ঢাকা, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যায় ৭ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে চার্জশিট

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময়ঃ ০৪:১৮:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
  • / ২০ বার পড়া হয়েছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডে সাত মাদক কারবারির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করত। এ চক্রের নেতৃত্বে ছিল মেহেদী হাসান নামে এক মাদক কারবারি। তার সহযোগী মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন উদ্যানে মাদক বিক্রির মূল নেটওয়ার্ক পরিচালনা করত।

চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আখতার মোর্শেদ উল্লেখ করেন, সাম্য ও তার বন্ধুরা প্রায়ই উদ্যানে সময় কাটাতেন এবং মাদক বিক্রি বন্ধে স্থানীয়দের সচেতন করতেন। এতে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে তাদের শত্রুতা তৈরি হয়। ১৩ মে রাতে সেই শত্রুতার জের ধরে সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন শাহরিয়ার আলম সাম্য। ঘটনার দিন রাতে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান তিনি। মুক্তমঞ্চের কাছে কবুতর রাব্বিকে হাতে ইলেকট্রিক ট্রেজারগানসহ দেখতে পান সাম্য। তখন সাম্য তাকে থামতে বলেন। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়। কবুতর রাব্বির চিৎকারে মেহেদী, রিপন, পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ও রবিন ঘটনাস্থলে এসে সাম্য ও তার বন্ধুদের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় কবুতর রাব্বির হাতে থাকা সুইচগিয়ার (চাকু) দিয়ে সাম্যর ঊরুতে আঘাত করলে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তদন্তে জানা যায়, ঘটনার আগেই আসামি মেহেদী হাসান তার সহযোগীদের সুইচগিয়ার ও ইলেকট্রিক ট্রেজারগান কিনে দিয়েছিল, যাতে প্রতিপক্ষের হামলার মুখে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে। কিন্তু এই অস্ত্রই সাম্য হত্যার হাতিয়ার হয়।

ঘটনার পর সাম্যর বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশ বৃহস্পতিবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাতজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন।

অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সুজন সরকার, তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদারকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

তদন্তে দেখা গেছে, এরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। বরং হামলার সময় সাম্যকে রক্ষা করতে গিয়ে তারাও আহত হন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, আসামি মেহেদী হাসান ছিলেন গাঁজা বিক্রির দলনেতা। রিপন ও কবুতর রাব্বি তার কাছ থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে উদ্যানে খুচরা বিক্রি করত এবং বিক্রির টাকা প্রতিদিন মেহেদীর কাছে জমা দিত। ঘটনার কয়েক দিন আগে রিপন ও রাব্বি বিক্রির পুরো টাকা জমা না দিলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সেই উত্তেজনা থেকেই মেহেদী তার সহযোগীদের অস্ত্র দেয় ও সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলে।

তদন্ত কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। তদন্তে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে যে, মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়াই হত্যার মূল কারণ। সাতজন আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের পাঁচটি ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যায় ৭ মাদক কারবারির বিরুদ্ধে চার্জশিট

আপডেট সময়ঃ ০৪:১৮:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডে সাত মাদক কারবারির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় ছাত্রদল নেতা সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়।

চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করত। এ চক্রের নেতৃত্বে ছিল মেহেদী হাসান নামে এক মাদক কারবারি। তার সহযোগী মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন উদ্যানে মাদক বিক্রির মূল নেটওয়ার্ক পরিচালনা করত।

চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর আখতার মোর্শেদ উল্লেখ করেন, সাম্য ও তার বন্ধুরা প্রায়ই উদ্যানে সময় কাটাতেন এবং মাদক বিক্রি বন্ধে স্থানীয়দের সচেতন করতেন। এতে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে তাদের শত্রুতা তৈরি হয়। ১৩ মে রাতে সেই শত্রুতার জের ধরে সাম্যকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন শাহরিয়ার আলম সাম্য। ঘটনার দিন রাতে বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান তিনি। মুক্তমঞ্চের কাছে কবুতর রাব্বিকে হাতে ইলেকট্রিক ট্রেজারগানসহ দেখতে পান সাম্য। তখন সাম্য তাকে থামতে বলেন। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি হয়। কবুতর রাব্বির চিৎকারে মেহেদী, রিপন, পাপেল, সোহাগ, হৃদয় ও রবিন ঘটনাস্থলে এসে সাম্য ও তার বন্ধুদের ওপর হামলা চালায়।

এ সময় কবুতর রাব্বির হাতে থাকা সুইচগিয়ার (চাকু) দিয়ে সাম্যর ঊরুতে আঘাত করলে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

তদন্তে জানা যায়, ঘটনার আগেই আসামি মেহেদী হাসান তার সহযোগীদের সুইচগিয়ার ও ইলেকট্রিক ট্রেজারগান কিনে দিয়েছিল, যাতে প্রতিপক্ষের হামলার মুখে তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে। কিন্তু এই অস্ত্রই সাম্য হত্যার হাতিয়ার হয়।

ঘটনার পর সাম্যর বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে ডিবি পুলিশ বৃহস্পতিবার ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাতজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে।

চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন।

অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সুজন সরকার, তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক ও পলাশ সরদারকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে।

তদন্তে দেখা গেছে, এরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। বরং হামলার সময় সাম্যকে রক্ষা করতে গিয়ে তারাও আহত হন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, আসামি মেহেদী হাসান ছিলেন গাঁজা বিক্রির দলনেতা। রিপন ও কবুতর রাব্বি তার কাছ থেকে গাঁজা সংগ্রহ করে উদ্যানে খুচরা বিক্রি করত এবং বিক্রির টাকা প্রতিদিন মেহেদীর কাছে জমা দিত। ঘটনার কয়েক দিন আগে রিপন ও রাব্বি বিক্রির পুরো টাকা জমা না দিলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সেই উত্তেজনা থেকেই মেহেদী তার সহযোগীদের অস্ত্র দেয় ও সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলে।

তদন্ত কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্যকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। তদন্তে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে যে, মাদক বিক্রিতে বাধা দেওয়াই হত্যার মূল কারণ। সাতজন আসামির বিরুদ্ধে পেনাল কোডের পাঁচটি ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।