নিজস্ব প্রতিবেদক :
মহাসড়কে ডাকাতি করার জন্য একটি চক্রের সদস্যরা অন্ধকার রাস্তায় ওঁৎ পেতে থাকতেন। পূর্ব পরিকল্পিত নির্ধারিত স্থানের নিকটবর্তী স্টেশনে টার্গেট বাস, ট্রাক ও মাইক্রোবাস সম্পর্কে সংকেত দিতেন ডাকাত দলের সদস্যরা। সংকেত পাওয়া মাত্রই চক্রের অন্য সদস্যরা দ্রুত গাছ কেটে রাস্তায় ফেলে রাখতেন। পরে চালক ও যাত্রীদের অস্ত্র দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়ে পালিয়ে যেতেন তারা। যেখানে গাছ কাটার সুযোগ থাকতো না সেখানে তারা চালকের চোখে লেজার লাইটের তীব্র আলো ফেলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডাকাতি করতেন। এমন অভিযোগে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে ঢাকার সাভার থানার বালিয়ারপুর মহাসড়কে ডাকাতি প্রস্তুতিকালীন দুর্র্ধষ আন্তঃজেলা ডাকাত চক্র ‘ঠান্ডা শামীম বাহিনী’র সর্দারসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে দেশি ও বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- ‘ঠান্ডা শামীম বাহিনী’র মূল হোতা মো. শামিম ওরফে সব্দুল (৩০), মো. আনিসুর রহমান ওরফে ঠান্ডা (৪৫), মো. সালাউদ্দিন (২৩), মো. ইখতিয়ার উদ্দিন (৩১), মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫), মো. জাহাঙ্গীর সরকার (৪০), মো. সজিব ইসলাম (২৫), মো. জীবন সরকার (৩৪), শ্রী স্বপন চন্দ্র রায় (২১), মো. মিনহাজুর ইসলাম (২০) ও শ্রী মাধব চন্দ্র সরকার (২৬)। এসময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি পাইপগান, দুটি ওয়ান শুটারগান, ছয় রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, একটি চাপাতি, দুটি রামদা, একটি চাইনিজ কুড়াল, দুটি টর্চ লাইট, দুটি হ্যাক্সো ব্লেড, একটি দা, দুটি লেজার লাইট দুটি ও একটি হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়। আজ শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, ঠান্ডা শামীম বাহিনীর মূল হোতা শামীম ওরফে সব্দুল ও তাদের সেকেন্ড ইন কমান্ড আনিসুর ওরফে ঠান্ডা। তাদের নাম অনুসারে এ বাহিনীর নাম রাখা হয় ঠান্ডা শামীম। এ বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও সড়কে ডাকাতি, গাছ কেটে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাত্রীবাহী বাস, গরুবাহী ট্রাক, মালবাহী ট্রাক ও বিভিন্ন মালামালের গুদামে ডাকাতি করে আসছে। খন্দকার আল মঈন বলেন, এছাড়াও এ চক্রের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গতিবিধির ওপর নজরদারি করে মূল ডাকাত দলের কাছে তথ্য সরবরাহ করতেন। এসব ডাকাতির ঘটনায় শামীম ও আনিসুর ওরফে ঠান্ডা একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। জেল হাজতে থাকার সময় তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন অপরাধীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। পরবর্তীসময়ে জামিনে বের হয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে ডাকাত বাহিনী গড়ে তোলেন। তাদের বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। এছাড়াও তারা যে এলাকায় ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে ওই এলাকার স্থানীয় অপরাধী, মাদক কারবারি, পরিবহন শ্রমিক ও নৈশ প্রহরীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সম্পর্ক গড়ে তোলে। ডাকাতিই হচ্ছে তাদের মূল পেশা। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গ্রেপ্তার সালাউদ্দিন ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করতেন। পরবর্তীসময়ে সার্বিক বিচার বিবেচনা করে আনিসুর ওরফে ঠান্ডা, শামীম ও সালাউদ্দিন একত্রে বসে ডাকাতির মূল পরিকল্পনা করে। কোন জায়গায় কখন কীভাবে ডাকাতি করা হবে, ডাকাতির তথ্য সংগ্রহের জন্য কাকে নিয়োগ করতে হবে, কীভাবে ডাকাতি সম্পন্ন করা হবে ইত্যাদি পরিকল্পনা করতেন তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতির জন্য নির্ধারিত স্থানে সালাউদ্দিন আগেই গোপনে অবস্থান করে তথ্য সংগ্রহ করতেন। ডাকাতি শেষে নির্বিঘেœ ঘটনাস্থল ত্যাগ করার বিষয়ে ঠান্ডা শামীম পরামর্শ দিতেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ইখতিয়ার উদ্দিন এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য। সে পেশায় ড্রাইভার। বিভিন্ন সময় ডাকাতির ধরন অনুযায়ী মিনি ট্রাক ও মাইক্রোবাসসহ চাহিদা অনুযায়ী যানবাহন সরবরাহ করে নিজে চালকের ভূমিকা পালন করতেন। এ ছাড়া গ্রেপ্তার সাইফুল পেশায় রাজমিস্ত্রি। ডাকাতি করার সময় সে তালা ভাঙা, দেওয়াল ভাঙা, গাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করাসহ ডাকাতির মালামাল বিক্রির দায়িত্ব পালন করতেন। র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার মিনহাজুল ও মাধব চন্দ্র ‘ঠান্ডা শামীম বাহিনী’র তথ্যদাতার কাজ করতেন। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে ঠান্ডা শামীম বাহিনীর যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ডাকাতি আগে রকি ও ডাকাতির সময় স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে অবস্থান করে ডাকাতিতে অংশ নেয়। মহাসড়কে ডাকাতির সময় গাছ কেটে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও লেজার লাইটের আলো ফেলতেন তারা। গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর পেশায় ইট ভাটার শ্রমিক, সজীব ও জীবন পেশায় গার্মেন্টস শ্রমিক, স্বপন চন্দ্র পরিবহন শ্রমিক। তারা এসব পেশার আড়ালে ডাকাত দলের সঙ্গে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ডাকাতি শেষে তারা আবার নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত হয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার আনিসুর ওরফে ঠান্ডা ২০০৪ সাল থেকে ডাকাতি করে আসছিল। ২০১৬ সালে শামীমের সঙ্গে তার পরিচয়ের সূত্রে তারা একসঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করতেন। এছাড়াও ঠান্ডা শামীম বাহিনী তাদের ডাকাতির ধরন এবং চাহিদা অনুযায়ী ভাড়ায় লোকবল সংগ্রহ করে থাকেন। এই বাহিনী এরইমধ্যে গাইবান্ধা, সাভার, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল এলাকায় বহু ডাকাতি করেছে। তারা বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছে। ডাকাতি থেকে প্রাপ্ত মালামালের অর্ধেক আনিসুর ওরফে ঠান্ডা এবং শামীম ভাগ করে নিতেন। আসামিরা সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়ার শেরপুর এলাকার মহাসড়কে ডাকাতির কথা স্বীকার করেন। এছাড়াও তারা সাভারের হেমায়েতপুরে একটি ব্যাটারির কারখানায় ডাকাতির পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তারা গ্রেপ্তার হয়। তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার ‘ঠান্ডা শামীম বাহিনী’র মূল হোতা শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সাতটি ডাকাতি মামলা ও আনিসুর ওরফে ঠান্ডার বিরুদ্ধে ডাকাতি, মাদক ও বিভিন্ন অপরাধের পাঁচটি মামলা রয়েছে।
সর্বশেষঃ
চালকের চোখে লেজার লাইট ফেলে মহাসড়কে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ১১
-
দৈনিক আইন বার্তা
- আপডেট সময়ঃ ০৮:২৭:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২
- ২২৩ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ