ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

চট্টগ্রামে আলোচিত ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে’ প্রথম অভিযোগপত্র আদালতে

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৭:৪৮:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৩৭ বার পড়া হয়েছে

আবদুল মতিন চৌধুরী রিপন, বিশেষ প্রতিনিধি :

চট্টগ্রামে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ মামলায় দাখিল করা প্রথম অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফা তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণে দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম শহিদ নিহতের মামলায় ২৩১ জনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেছিল পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৩০ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরীর চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক আদালতের প্রসিকিশন শাখায় অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের মামলায় এটি ছিল আদালতে দাখিল করা প্রথম অভিযোগপত্র। অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৩১ জনকে আসামি করা হয়। সাক্ষী করা হয় ১২৮ জনকে।

আসামিদের মধ্যে আরও আছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, পুলক খাস্তগীর, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন এবং নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

এপিপি রায়হানুল ওয়াজেদ জানান, মামলার বাদী তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করলে আদালত সেটা খারিজ করে দেন। আদালত অভিযোগপত্র সরাসরি গ্রহণের আদেশ দেন।এ পর্যন্ত এই মামলায় মোট ৮৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ৩ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাটে দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ (৩৭)। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট তার ভাই শফিকুল ইসলাম নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।

আন্দোলনের সময় নিহত শহিদুল ইসলাম শহিদ হত্যা মামলায় তার ভাইয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শহিদ জুতার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় দোকান থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় দুষ্কৃতকারীদের গুলিবর্ষণে নিহত হন তিনি।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনের মধ্যে গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় নগরীর ষোলশহর এলাকায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবন এবং বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সেসময়কার মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। সেসময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল, আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিবর্ষণে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ নিহত হয়েছেন।তবে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বহদ্দারহাটে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে মেয়রের বাসায় হামলা ঠেকাতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছিলো। পুলিশ কোনো গুলি করেনি বলে দাবি করা হয়েছিল।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

চট্টগ্রামে আলোচিত ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডে’ প্রথম অভিযোগপত্র আদালতে

আপডেট সময়ঃ ০৭:৪৮:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আবদুল মতিন চৌধুরী রিপন, বিশেষ প্রতিনিধি :

চট্টগ্রামে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ডের’ মামলায় দাখিল করা প্রথম অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফা তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই দিন আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণে দোকান কর্মচারী শহিদুল ইসলাম শহিদ নিহতের মামলায় ২৩১ জনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেছিল পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৩০ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগরীর চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক আদালতের প্রসিকিশন শাখায় অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের মামলায় এটি ছিল আদালতে দাখিল করা প্রথম অভিযোগপত্র। অভিযোগপত্রে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যার অভিযোগে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৩১ জনকে আসামি করা হয়। সাক্ষী করা হয় ১২৮ জনকে।

আসামিদের মধ্যে আরও আছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, পুলক খাস্তগীর, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন এবং নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীসহ যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

এপিপি রায়হানুল ওয়াজেদ জানান, মামলার বাদী তদন্ত কর্মকর্তার দাখিল করা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন করলে আদালত সেটা খারিজ করে দেন। আদালত অভিযোগপত্র সরাসরি গ্রহণের আদেশ দেন।এ পর্যন্ত এই মামলায় মোট ৮৪ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত বছরের ৩ আগস্ট নগরীর চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাটে দু’পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ (৩৭)। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট তার ভাই শফিকুল ইসলাম নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।

আন্দোলনের সময় নিহত শহিদুল ইসলাম শহিদ হত্যা মামলায় তার ভাইয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শহিদ জুতার দোকানের কর্মচারী ছিলেন। গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় দোকান থেকে বেরিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় দুষ্কৃতকারীদের গুলিবর্ষণে নিহত হন তিনি।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনের মধ্যে গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় নগরীর ষোলশহর এলাকায় তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর বাসভবন এবং বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সেসময়কার মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। সেসময় আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল, আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিবর্ষণে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ নিহত হয়েছেন।তবে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বহদ্দারহাটে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে মেয়রের বাসায় হামলা ঠেকাতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছিলো। পুলিশ কোনো গুলি করেনি বলে দাবি করা হয়েছিল।