ঈদের ছুটি শেষে খুলেছে অফিস, এখনও রাজধানীতে ফিরছে মানুষ

- আপডেট সময়ঃ ০৭:৩৭:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুলাই ২০২৩
- / ১৩২ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ঈদের টানা পাঁচ দিনের ছুটি শেষে সরকারি অফিস, আদালত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খুলছে গতকাল রোববার। ছুটি শেষ হওয়ায় ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে সেই সংখ্যা কম। কর্মস্থলগামীরা বলছেন এবার অনেকটা স্বস্তি নিয়েই তারা ঢাকায় ফিরছেন। কোথাও যানজট নেই, বিভিন্ন পরিবহনে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও তেমন মেলেনি। কোনো ভোগান্তি পোহাতে হয়নি টিকিট পেতে। আজ রোববার সকালে গাবতলীর বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় আসা গাড়িগুলো গাবতলী ব্রিজ ও কাউন্টারের সামনে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। বাস থেকে নেমে, গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সিএনজি, মোটরসাইকেল কিংবা রিকশার খোঁজ করছেন যাত্রীরা। তবে এখনও ঈদ করতে ঢাকা থেকে মানুষ বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। অল্প যাত্রী হলেও নির্ধারিত সময়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে বাসগুলো। গত ২৯ জুন সারাদেশে উদযাপিত হয় মুসলিম ধর্মালম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ উপলক্ষে প্রথমে ২৮, ২৯ ও ৩০ জুন নির্ধারিত হয় সরকারি ছুটি। পরে সরকারের নির্বাহী আদেশে ২৭ জুনও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। এতে ঈদে সরকারি ছুটি মেলে চারদিন। ৩০ জুন চারদিনের ছুটি শেষ হলেও ১ জুলাই সাপ্তাহিক ছুটি গত শনিবার। ফলে আরও এক দিন ছুটি পেয়ে যান সরকারি চাকরিজীবীরা। ফলে টানা পাঁচ দিন ছুটি মেলে তাদের। সরকারি নির্দেশনা মেনে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিতে ঈদ উপলক্ষে চার দিনের ছুটে দেওয়া হয়। ফলে ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির চাকরিজীবীরাও টানা পাঁচ দিনের ছুটি পেয়ে যান। এদিকে, ছুটি কাটিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে যাওয়া সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনেকেই অফিস করতে আজই ঢাকায় ফিরছেন। রাজধানীর ধোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ি ও সায়দাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে ফাঁকা সড়কগুলোতে কিছুক্ষণ পর পর এসে থামছে যাত্রীবাহী গাড়ি। এসব গাড়িতে করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের অধিকাংশই চাকরিজীবী। অনেকে একা ফিরছেন, কেউ ফিরছেন পরিবার নিয়ে। ছুটি শেষে গতকাল রোববার ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন অনেকে। কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। একইভাবে রয়েছে ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ। ট্রেনের শিডিউলে কোনো হেরফের হচ্ছে না। ফলে স্বস্তি নিয়েই ঢাকায় ফিরতে পারছে সাধারণ মানুষ। গতকাল রোববার কমলাপুর রেলস্টেশন সূত্র জানায়, ঈদের ছুটির পর এদিন থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খুলেছে। ফলে সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের চাপ লক্ষ্য করা গেছে। দেশের বিভিন্ন গন্তব্য থেকে যাত্রী নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর আসছে ট্রেন। একইভাবে কমলাপুরে এখনো ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। যাত্রী পরিবহনে প্রতিদিন ৭২ জোড়া ট্রেন কমলাপুরে চলাচল করছে। এর বাইরে ঈদ উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে স্পেশাল ট্রেনও চলছে। দেখা যায়, রংপুর এক্সপ্রেস, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, তিতাস কমিউটার, একতা এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস যাত্রী নেওয়ার জন্য পৃথক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। প্ল্যাটফর্মার ভেতর সিরিয়াল ধরে ঢুকছেন যাত্রীরা। এর আগে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে প্রত্যেকের টিকিট চেক করছেন রেলের কর্মীরা। কমলাপুর রেলস্টেশন মাস্টার আফসার উদ্দিন বলেন, যাত্রীরা নির্বিঘেœ ঈদ যাত্রা করতে পারছেন। প্রতিটি ট্রেন সঠিক সময়ে গন্তব্যে যাচ্ছে এবং ফিরছে। গতকাল রোববার ঢাকামুখী ও ঘরমুখো মানুষের চাপ প্রায় সমান ছিল।
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে পাঁচদিন ছুটির পর গতকাল রোববার খুলেছে সরকারি অফিস। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। প্রথম কর্মদিবসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবরা সচিবালয়ে এসেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বেলা ১১টার আগেই সচিবালয়ে প্রবেশ করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। নিজ দপ্তরে ১১টা ১০ মিনিটের দিকে কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায় তাকে। উপস্থিত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোলাকুলিও করেন প্রতিমন্ত্রী। ঈদের পর প্রথম কর্মদিবসে সচিবালয়ের বারান্দা, সিঁড়ি, লিফট, সর্বত্রই ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় চলছে। কেউ কেউ একে অপরকে জড়িয়ে কোলাকুলি করছেন। ভেদাভেদ নেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সিঁড়ি ও ফ্লোরগুলো ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করছেন। সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখা গেছে উপস্থিতি কম। কোনো কোনো ফ্লোরে নিরাপত্তাকর্মীদের ও দেখা যায়নি। কোনো কোনো কক্ষে চেয়ার টেবিল ফাঁকা। যারাও এসেছেন কাজে-কর্মে ছিল অনেকটাই ঢিলেঢালা ভাব। উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মূলত পারস্পরিক খোঁজ-খবর ও শুভেচ্ছা বিনিময়েই ব্যস্ত ছিলেন। বিভিন্ন ভবনের লিফটগুলোর সামনে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। গাড়ি রাখার স্থানগুলোতেও গাড়ির সংখ্যা কম দেখা গেছে। সকাল ১০টার দিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে গাড়ি রাখার স্থানে কয়েকজনকে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন। এদের একজন বলেন, আমরা মুসলমান। ঈদ চলে গেছে তাতে কি। ঈদের পর আজ প্রথম দেখা তাই কোলাকুলি করছি। কোলাকুলি করলে একজনের সঙ্গে আর একজনের হৃদ্রতা বাড়ে। স্থানীয় সরকার বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিত বেশ কম। একজন পিয়নকে করিডরে একটি চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, আজ উপস্থিতি অনেক কম। অর্ধেকের মতো এসেছে। অনেক ঈদের ছুটির সঙ্গে বাড়তি ছুটি নিয়েছেন। তারা আজ অফিসে আসেননি। অর্থ মন্ত্রণালয়ে গিয়েও উপস্থিত বেশ কম দেখা যায়। অর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঈদের পর আজ (গতকাল রোববার) প্রথম কার্যদিবস। অনেকে ঈদের ছুটির সঙ্গে বাড়তি ছুটি নিয়েছেন। তারা আজ আসেননি। আমার ধারণা আজ ৫০ শতাংশের মতো কর্মকর্তা কর্মচারী উপস্থিত আছেন। সব মন্ত্রণালয়েই একই অবস্থা। এই সপ্তাহটি উপস্থিতি কমই থাকবে। আগামী সপ্তাহ থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ে, কৃষি মন্ত্রণালয়েও কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মী বলেন, এই মন্ত্রণালয়ের অর্ধেকের মতো কর্মকর্তা কর্মচারীরা ছুটিতে আছেন। যেসব স্যারেরা এসেছেন, তারা অফিসে এসে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।