ঢাকা, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

ওষুধ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৮:১০:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩
  • / ১২২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের রোগী। এ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। । আজ বুধবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাকক্ষে ‘হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়। সভায় বক্তারা বলেন, অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করেন না। ফলে তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকিসহ অন্য রোগ বেড়ে আরও অর্থ ব্যয় বাড়ছে। তাই পরীক্ষা ও ওষুধের পেছনে যদি এক টাকা ব্যয় হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে ১৮ টাকার সুফল পাওয়া যায়। বক্তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দেশের জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ এবং মোট জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ হওয়া উচিত। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে দেশের স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ৫ শতাংশ, জিডিপির মান দশমিক ৭৬ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরেও এই বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, জিডিপির দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ার বদলে উল্টো কমছে। এসময় বক্তারা জানান, তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ (এমলোডিপিন ৫ মি. গ্রা.) সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এটি এখন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। তিনি জানান, হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজিতে ২০৩২ সালের মধ্যে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বাজেট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি মোট স্বাস্থ্যব্যয়ে ব্যক্তিগত বা নিজ পকেট থেকে খরচের পরিমাণ ৬৪ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশে হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। তবে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস ১৯৯৭-২০’ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালে এসে উল্টো স্বাস্থ্যব্যয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ শতাংশে। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবিলায় এখাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি তথা টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ব্যক্তির ওপর চিকিৎসাজনিত ব্যয়ের বোঝা হ্রাস করা সম্ভব হবে না। প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, কিছুদিন আগেও দেশে উচ্চরক্তচাপে আক্রান্তের হার ছিল প্রতি পাঁচজনে একজন। কিন্তু বর্তমানে তা প্রতি চারজনে একজনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার মানে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের হার দিনদিন বাড়ছে। এদিকে উল্টো আমাদের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমছে। এভাবে যদি রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে, আর বিপরীতে যদি নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ না বাড়ে তাহলে দিন দিন উচ্চ রক্তচাপ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেমন করণীয় আছে, ব্যক্তিপর্যায়েও আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় শুধু সরকারের পদক্ষেপে এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। আমাদের অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জানতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে লবণ, তৈলাক্ত জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা ও কায়িক শ্রম বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সিবিএইচসি) ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ সাল থেকে একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা, চিকিৎসা প্রদান এবং ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা। এরইমধ্যে ১৮২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং এটি সদর হাসপাতালে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ওষুধ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

আপডেট সময়ঃ ০৮:১০:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপের রোগী। এ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। । আজ বুধবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাকক্ষে ‘হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়। সভায় বক্তারা বলেন, অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করেন না। ফলে তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকিসহ অন্য রোগ বেড়ে আরও অর্থ ব্যয় বাড়ছে। তাই পরীক্ষা ও ওষুধের পেছনে যদি এক টাকা ব্যয় হয়, তাহলে সামগ্রিকভাবে ১৮ টাকার সুফল পাওয়া যায়। বক্তারা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে দেশের জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ এবং মোট জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ হওয়া উচিত। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে দেশের স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ৫ শতাংশ, জিডিপির মান দশমিক ৭৬ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরেও এই বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, জিডিপির দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ার বদলে উল্টো কমছে। এসময় বক্তারা জানান, তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ (এমলোডিপিন ৫ মি. গ্রা.) সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এটি এখন দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাডভোকেসি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা। তিনি জানান, হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজিতে ২০৩২ সালের মধ্যে জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের বাজেট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এমনকি মোট স্বাস্থ্যব্যয়ে ব্যক্তিগত বা নিজ পকেট থেকে খরচের পরিমাণ ৬৪ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশে হ্রাস করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে। তবে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস ১৯৯৭-২০’ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালে এসে উল্টো স্বাস্থ্যব্যয়ে ব্যক্তির নিজস্ব ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ শতাংশে। প্রবন্ধে আরও বলা হয়, উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগের প্রকোপ মোকাবিলায় এখাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি তথা টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে ব্যক্তির ওপর চিকিৎসাজনিত ব্যয়ের বোঝা হ্রাস করা সম্ভব হবে না। প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, কিছুদিন আগেও দেশে উচ্চরক্তচাপে আক্রান্তের হার ছিল প্রতি পাঁচজনে একজন। কিন্তু বর্তমানে তা প্রতি চারজনে একজনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার মানে উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তের হার দিনদিন বাড়ছে। এদিকে উল্টো আমাদের জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কমছে। এভাবে যদি রোগের প্রকোপ বাড়তে থাকে, আর বিপরীতে যদি নিয়ন্ত্রণে বরাদ্দ না বাড়ে তাহলে দিন দিন উচ্চ রক্তচাপ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তিনি বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকারের যেমন করণীয় আছে, ব্যক্তিপর্যায়েও আমাদের ভূমিকা রাখতে হবে। অন্যথায় শুধু সরকারের পদক্ষেপে এটি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। আমাদের অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কে জানতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে লবণ, তৈলাক্ত জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা ও কায়িক শ্রম বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সিবিএইচসি) ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ২০১৮ সাল থেকে একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এর উদ্দেশ্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করা, চিকিৎসা প্রদান এবং ফলোআপ কার্যক্রম শক্তিশালী করা। এরইমধ্যে ১৮২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং এটি সদর হাসপাতালে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে।