামী যাত্রী সুমন মোল্লা বলেন, আমি সকালে এসেছি। কোনো কোনো গাড়িতে ভাড়া বেশি চাওয়া হচ্ছে। তাই অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি। ভাড়া অন্যান্য সময় পাঁচশত টাকা হলেও এখন ৭০০/৮০০ টাকা চাইছে। সেজন্য দাঁড়িয়ে আছি, কমে পেলে গাড়িতে উঠবো। হিমাচল পরিবহনের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা আগের মতো যাত্রী পাচ্ছি না। এখন অনেক গাড়ি কমলাপুর টিটিপাড়া থেকে ফ্লাইওভার দিয়ে চলে যায়। তাই যাত্রীরা সেখানে চলে যায়। সায়েদাবাদে যানজট থাকে তাই মানুষ এখন ওদিক থেকেই ফ্লাইওভার দিয়ে চলে যায়। আগের চেয়ে টিকিট বিক্রি এখন অনেক কম। এখন ঈদের সময়ও যাত্রী সেভাবে পাই না।