চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট পার্কিংয়ে অনুমোদন ছাড়াই টোল আদায়, বছরে আয় কোটি টাকা

- আপডেট সময়ঃ ০৭:৪৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৩৭ বার পড়া হয়েছে
রিপন চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি :
চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নিউ মার্কেট (বিপণীবিতান) পার্কিংয়ে অনুমোদন ছাড়াই টোল আদায় চলছে। প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা, মাসে প্রায় ৫০ লাখ এবং বছরে প্রায় ৬ কোটি টাকা পর্যন্ত রাজস্ব বেহাত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও প্রশাসনের নীরবতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তদন্তে জানা যায়, ‘বিপণীবিতান ব্যবসায়ী কল্যাণ সংস্থা চট্টগ্রাম’ নামের একটি সংগঠন কয়েক মাস ধরে পার্কিংয়ে প্রবেশকারী যানবাহনের কাছ থেকে ঘন্টা ভিত্তিক টোল আদায় করছে। মোটরসাইকেল: ৩০ টাকা প্রাইভেট কার: ৫০ টাকা (অতিরিক্ত প্রতি ঘণ্টায় ২০ টাকা) প্রত্যেক যানবাহন মালিককে সংগঠনের নামযুক্ত রশিদ দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো সরকারি অনুমোদন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) এস্টেট অফিসার মো. আলমগীর খান জানান, “আমরা টোল আদায়ের অনুমতি দিইনি। বিষয়টি সম্পর্কে আগে অবগতও ছিলাম না। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”সিডিএ’র মার্কেট সুপার মো. সালাউদ্দিনও স্বীকার করেছেন, অনুমোদন ছাড়া টোল আদায় হচ্ছে এবং বিষয়টি তিনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, বিপণীবিতান মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার কমিটির সাধারণ সম্পাদক শারুদ নিজাম বলেছেন, “পার্কিং, নিরাপত্তা ও বাজার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার খরচ মেটাতে সাময়িকভাবে টোল নেওয়া হচ্ছে। সিডিএ’র অনুমোদনের জন্য আলোচনা চলছে।”তবে তার এই বক্তব্যে অনেকেই সন্তুষ্ট নন। কারণ সরকারি অনুমোদন ছাড়া পার্কিং রাজস্ব সংগ্রহকে সরাসরি অবৈধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ টোল আদায় চলছে, অথচ প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে অনেকের ধারণা, কিছু অসাধু কর্মকর্তা এতে পরোক্ষভাবে জড়িত থাকতে পারেন ।
জানা যায়, ১৯৬৪ সালে মার্কেটটি যাত্রার পর থেকে কখনো পার্কিং ইজারা দেয়া হয়নি। ক্রেতাদের সুবিধার্থে টাকা ছাড়াই পার্কিং সুবিধা ভোগ করা যেত। কিন্তু গত বছরের (২০২৪ সালে) ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই টোল আদায় শুরু করে বিপনী বিতান মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার কমিটি। একাধিক ভুক্তভোগী জানান, এই মার্কেটের শুরু থেকে কখনো পার্কিংয়ের টোল ছিলনা।এবিষয়ে জানতে সরেজমিনে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। গত মঙ্গলবার (৩ আগষ্ট) সরেজমিনে গিয়ে টোল আদায় কাজে নিয়োজিত কর্মীদের সাথে কথা বললে তারাও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান এই পার্কিংয়ে দৈনিক গড়ে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা টোল আদায় হয়ে থাকে। মাসে যার পরিমান প্রায় ৫০ লাখ টাকা আর বছরে প্রায় ৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত একবছরে সিডিএ’র কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
একাধিক ভুক্তভোগী দাবি করেন, এই পার্কিং সিডিএ’র সম্পদ। সিডিএ চাইলে আইনের আলোকে ইজারার মাধ্যমে রাজস্ব আদায় করতে পারে। তাহলে আর অবৈধ বলার সুযোগ থাকবেনা। আর কোন বিতর্ক হওয়ারও সুযোগ নেই। কিন্তু সিডিএ’র কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার লোভের বশে সরকারের মোটা অংকের টাকা তছরুপ করছে এস্টেট শাখা। অফিসাররা হয়তো সাময়িক কিছু অর্থ পাচ্ছে কিন্তু এই চর্চা একদিন আমাদের আরো অনেক নিচে নামিয়ে দিবে।
চট্টগ্রাম বিপনীবিতান (নিউ মার্কেট) ১৯৬১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর ১৯৬৪ সালে শপিংমল হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এর আসল নাম বিপণীবিতান। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজম এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এটি চট্টগ্রাম শহরের একটি প্রাচীনতম শপিংমল। এখানে প্রায় ৬০ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন অনেক ব্যবসায়ী। এই মার্কেটে ৫১২টি দোকান রয়েছে। প্রতিদিন হাজারো ক্রেতার আনাগোনা এখানে। ব্যবসায়ীরা এখানে থান কাপড়, তৈরি পোশাক, শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, জুয়েলারি, কসমেটিকস, ঘড়ির দোকান, জুতা ও ইলেকট্রনিকস পণ্যেসহ বিভিন্ন মালামালের পসরা সাজিয়েছেন।