আব্দুল্লাহ আল মামুন :
গত শনিবার (১১/০৬/২০২২ খ্রি.) বিকাল ০৩:০০ ঘটিকা হতে ০৬:০০ ঘটিকা পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের কনফারেন্স রুমে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুমার শিপন মোদক এর সভাপতিত্বে এবং ফোকাল পার্সন (সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) মোঃ হুমায়ূন কবীর-এর সঞ্চালনায় মাসিক পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়।
পবিত্র কুরআন শরীফ তেলাওয়াত মোঃ তারিক উজ্জামান, মুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং পবিত্র গীতা-পাঠ রঞ্জন কুমার, প্রধান তুলনাকারক এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজিত অনুষ্ঠানের সভাপতি কুমার শিপন মোদক।
স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনকল্যানমুখী নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হতে উন্নত দেশ হিসেবে পৃথিবীর বুকে সগৌরবে, মাথা উচু করে দাঁড়াতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। সেখানে যেকোন সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী সে পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, প্রশাসন, অ্যাডভোকেট যেই হোক না কেন, কারও বেআইনী ও গর্হিত কর্মকান্ডকে বর্তমান জনকল্যানমুখী রাষ্ট্র কাঠামোতে কোনভাবেই সমর্থণ করা হচ্ছে না। সঙ্গতকারণেই, রাষ্ট্রের সেই অভিন্ন অভিপ্রায় পূরণকল্পে ও বাস্তবায়ন কল্পে বাংলাদেশ বিচার বিভাগের একটি অংশ হিসেবে অত্র জেলার বিচার বিভাগ, তথা অত্র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসি হতেও কারও এরুপ বেআইনী ও গর্হিত কর্মকান্ড সমর্থন পাওয়া উচিত হবে না বলে আমরা মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, এই মুহুর্তে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো মামলাজট। বিচার বিভাগের উপর মামলার বিশাল এই ভার ন্যায়বিচার প্রদান ব্যবস্থাকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলছে যার ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে আরও বিলম্ব হচ্ছে, মামলার পক্ষরা হয়রানীর শিকার হচ্ছে এবং ন্যায়বিচারে মানুষের প্রবেশাধিকারের সুযোগকে সীমিত করে তুলছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(৩)নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধের প্রত্যেক অভিযুক্ত ব্যক্তির দ্রুত বিচার পাওয়ার অধিকারের বিধান রয়েছে। এছাড়াও সংবিধানের ২২নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচার বিভাগ তথা ম্যাজিস্ট্রেসিকে রাষ্ট্রের নির্বাহী অংশ হতে পৃথক করা হয়েছে। ফলে, এখন বিচার বিভাগ থেকে জনগণের প্রত্যাশা আগের চেয়ে অনেক বেশি। মামলার জট টেকসইভাবে হ্রাসের জন্য ম্যাজিস্ট্রেসিসহ পুরো বিচার বিভাগকে মামলাজটের কারণগুলির সাথে মোকাবেলা করার জন্য আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে দ্রুততার সাথে অধিক হারে নিষ্পত্তি, আইনি সংস্কার, মামলার সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং বিচারক ও কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে যথাযথ গ্রহণের প্রতি। এটা ঠিক যে, এই ধরনের একটি বিশাল মামলাজট মোকাবেলা করার জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। তবে, এর জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও জরুরি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করাও আশু প্রয়োজন। বিচারকার্যে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের আন্তরিকতা, দায়িত্ব সচেতনতা ও কর্তব্যবোধই কেবল পারে বিচারে গতি আনতে ও সুবিচার নিশ্চিত করতে। এলক্ষ্যে সকল বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে।
স্বাগত বক্তব্য শেষে কনফারেন্সে আগত সকলের পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্স-এ নিয়মিত আলোচ্যসূচীর পাশাপাশি মূলতঃ বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের সানুগ্রহ অভিপ্রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন এবং মাননীয় আইনমন্ত্রী মহোদয়-এর আন্তরিকভাবে প্রত্যাশিত ‘মামলাজট-এর কারণ চিহ্নিতকরণ, দূরীকরনের উপায় বের করা, বাস্তবায়ন, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করে জট কমানোর মাধ্যমে হয়রানীমুক্তভাবে দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার’ বিষয়ে বিচার বিভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন ও অন্যতম সহযোগী হিসেবে সংশ্লিষ্ট সকলের সুচিন্তিত মতামত ও কৌশল শেয়ার করা এবং সকলের করণীয় বিষয়ে অভিমত গ্রহণ করা হয়।
সকলের মতামত শেষে বক্তব্য রাখেন, ৫৯ বিজিবি’র উপ-অধিনায়ক মেজর খন্দকার শাহরিয়ার আলম, র?্যাব এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহিদুল ইসলাম, আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি, জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আনিছুর রহমান, জেল সুপার মোঃ মজিবুর রহমান।
এরপর সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে কুমার শিপন মোদক বলেন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজী, খুন, মাদক ব্যবসা ও ব্যবহার, চোরাচালান, রাজনৈতিক সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতা, নাশকতামূলক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ছিনতাই, অন্যের জান ও মালের উপর ক্ষতি, নাগরিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মাদকের মামলা দায়ের, গ্রেফতারের পর আসামীকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির না করা/পুলিশ রিমান্ডে থাকাবস্থায় আসামীকে নির্যাতন করা/মেরে ফেলা, অবৈধ সুবিধা/অর্থ আদায়, বিচার বহির্ভূত যে কোন হত্যাকান্ড ইত্যাদি বিষয়েও যাতে এরুপ একটি ঘটনাও ঘটতে না পারে সে বিষয়ে থানার অফিসার-ইন-চার্জসহ সংশ্লিষ্ট সকলে সদা সচেষ্ট থাকবেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নুরুজ্জামান সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আতোয়ার রহমান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নাজমুল হোসেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আবু কাহার, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঈশিতা শবনম, মোঃ তৌহিদুজ্জামানসহ জেলার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তাবৃন্দ। সবশেষে সম্মেলনে হাজির হওয়ায় উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সিজেএম কুমার শিপন মোদক।
সর্বশেষঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাসিক পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ০৮:১০:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জুন ২০২২
- ১৫৪ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ