ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

‘চিলে নেওয়া কানের’ পেছনে দৌড়ালেন বিএনপি নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময়ঃ ০৯:০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার: প্রচার চলছে মসজিদের জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজটি করেছেন রাজশাহীর হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বলা হচ্ছে, চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে মসজিদের ১ বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাস্তবে কোনো জমিই বিক্রি হয়নি। এ প্রেক্ষিতে গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, মসজিদের কোনো জমি বিক্রি হয়নি। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে স্থানীয় বিএনপির নেতারা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। এরপর বিএনপি নেতারাও মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তবে এবার তারা জমি বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলেননি। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছেন, জমি বিক্রি করার চেষ্টা হয়েছিল।

এই মসজিদটি রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠ পবা উপজেলার আদাড়িয়াপাড়ায়। মসজিদের জমি বিক্রির খবরে স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকদিন ধরেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছিল। এখন জমি বিক্রি হয়নি শুনে স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি নেতাদের কথা শুনে চিলে কান নেওয়ার মতোই তারা ‘চিলের’ পেছনে ছুটেছেন। জমি বিক্রিই হয়নি। এর ভেতরে আসলে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি।

ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর সুরা কর্মপরিষদ সদস্য ও ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক। ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত একটানা পাঁচবার তিনি পবার হড়গ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এবং বর্তমানেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে জামায়াত তাকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে আদাড়িয়াপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৯ সালে ওই এলাকায় একটি গোরস্থানও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেওয়া হয় যে, আবুল কালাম আজাদ ওই মসজিদের ১ বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান বলছেন, জমি বিক্রি করা হয়নি।

মসজিদের পাশেই রমজান আলী নামের এক ব্যক্তির সাড়ে ৪ কাঠা জমি ছিল। প্রথমে নিজের টাকায় এখান থেকে সোয়া ২ কাঠা জমি তিনি মসজিদকে কিনে দেন। পরে মুসল্লিরা বাকি সোয়া ২ কাঠা জমিও কিনে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তখন নগদ টাকা ছিল না। তাই জমির মালিককে তিনি অন্য জায়গায় মসজিদের ২ কাঠা জমি দিতে চান এবং নগদ ১ লাখ টাকা দেন।

এখন স্থানীয় মুসল্লিরা দাবি করছেন, জায়গা সম্প্রসারণ হওয়ায় মসজিদটিও যেন সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু মসজিদ সম্প্রসারণের টাকা নেই। তাই মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত হয়, ১ বিঘা জমি বিক্রি করা হবে। আর জমির বিনিময়ে ২ কাঠা জমি ওই ব্যক্তিকে দেওয়া হবে। এ জন্য কার্যবিবরণীতে বিষয়টি লিখে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অনুমোদনের জন্য। এরইমধ্যে অপপ্রচার শুরু হয় যে, জমি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

তবে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আদাড়িয়াপাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। সেখানে ছিলেন হড়গ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, পাশের দামকুড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো. সোহেল ও মসজিদ কমিটির সদস্য তসলিম উদ্দিন, আসগোর আলী ও মাইনুল মাষ্টার।

সংবাদ সম্মেলনে তসলিম বলেন, জমি আসলে বিক্রি হয়নি। তবে ২ কাঠা জমি বিক্রির কথা থাকলেও ১ বিঘা জমি বিক্রির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘কোনো জমিই বিক্রি হয়নি। মসজিদ কমিটির সদস্য তসলিম উদ্দিন বিএনপি করেন। তিনিই বিএনপি নেতাকর্মীদের দিয়ে অপপ্রচার চালান যে মসজিদের জমি বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি মসজিদের রেজুলেশন খাতা জোরপূর্বক ছিনিয়েছে, সেই খাতা এখন পর্যন্ত জমা দেন নাই। এখন তা প্রমাণ করতে না পেরে বলছেন জমি বিক্রির প্রস্তুতি চলছিল। তিনি বলেন, জমি ইউএনওর অনুমতি ছাড়া বিক্রি করা যায় না। সে প্রক্রিয়াতেই যাওয়া হয়েছিল মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য। কিন্তু তসলিম উদ্দিন তার দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে বিষয়টি ভিন্নভাবে প্রচার করেছেন।

তসলিম উদ্দিনের ভাতিজা সাহেব আলী বলেন, ‘জমি বিক্রি করার বিষয়টি পুরোটিই অপপ্রচার। আমার চাচা প্রথমে এই অপপ্রচার করেন। এখন দেখছি বিষয়টা চিলে কান নেওয়ার মতো।’ মসজিদ কমিটির সদস্য শামসুল আলম, আবুল কালাম, সাবের আলী, বাবর আলী, আতাউর রহমান, তরিকুল ইসলাম ও আজাউল ইসলামের সঙ্গেও কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তারাও এমন প্রচারণাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা অপপ্রচার বলছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি টানা পাঁচবার এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছি। এই অপপ্রচারকারীরা কোনোদিন আমাকে ভোট দেয়নি। প্রত্যেক ভোটের আগে কিছু না কিছু অপপ্রচার করে। তারা দেখছে যে, এসব করেও পাঁচবার চেয়ারম্যান হওয়া ঠেকানো যায়নি, এবার আবার আমি এমপি হতে পারি। সে জন্য এমন অপপ্রচার।’

বিএনপি নেতাদের সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যানের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর দেননি। তড়িঘড়ি করে তারা ‘সংবাদ সম্মেলন শেষ’ ঘোষণা দিয়ে উঠে যান।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

‘চিলে নেওয়া কানের’ পেছনে দৌড়ালেন বিএনপি নেতারা

আপডেট সময়ঃ ০৯:০৪:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার: প্রচার চলছে মসজিদের জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আর এই কাজটি করেছেন রাজশাহীর হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। তিনি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে বলা হচ্ছে, চেয়ারম্যান ইতোমধ্যে মসজিদের ১ বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। বাস্তবে কোনো জমিই বিক্রি হয়নি। এ প্রেক্ষিতে গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, মসজিদের কোনো জমি বিক্রি হয়নি। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে স্থানীয় বিএনপির নেতারা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন। এরপর বিএনপি নেতারাও মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তবে এবার তারা জমি বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলেননি। সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেছেন, জমি বিক্রি করার চেষ্টা হয়েছিল।

এই মসজিদটি রাজশাহী শহরের উপকণ্ঠ পবা উপজেলার আদাড়িয়াপাড়ায়। মসজিদের জমি বিক্রির খবরে স্থানীয়দের মধ্যে কয়েকদিন ধরেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছিল। এখন জমি বিক্রি হয়নি শুনে স্থানীয়রা বলছেন, বিএনপি নেতাদের কথা শুনে চিলে কান নেওয়ার মতোই তারা ‘চিলের’ পেছনে ছুটেছেন। জমি বিক্রিই হয়নি। এর ভেতরে আসলে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি।

ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর সুরা কর্মপরিষদ সদস্য ও ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক। ১৯৯৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত একটানা পাঁচবার তিনি পবার হড়গ্রাম ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন এবং বর্তমানেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে জামায়াত তাকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তিনি ১৯৮৬ সাল থেকে আদাড়িয়াপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮৯ সালে ওই এলাকায় একটি গোরস্থানও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।

গত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেওয়া হয় যে, আবুল কালাম আজাদ ওই মসজিদের ১ বিঘা জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে চেয়ারম্যান বলছেন, জমি বিক্রি করা হয়নি।

মসজিদের পাশেই রমজান আলী নামের এক ব্যক্তির সাড়ে ৪ কাঠা জমি ছিল। প্রথমে নিজের টাকায় এখান থেকে সোয়া ২ কাঠা জমি তিনি মসজিদকে কিনে দেন। পরে মুসল্লিরা বাকি সোয়া ২ কাঠা জমিও কিনে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তখন নগদ টাকা ছিল না। তাই জমির মালিককে তিনি অন্য জায়গায় মসজিদের ২ কাঠা জমি দিতে চান এবং নগদ ১ লাখ টাকা দেন।

এখন স্থানীয় মুসল্লিরা দাবি করছেন, জায়গা সম্প্রসারণ হওয়ায় মসজিদটিও যেন সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু মসজিদ সম্প্রসারণের টাকা নেই। তাই মসজিদ কমিটির সিদ্ধান্ত হয়, ১ বিঘা জমি বিক্রি করা হবে। আর জমির বিনিময়ে ২ কাঠা জমি ওই ব্যক্তিকে দেওয়া হবে। এ জন্য কার্যবিবরণীতে বিষয়টি লিখে কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর নেওয়া হচ্ছিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে অনুমোদনের জন্য। এরইমধ্যে অপপ্রচার শুরু হয় যে, জমি বিক্রি করে দেয়া হয়েছে।

তবে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আদাড়িয়াপাড়া এলাকায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। সেখানে ছিলেন হড়গ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, পাশের দামকুড়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক মো. সোহেল ও মসজিদ কমিটির সদস্য তসলিম উদ্দিন, আসগোর আলী ও মাইনুল মাষ্টার।

সংবাদ সম্মেলনে তসলিম বলেন, জমি আসলে বিক্রি হয়নি। তবে ২ কাঠা জমি বিক্রির কথা থাকলেও ১ বিঘা জমি বিক্রির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল।
জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘কোনো জমিই বিক্রি হয়নি। মসজিদ কমিটির সদস্য তসলিম উদ্দিন বিএনপি করেন। তিনিই বিএনপি নেতাকর্মীদের দিয়ে অপপ্রচার চালান যে মসজিদের জমি বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি মসজিদের রেজুলেশন খাতা জোরপূর্বক ছিনিয়েছে, সেই খাতা এখন পর্যন্ত জমা দেন নাই। এখন তা প্রমাণ করতে না পেরে বলছেন জমি বিক্রির প্রস্তুতি চলছিল। তিনি বলেন, জমি ইউএনওর অনুমতি ছাড়া বিক্রি করা যায় না। সে প্রক্রিয়াতেই যাওয়া হয়েছিল মসজিদ সম্প্রসারণের জন্য। কিন্তু তসলিম উদ্দিন তার দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে বিষয়টি ভিন্নভাবে প্রচার করেছেন।

তসলিম উদ্দিনের ভাতিজা সাহেব আলী বলেন, ‘জমি বিক্রি করার বিষয়টি পুরোটিই অপপ্রচার। আমার চাচা প্রথমে এই অপপ্রচার করেন। এখন দেখছি বিষয়টা চিলে কান নেওয়ার মতো।’ মসজিদ কমিটির সদস্য শামসুল আলম, আবুল কালাম, সাবের আলী, বাবর আলী, আতাউর রহমান, তরিকুল ইসলাম ও আজাউল ইসলামের সঙ্গেও কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তারাও এমন প্রচারণাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা অপপ্রচার বলছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমি টানা পাঁচবার এলাকায় ইউপি চেয়ারম্যান হয়েছি। এই অপপ্রচারকারীরা কোনোদিন আমাকে ভোট দেয়নি। প্রত্যেক ভোটের আগে কিছু না কিছু অপপ্রচার করে। তারা দেখছে যে, এসব করেও পাঁচবার চেয়ারম্যান হওয়া ঠেকানো যায়নি, এবার আবার আমি এমপি হতে পারি। সে জন্য এমন অপপ্রচার।’

বিএনপি নেতাদের সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যানের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো উত্তর দেননি। তড়িঘড়ি করে তারা ‘সংবাদ সম্মেলন শেষ’ ঘোষণা দিয়ে উঠে যান।