ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

এটিএম বুথে নগদ টাকার সংকট, বিপাকে গ্রাহক

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০২:১৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ব্যাংকে ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর সারা দেশে নিরাপত্তার অভাবে বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএম বুথ বন্ধ রয়েছে। কিছু ব্যাংকের বুথ খোলা থাকলেও তাতে কোনো নেই টাকা। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর সব শাখা এখনো খুলেনি। এর ফলে সাধারণ মানুষ ব্যাংকের টাকা তুলতে পারছেন না। আর এতেই নগদ টাকার তীব্র সংকটে পড়েছেন মানুষ।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ এটিএমে অর্থ সরবরাহের কাজটি করা হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের এ সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বেশির ভাগ এটিএমে টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বন্ধ হয়ে গেছে দেশ জুড়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএম সেবা।

গত কয়েক দিন ধরে মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন কাওরানবাজার এলাকার একাধিক এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেননি সাধারণ মানুষ। দেশের সব জেলাতেই একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বুথে টাকা না থাকায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যতটা না টাকার সংকট তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তার শঙ্কায় ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে।

চলমান পরিস্থিতিতে টাকা পরিবহনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না অনেক ব্যাংক ও এটিএমে অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস শেষে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট এটিএমের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪২৮। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯ হাজার ৪০৯টি আর গ্রামাঞ্চলে ৪ হাজার ১৯টি। এটিএম ছাড়া সিআরএমের (ক্যাশ রিস্লাইকিং মেশিন) মাধ্যমেও নগদ টাকা উত্তোলন করা যায়।

জানা যায়, দেশের বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক এখন এটিএমের বদলে সিআরএমের প্রতি ঝুঁকছে। সিআরএমে টাকার উত্তোলনের পাশাপাশি নগদ জমারও সুযোগ রয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে সিআরএমের সংখ্যা বাড়ছে। গত মে মাস শেষে দেশে সিআরএমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৫০। এসব সিআরএমের সিংহভাগই শহরাঞ্চলে, যা ৩ হাজার ৯৮৫টি। বন্ধ থাকা বেশির ভাগ ব্যাংকের বুথের নিরাপত্তাকর্মীদেরও পাওয়া যায়নি। যাদের পাওয়া গেছে তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাবে

বুথগুলোতে টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে। অন্তত তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয়ও হট্টগোল হচ্ছে। গভর্নরসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকেও শৃঙ্খলা ফেরেনি। শুক্রবার গভর্নর পদত্যাগ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অভিভাবকশূন্য হয়ে যাওয়ার কারণেই ব্যাংক খাতে এতটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকসহ (ইউসিবি) বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে বৃহস্পতিবারও বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে দাপ্তরিক কাজ করতে দেওয়া হয়নি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দুই জন উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের পিটুনিতে ব্যাংকটির মাসুদ মিয়া নামের এক জন কর্মকর্তা গুরুতর আহতও হয়েছেন। আর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সামনে। ন্যাশনাল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন কিংবা নতুন পরিচালক অন্তর্ভুক্তির দাবি উঠেছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

এটিএম বুথে নগদ টাকার সংকট, বিপাকে গ্রাহক

আপডেট সময়ঃ ০২:১৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ অগাস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ব্যাংকে ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর সারা দেশে নিরাপত্তার অভাবে বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএম বুথ বন্ধ রয়েছে। কিছু ব্যাংকের বুথ খোলা থাকলেও তাতে কোনো নেই টাকা। পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর সব শাখা এখনো খুলেনি। এর ফলে সাধারণ মানুষ ব্যাংকের টাকা তুলতে পারছেন না। আর এতেই নগদ টাকার তীব্র সংকটে পড়েছেন মানুষ।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বেশির ভাগ এটিএমে অর্থ সরবরাহের কাজটি করা হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের এ সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বেশির ভাগ এটিএমে টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বন্ধ হয়ে গেছে দেশ জুড়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএম সেবা।

গত কয়েক দিন ধরে মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন কাওরানবাজার এলাকার একাধিক এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেননি সাধারণ মানুষ। দেশের সব জেলাতেই একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বুথে টাকা না থাকায় এমন সংকট তৈরি হয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যতটা না টাকার সংকট তার চেয়ে বেশি নিরাপত্তার শঙ্কায় ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম কার্যক্রম কমিয়ে দিয়েছে।

চলমান পরিস্থিতিতে টাকা পরিবহনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না অনেক ব্যাংক ও এটিএমে অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। আবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাস শেষে দেশে বিভিন্ন ব্যাংকের মোট এটিএমের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৪২৮। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৯ হাজার ৪০৯টি আর গ্রামাঞ্চলে ৪ হাজার ১৯টি। এটিএম ছাড়া সিআরএমের (ক্যাশ রিস্লাইকিং মেশিন) মাধ্যমেও নগদ টাকা উত্তোলন করা যায়।

জানা যায়, দেশের বেসরকারি খাতের অনেক ব্যাংক এখন এটিএমের বদলে সিআরএমের প্রতি ঝুঁকছে। সিআরএমে টাকার উত্তোলনের পাশাপাশি নগদ জমারও সুযোগ রয়েছে। এ কারণে ধীরে ধীরে সিআরএমের সংখ্যা বাড়ছে। গত মে মাস শেষে দেশে সিআরএমের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৫০। এসব সিআরএমের সিংহভাগই শহরাঞ্চলে, যা ৩ হাজার ৯৮৫টি। বন্ধ থাকা বেশির ভাগ ব্যাংকের বুথের নিরাপত্তাকর্মীদেরও পাওয়া যায়নি। যাদের পাওয়া গেছে তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তার অভাবে

বুথগুলোতে টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এদিকে, দেশের ব্যাংক খাতে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে। অন্তত তিনটি বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোয়ও হট্টগোল হচ্ছে। গভর্নরসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংকেও শৃঙ্খলা ফেরেনি। শুক্রবার গভর্নর পদত্যাগ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অভিভাবকশূন্য হয়ে যাওয়ার কারণেই ব্যাংক খাতে এতটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকসহ (ইউসিবি) বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে বৃহস্পতিবারও বিশৃঙ্খলা হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে দাপ্তরিক কাজ করতে দেওয়া হয়নি। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দুই জন উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের পিটুনিতে ব্যাংকটির মাসুদ মিয়া নামের এক জন কর্মকর্তা গুরুতর আহতও হয়েছেন। আর বিক্ষোভ ও মানববন্ধন হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সামনে। ন্যাশনাল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকসহ আরো কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন কিংবা নতুন পরিচালক অন্তর্ভুক্তির দাবি উঠেছে।