ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড, বামপন্থীদের দুষছেন ট্রাম্প ও মাস্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০৩:৪২:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ১৭ বার পড়া হয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন কনজারভেটিভ অ্যাকটিভিস্ট চার্লি কার্ক। তিনি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন প্রভাবশালী মিত্র। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আউটডোর ডিবেট আয়োজনের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। খবর বিবিসির।

এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শোকার্ত এবং ক্ষুব্ধ’ বলে জানিয়েছেন। তিনি এটাকে আমেরিকার জন্য একটি অন্ধকার মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন। রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এই ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেছেন, তার প্রশাসন এই নৃশংসতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক সহিংসতায় অংশ নিয়েছেন এমন প্রতিটি ব্যক্তিকে খুঁজে বের করবে। উগ্র বামপন্থি রাজনৈতিক সহিংসতা অনেক নিরীহ মানুষকে আঘাত করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গত বছর তাকে হত্যার চেষ্টা এবং ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের সিইও ব্রায়ান থম্পসনকে হত্যার কথাও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। দেশের এই গভীর রাজনৈতিক বিভক্তির জন্য ট্রাম্প বরাবরই ‘উগ্র বামপন্থিদের দোষ দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন।

সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন তার এমন সব বক্তব্য রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দিয়েছে।এফবিআই পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল জানিয়েছেন, আগেই আটক এক সন্দেহভাজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ছাদ থেকে গুলি করা হয়েছে।

গুলি চালানোর পর অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিও বিবিসি ভেরিফাই খতিয়ে দেখেছে। অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গুলি করার আগে ৩১ বয়সী কার্ককে গণহত্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হচ্ছে। ১৮ বছর বয়সে কার্ক টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ নামে একটি কনজারভেটিভ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এবং তার পরিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

প্রায় ২০০ গজ দূর থেকে তাকে গুলি করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রায় ২০০ মিটার (১৮২ মিটার) দূরের একটি ভবন থেকে গুলি চালানো হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস এবং ফক্স নিউজসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলোতে এই বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র অ্যালেন ট্রিয়ানের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১২টা ২০ মিনিটে প্রায় ২০০ গজ দূরের একটি ভবন থেকে গুলি চালানো হয়। পরে আহত অবস্থায় তার নিরাপত্তাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সরিয়ে নেন।

হত্যাকারীর খোঁজে ঘরে ঘরে পুলিশ
ঘটনার পরপরই পুলিশ শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ এবং ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে।

দুজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পরে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারে বাধার দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এই হামলার সঙ্গে তাদের যোগসূত্র রয়েছে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।

চার্লি কার্কের হত্যাকারীর খোঁজে পুলিশ ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকার ঘরে ঘরে যাচ্ছে। ডিবেট অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বিবিসির সংবাদদাতারা কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, গোলাগুলির সময় ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে ফেলে আসা যানবাহন বা অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করতে পুনরায় সেখানে যেতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন।

১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা
উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মর্মান্তিক এই গুলিবর্ষণের ঘটনার পর ওরেমের এই ক্যাম্পাসটি আপাতত বন্ধ থাকবে। ইউভিইউ ক্যাম্পাস ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সব ক্লাস (সশরীরে বা ভার্চুয়াল), ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ইভেন্ট এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দয়া করে সেভাবে পরিকল্পনা করুন এবং আপনার সময়সূচিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এখন একটি লাল ব্যানারের সতর্কতা রয়েছে, যেখানে ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে আসা অতিথি চার্লি কার্কের মর্মান্তিক মৃত্যুতে মর্মাহত ও শোকাহত। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।

কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না
কার্ককে গুলি করার সময় তিন হাজারের বেশি লোক আউটডোর এই ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন যে, লোকজন সামনে এগিয়ে আসছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব, মঞ্চে কার্ককে রক্তাক্ত অবস্থা কাতরাতে দেখা এবং জনগণ আতঙ্কে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে প্রথম বর্ষের ছাত্র গ্যাভিন বলেন, এটা একটু অবাস্তব। বিশেষ করে তখন এটা স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, সবাই প্রার্থনা শুরু করে… তারপর আমরা দৌড়াতে শুরু করি।

এই ডিবেট অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডাম বার্থেলোমিউ। ক্যাম্পাসে চার্লি কার্ক আসার প্রতিবাদে যারা বিক্ষোভ করছিলেন তিনি তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, একটি গুলির শব্দ শুনতে পান এবং সবাই মেঝেতে পড়ে যান।

বিবিসিকে তিনি বলেন, সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং মানুষজন ওই স্থান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। বার্থেলোমিউ জানান, কার্কের বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ৬০ জন বিক্ষোভ করছিল। গুলিবর্ষণের ঘটনার আগে অনুষ্ঠানের পরিবেশ বেশ ভালো ছিল এবং লোকজন ‘ইউএসএ’ বলে স্লোগান দিচ্ছিল।

কার্কের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করছিলেন তারা অশ্লীল ভাষায় স্লোগান দিচ্ছিল বলে জানান তিনি। বার্থেলোমিউ বলেন, অনুষ্ঠানে কোনো নিরাপত্তা না থাকায় তিনি ‘অবাক’ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, কেউ আমাকে থামায়নি অথবা আমার ব্যাগও তল্লাশি করেনি।

চার্লি কার্ক কে ছিলেন?
কার্ক ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে হাই প্রোফাইল কনজারভেটিভ অ্যাকটিভিস্ট এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের একজন।
একইসঙ্গে তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী। ২০১২ সালে ১৮ বছর বয়সে কার্ক টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএর প্রতিষ্ঠা করেন।

এটি একটি ছাত্র সংগঠন যেটার লক্ষ্য উদারপন্থি যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে রক্ষণশীল আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া।
ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বাস এবং পারিবারিক মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বিতর্কের ক্লিপ তার সোশ্যাল মিডিয়া এবং দৈনিক পডকাস্টে প্রায়ই শেয়ার করা হতো। কার্ক দম্পতির ছোট দুই সন্তান আছে।

কার্কের নিহতের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টরা নিহত কার্কের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং সহিংসতার প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩ তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিবিসি নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, আজ একজন তরুণকে তার রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করার সময় ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স- এ এক পোস্টে বুশের পূর্বসূরি বিল ক্লিনটন বলেন, তিনি চার্লি কার্কের হত্যায় দুঃখিত এবং ক্ষুব্ধ এবং আমি আশা করি আমরা সকলেই কিছু গুরুতর আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে যাব। শান্তিপূর্ণভাবে বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করবো। হিলারি এবং আমি এরিকা ও তাদের ছোট দুই সন্তান এবং তাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি।

বুশের উত্তরসূরি বারাক ওবামাও এক্স-এ এক পোস্টে তিনি এবং তার স্ত্রী মিশেল আজ রাতে চার্লির পরিবারের জন্য প্রার্থনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

ওবামা লিখেছেন, আমরা এখনও জানি না চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা করতে ওই ব্যক্তিকে কী উৎসাহিত করেছিল, তবে আমাদের গণতন্ত্রে এ ধরনের ঘৃণ্য সহিংসতার কোনো স্থান নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডের এক্স এ লিখেছেন, আমাদের দেশে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এটা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। জিল এবং আমি চার্লি কার্কের পরিবার এবং প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করছি।

কার্কের মৃত্যুতে শোক প্রকাশকারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রও রয়েছেন। তিনি লিখেছেন, আবারও একটি বুলেট একটি যুগের সবচেয়ে স্পষ্টবাদী সত্যবাদীকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।

কেনেডির বাবা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডি ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্টের জন্য প্রচারণা চালানোর সময় নিহত হন। এছাড়া ৩৫ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নিহত হন তার চাচা জন এফ কেনেডি (জেএফকে)।

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বলেছেন, সহিংসতা চার্লি কার্কের কণ্ঠকে দমন করতে পারেনি এবং কনজারভেটিভ অ্যাকটিভিস্টদের কথা শোনা অব্যাহত থাকবে। মাইক কেলি বিবিসিকে বলেন, এই সহিংসতা আমেরিকার জনগণকে দমন করতে পারবে না।

ভয়-ভীতি দেখানো ও সহিংসতা আমেরিকার জনগণের ওপর কাজ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের বাক স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে এগিয়ে যাব এবং সেভাবেই প্রচার চালাবো যেভাবে চার্লি সারা জীবন করেছিলেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

চার্লি কার্ক হত্যাকাণ্ড, বামপন্থীদের দুষছেন ট্রাম্প ও মাস্ক

আপডেট সময়ঃ ০৩:৪২:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন কনজারভেটিভ অ্যাকটিভিস্ট চার্লি কার্ক। তিনি ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন প্রভাবশালী মিত্র। আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আউটডোর ডিবেট আয়োজনের জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। খবর বিবিসির।

এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে শোকার্ত এবং ক্ষুব্ধ’ বলে জানিয়েছেন। তিনি এটাকে আমেরিকার জন্য একটি অন্ধকার মুহূর্ত বলে অভিহিত করেছেন। রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

এই ভিডিও বার্তায় তিনি আরও বলেছেন, তার প্রশাসন এই নৃশংসতা ও অন্যান্য রাজনৈতিক সহিংসতায় অংশ নিয়েছেন এমন প্রতিটি ব্যক্তিকে খুঁজে বের করবে। উগ্র বামপন্থি রাজনৈতিক সহিংসতা অনেক নিরীহ মানুষকে আঘাত করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

গত বছর তাকে হত্যার চেষ্টা এবং ইউনাইটেড হেলথ কেয়ারের সিইও ব্রায়ান থম্পসনকে হত্যার কথাও উল্লেখ করেন ট্রাম্প। দেশের এই গভীর রাজনৈতিক বিভক্তির জন্য ট্রাম্প বরাবরই ‘উগ্র বামপন্থিদের দোষ দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন।

সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন তার এমন সব বক্তব্য রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দিয়েছে।এফবিআই পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল জানিয়েছেন, আগেই আটক এক সন্দেহভাজনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ছাদ থেকে গুলি করা হয়েছে।

গুলি চালানোর পর অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিও বিবিসি ভেরিফাই খতিয়ে দেখেছে। অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, গুলি করার আগে ৩১ বয়সী কার্ককে গণহত্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হচ্ছে। ১৮ বছর বয়সে কার্ক টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ নামে একটি কনজারভেটিভ গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এবং তার পরিবার মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

প্রায় ২০০ গজ দূর থেকে তাকে গুলি করা হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, প্রায় ২০০ মিটার (১৮২ মিটার) দূরের একটি ভবন থেকে গুলি চালানো হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস এবং ফক্স নিউজসহ যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াগুলোতে এই বিবৃতি পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখপাত্র অ্যালেন ট্রিয়ানের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১২টা ২০ মিনিটে প্রায় ২০০ গজ দূরের একটি ভবন থেকে গুলি চালানো হয়। পরে আহত অবস্থায় তার নিরাপত্তাকর্মীরা তাৎক্ষণিকভাবে তাকে সরিয়ে নেন।

হত্যাকারীর খোঁজে ঘরে ঘরে পুলিশ
ঘটনার পরপরই পুলিশ শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে ক্যাম্পাস ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক এক্স পোস্টে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ এবং ক্লাস বাতিল করা হয়েছে। পুলিশ এ বিষয়ে তদন্ত করছে।

দুজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পরে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারে বাধার দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এই হামলার সঙ্গে তাদের যোগসূত্র রয়েছে কি না তা এখনো স্পষ্ট নয়।

চার্লি কার্কের হত্যাকারীর খোঁজে পুলিশ ক্যাম্পাসের আশেপাশের এলাকার ঘরে ঘরে যাচ্ছে। ডিবেট অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে ক্যাম্পাসের বাইরে বিবিসির সংবাদদাতারা কথা বলেছেন। তারা জানিয়েছেন, গোলাগুলির সময় ক্যাম্পাস থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় সেখানে ফেলে আসা যানবাহন বা অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করতে পুনরায় সেখানে যেতে পারেননি।

বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভারী অস্ত্রে সজ্জিত পুলিশ এলাকায় ঘোরাফেরা করছেন।

১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা
উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মর্মান্তিক এই গুলিবর্ষণের ঘটনার পর ওরেমের এই ক্যাম্পাসটি আপাতত বন্ধ থাকবে। ইউভিইউ ক্যাম্পাস ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এই সময়ের মধ্যে সব ক্লাস (সশরীরে বা ভার্চুয়াল), ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ইভেন্ট এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দয়া করে সেভাবে পরিকল্পনা করুন এবং আপনার সময়সূচিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এখন একটি লাল ব্যানারের সতর্কতা রয়েছে, যেখানে ১১ থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের অবহিত করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উটাহ ভ্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আমরা আমাদের ক্যাম্পাসে আসা অতিথি চার্লি কার্কের মর্মান্তিক মৃত্যুতে মর্মাহত ও শোকাহত। তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই।

কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না
কার্ককে গুলি করার সময় তিন হাজারের বেশি লোক আউটডোর এই ইভেন্টে উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন যে, লোকজন সামনে এগিয়ে আসছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব, মঞ্চে কার্ককে রক্তাক্ত অবস্থা কাতরাতে দেখা এবং জনগণ আতঙ্কে পালিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে।

বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজকে প্রথম বর্ষের ছাত্র গ্যাভিন বলেন, এটা একটু অবাস্তব। বিশেষ করে তখন এটা স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, সবাই প্রার্থনা শুরু করে… তারপর আমরা দৌড়াতে শুরু করি।

এই ডিবেট অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডাম বার্থেলোমিউ। ক্যাম্পাসে চার্লি কার্ক আসার প্রতিবাদে যারা বিক্ষোভ করছিলেন তিনি তাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। তিনি জানান, একটি গুলির শব্দ শুনতে পান এবং সবাই মেঝেতে পড়ে যান।

বিবিসিকে তিনি বলেন, সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এবং মানুষজন ওই স্থান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। বার্থেলোমিউ জানান, কার্কের বিরুদ্ধে ৫০ থেকে ৬০ জন বিক্ষোভ করছিল। গুলিবর্ষণের ঘটনার আগে অনুষ্ঠানের পরিবেশ বেশ ভালো ছিল এবং লোকজন ‘ইউএসএ’ বলে স্লোগান দিচ্ছিল।

কার্কের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করছিলেন তারা অশ্লীল ভাষায় স্লোগান দিচ্ছিল বলে জানান তিনি। বার্থেলোমিউ বলেন, অনুষ্ঠানে কোনো নিরাপত্তা না থাকায় তিনি ‘অবাক’ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, কেউ আমাকে থামায়নি অথবা আমার ব্যাগও তল্লাশি করেনি।

চার্লি কার্ক কে ছিলেন?
কার্ক ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে হাই প্রোফাইল কনজারভেটিভ অ্যাকটিভিস্ট এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের একজন।
একইসঙ্গে তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন বিশ্বস্ত সহযোগী। ২০১২ সালে ১৮ বছর বয়সে কার্ক টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএর প্রতিষ্ঠা করেন।

এটি একটি ছাত্র সংগঠন যেটার লক্ষ্য উদারপন্থি যুক্তরাষ্ট্রের কলেজগুলোতে রক্ষণশীল আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়া।
ট্রান্সজেন্ডার পরিচয়, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্বাস এবং পারিবারিক মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বিতর্কের ক্লিপ তার সোশ্যাল মিডিয়া এবং দৈনিক পডকাস্টে প্রায়ই শেয়ার করা হতো। কার্ক দম্পতির ছোট দুই সন্তান আছে।

কার্কের নিহতের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্টরা নিহত কার্কের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং সহিংসতার প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩ তম প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বিবিসি নিউজকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, আজ একজন তরুণকে তার রাজনৈতিক মতামত প্রকাশ করার সময় ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স- এ এক পোস্টে বুশের পূর্বসূরি বিল ক্লিনটন বলেন, তিনি চার্লি কার্কের হত্যায় দুঃখিত এবং ক্ষুব্ধ এবং আমি আশা করি আমরা সকলেই কিছু গুরুতর আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে যাব। শান্তিপূর্ণভাবে বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য আমাদের প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করবো। হিলারি এবং আমি এরিকা ও তাদের ছোট দুই সন্তান এবং তাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি।

বুশের উত্তরসূরি বারাক ওবামাও এক্স-এ এক পোস্টে তিনি এবং তার স্ত্রী মিশেল আজ রাতে চার্লির পরিবারের জন্য প্রার্থনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

ওবামা লিখেছেন, আমরা এখনও জানি না চার্লি কার্ককে গুলি করে হত্যা করতে ওই ব্যক্তিকে কী উৎসাহিত করেছিল, তবে আমাদের গণতন্ত্রে এ ধরনের ঘৃণ্য সহিংসতার কোনো স্থান নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট জো বাইডের এক্স এ লিখেছেন, আমাদের দেশে এ ধরনের সহিংসতার কোনো স্থান নেই। এটা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। জিল এবং আমি চার্লি কার্কের পরিবার এবং প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করছি।

কার্কের মৃত্যুতে শোক প্রকাশকারীদের মধ্যে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা সচিব রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রও রয়েছেন। তিনি লিখেছেন, আবারও একটি বুলেট একটি যুগের সবচেয়ে স্পষ্টবাদী সত্যবাদীকে চুপ করিয়ে দিয়েছে।

কেনেডির বাবা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডি ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্টের জন্য প্রচারণা চালানোর সময় নিহত হন। এছাড়া ৩৫ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন নিহত হন তার চাচা জন এফ কেনেডি (জেএফকে)।

রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বলেছেন, সহিংসতা চার্লি কার্কের কণ্ঠকে দমন করতে পারেনি এবং কনজারভেটিভ অ্যাকটিভিস্টদের কথা শোনা অব্যাহত থাকবে। মাইক কেলি বিবিসিকে বলেন, এই সহিংসতা আমেরিকার জনগণকে দমন করতে পারবে না।

ভয়-ভীতি দেখানো ও সহিংসতা আমেরিকার জনগণের ওপর কাজ করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমাদের বাক স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার নিয়ে এগিয়ে যাব এবং সেভাবেই প্রচার চালাবো যেভাবে চার্লি সারা জীবন করেছিলেন।