ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ই-পেপার

তপ্ত রোদে চৌকি পেতে শুধুই অপেক্ষা বঙ্গবাজারে

দৈনিক আইন বার্তা
  • আপডেট সময়ঃ ০৯:৪২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৩
  • / ১৩৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :
তিন দিন হয় চৌকি পেতে ব্যবসায় ফেরার চেষ্টা করছেন বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা; বৈশাখের তপ্ত রোদ থেকে নিজেদের বাঁচাতে মাথার ওপর যে ছাতা তারা টাঙিয়েছেন, দুর্ভাগ্যের কবলে পড়া এই মানুষগুলোকে তা সুরক্ষা দিতে পারছে সামান্যই। আজ শনিবার দুপুরে বঙ্গবাজার গিয়ে দেখা গেল, আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত দেশের বৃহৎ এই পাইকারি বাজারে পাইকারদের চাহিদা পূরণের জন্য পণ্যের মজুদ নেই; নেই কোনো পাইকারও। খুচরা ক্রেতাও নেই; তবুও ছোট ছোট চৌকি খাটিয়ে দিনভর বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। মাঝে মধ্যে কয়েকজন খুচরা ক্রেতাকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেলেও কাউকে কেনাকাটা করতে দেখা গেল না। এ পরিস্থিতিতে কিসের আশায় বসে আছেন বিক্রেতারা? আবুল কাশেম নামের এক ব্যবসায়ী বললেন, কাস্টমার নাই। কিন্তু রোদের মধ্যে বইয়া থাকা লাগে। এখন কী করুম?
আমরা আগে সব সময় পাইকারি বেচতাম। এখন একরকম বলতে গেলে দখল করে বসে আছি। এখানে যদি পাকা মার্কেট নির্মাণ করে; তাহলে হয়তো একটা স্থায়ী জায়গা পাব। বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে মেয়েদের পোশাক বিক্রেতা এই ব্যবসায়ী বলেন, এমনিতেই প্রতিবছর ২০ রোজার পর এখানে বেচাবিক্রি কমে যায়। কাস্টমার সব যায় খুচরা দোকানে। তখনও এই সময়ে বিক্রি কম হত। এখন তো পাইকারও নাই, মালও নাই। তবু বসে আছি। গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান পুড়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটি হিসাব দেখিয়েছে। ঈদের আগে বিপুল পরিমাণ নতুন কাপড় তুলেছিলেন দোকানিরা; সেগুলো পুড়ে যাওয়ায় তাদের আর্তনাদ দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন তাদের সহায়তায়। অর্থ সহায়তা আসার পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপ দ্রুত পরিষ্কার করে একটি অংশে বুধবার থেকে দোকানিদের চৌকি পেতে বসার সুযোগ করে দিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সেদিন এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বঙ্গবাজারের পাশের সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সামনে থেকে সোজা দক্ষিণে ফায়ার সার্ভিস হেড কোয়ার্টারের দিকে একটি রাস্তা চলে গেছে। ওই রাস্তার পূর্বপাশে চারটি টিনশেড মার্কেট মিলিয়ে বঙ্গ কমপ্লেক্স। বঙ্গবাজারের পরেই রয়েছে গুলিস্তান মার্কেট, এরপর মহানগরী কমপ্লেক্স ও সবার পূর্বপাশে বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেট। এর মধ্যে রাস্তার পাশ ঘেঁষা বঙ্গবাজার অংশের ভস্মীভূত অংশের ওপরই শুধু ইট-বালি ফেলা হয়েছে। বাকি অংশে এখনও ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। ঢাকার তাপমাত্রা গত শুক্রবার এমনিতেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। বঙ্গবাজার এলাকায় গরম যেন আরেকটু বেশিই অনুভূত হল। এর সঙ্গে রয়েছে ঝাঁঝালো পোড়া গন্ধ। মার্কেট কমিটি কিছু ব্যবসায়ীকে তালিকা করে চৌকি বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বুধবার প্রায় সাতশজনকে দোকান বুঝিয়ে দেওয়া হলে চৈত্রের খরতাপের মধ্যেই ছাতা মাথায় দোকান শুরু করেন তারা। তবে এসব চৌকিতে পণ্যের পরিমাণ যেমন কম ছিল, তেমনি ক্রেতাদের আনাগোনাও ছিল না। ওই সাতশ জনের মধ্যে তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোকিবুল হাসান বাবলু একজন। গত শুক্রবার তিনি বলেন, আগুন লাগার আগে চারটি ইউনিটে তার দুটি দোকান ছিল। আগুনে সবকিছু ছাই হয়ে গেছে। এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় দোকান বসিয়েছেন। আমরা চৌকি বসানোর সুযোগ পেয়েছি। যারা কিছু পণ্য সংগ্রহ করতে পারছে তাদেরকেই মার্কেট কমিটি সুযোগ দিচ্ছে। ধীরে ধীরে সবাই এই সুযোগ পাবে। কিন্তু একেকটা দোকানে ৮/১০ জন কর্মী ছিল। তারা হয়ত চাকরি হারাবে। বেচা-বিক্রি নিয়ে তার ভাষ্য, “এই গরমের ভেতরে এখানে বেচাকেনা সম্ভব? বলেন! এখানে পাইকারি বিক্রি করার মতো কিছুই আমাদের হাতে নাই। আর খুচরা বিক্রি যে করব, এই গরমের মধ্যে কাস্টমার কীভাবে আসবে? ভালো সময়ে তো এই সময়ে এক দিনেই দুই লাখ, চার লাখ টাকা পাইকারি বিক্রি করেছি। এখন কি আর সেই হিসাব করতে পারব? মেয়েদের জিন্সপ্যান্ট বিক্রি করেন বাবলু। কিন্তু দোকান বসানোর পরও পুরোনো ক্রেতারা যোগাযোগ করছে না। তিনি বলেন, পুরোনো ক্রেতারা যোগাযোগ করেনি। আমরা তাদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলে, মার্কেট পুড়ে গেছে। এখন আর কী মাল আনতে যাব। তাদের ব্যবসা তো থেমে নেই। যে কোনো জায়গায় একটা ব্যবস্থা করে ফেলছে। চৌকির দোকানে কথা হয় বেশ কয়েকজন খুচরা ক্রেতার সঙ্গেও। কিন্তু ১০ মিনিট সময় ধরে বিভিন্ন দোকানে ঘুরে কাউকে কিছু কিনতে দেখা যায়নি। মাহমুদুল হাসান নামের একজন ক্রেতা বলেন, তিনি জীবনে এই প্রথম বঙ্গবাজার এসেছেন। জিনিসপত্রের দাম বেশি মনে হওয়ায় কিছু কেনেননি। “বৈশাখের ঘোরাফেরা করতে করতে এই দিকটায় আসলাম। সময় কাটাতে আসলাম। জিনিসপত্রের দাম বেশি। সুযোগ পাইলে স্ত্রীর জন্য একটি ওয়ান পিস জামা কিনব,” বলছিলেন হাসান। আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, “প্রথম ধাপে কারা দোকান পেল আমরা জানি না। মার্কেট কমিটি চৌকি বসানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আমরাও সেইভাবে বসেছি। “কিন্তু ভাই দোকান বসালে কী হবে। কাস্টমার নাই। সকাল থেকে তিন হাজার টাকার মত বিক্রি করছি। কোনো পাইকার আসছে না। আগুন লাগার পর কিছুকিছু মাল টেনে বের করছি। সেগুলো এখন নিয়ে বসছি। সব মাল পুড়ে গেছে। আমার গোডাউনও পুড়ে গেছে। আগের সঙ্গে তুলনা টেনে এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, “দুই দিন হলো দোকানে বসছি। রোদের মধ্যে বসে রইছি। গত বছর এই সময়ে দিনে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা সেল দিছি। আর এখন পুরা দিন চলে গেছে। দুই হাজার টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে গেছে। ছোট চৌকিতে শাড়ি, থ্রি-পিস, প্যান্ট, শার্ট, লুঙ্গিসহ এই ধরনের পোশাক পণ্যগুলো নিয়েই বসেছেন বিক্রেতারা। তবে পরিমাণে খুবই কম। দুপুরের দিকে কয়েকজন বিক্রেতাকে পলিথিনের ত্রিপলে মালামাল ঢেকে জে যেতে দেখা গেল। তানজির নামের আরেক ব্যবসায়ী বললেন, “গতকাল থেকে এখানে বসেছি অনেক আশা নিয়ে। কিন্তু বেচাবিক্রি তো হচ্ছে না। সকাল শেষে দুপুর হল। এখন বিসমিল্লাহ করতে পারি নাই। গত বছর এই সময় আরও ভালো বিক্রি হত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বেচাবিক্রি হতো। পরিচিতি পাইকারি ক্রেতারা যোগাযোগ করে কিনা জানতে চাইলে তানজির বলেন, কিছুকিছু কাস্টমার যোগাযোগ করছে। কিন্তু মার্কেটের এই পরিস্থিতির কারণে তারা আসে না। অন্যান্য জায়গা থেকে মাল কিনে নিয়ে যায়। দোকানের মাল কিছুই আমরা সরাইতে পারি নাই। এক ডিজাইনের একশ পিস মাল চাইলে দিতে পারব না। কাল সারা দিনে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি করছি। আজ সারা দিনে কিছুই বিক্রি করতে পারি নাই।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

তপ্ত রোদে চৌকি পেতে শুধুই অপেক্ষা বঙ্গবাজারে

আপডেট সময়ঃ ০৯:৪২:৩৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক :
তিন দিন হয় চৌকি পেতে ব্যবসায় ফেরার চেষ্টা করছেন বঙ্গবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা; বৈশাখের তপ্ত রোদ থেকে নিজেদের বাঁচাতে মাথার ওপর যে ছাতা তারা টাঙিয়েছেন, দুর্ভাগ্যের কবলে পড়া এই মানুষগুলোকে তা সুরক্ষা দিতে পারছে সামান্যই। আজ শনিবার দুপুরে বঙ্গবাজার গিয়ে দেখা গেল, আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত দেশের বৃহৎ এই পাইকারি বাজারে পাইকারদের চাহিদা পূরণের জন্য পণ্যের মজুদ নেই; নেই কোনো পাইকারও। খুচরা ক্রেতাও নেই; তবুও ছোট ছোট চৌকি খাটিয়ে দিনভর বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। মাঝে মধ্যে কয়েকজন খুচরা ক্রেতাকে ঘোরাফেরা করতে দেখা গেলেও কাউকে কেনাকাটা করতে দেখা গেল না। এ পরিস্থিতিতে কিসের আশায় বসে আছেন বিক্রেতারা? আবুল কাশেম নামের এক ব্যবসায়ী বললেন, কাস্টমার নাই। কিন্তু রোদের মধ্যে বইয়া থাকা লাগে। এখন কী করুম?
আমরা আগে সব সময় পাইকারি বেচতাম। এখন একরকম বলতে গেলে দখল করে বসে আছি। এখানে যদি পাকা মার্কেট নির্মাণ করে; তাহলে হয়তো একটা স্থায়ী জায়গা পাব। বিক্রি কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে মেয়েদের পোশাক বিক্রেতা এই ব্যবসায়ী বলেন, এমনিতেই প্রতিবছর ২০ রোজার পর এখানে বেচাবিক্রি কমে যায়। কাস্টমার সব যায় খুচরা দোকানে। তখনও এই সময়ে বিক্রি কম হত। এখন তো পাইকারও নাই, মালও নাই। তবু বসে আছি। গত ৪ এপ্রিল ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকান পুড়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তদন্ত কমিটি হিসাব দেখিয়েছে। ঈদের আগে বিপুল পরিমাণ নতুন কাপড় তুলেছিলেন দোকানিরা; সেগুলো পুড়ে যাওয়ায় তাদের আর্তনাদ দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছেন তাদের সহায়তায়। অর্থ সহায়তা আসার পাশাপাশি ধ্বংসস্তূপ দ্রুত পরিষ্কার করে একটি অংশে বুধবার থেকে দোকানিদের চৌকি পেতে বসার সুযোগ করে দিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সেদিন এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বঙ্গবাজারের পাশের সরকারি কর্মচারী হাসপাতালের সামনে থেকে সোজা দক্ষিণে ফায়ার সার্ভিস হেড কোয়ার্টারের দিকে একটি রাস্তা চলে গেছে। ওই রাস্তার পূর্বপাশে চারটি টিনশেড মার্কেট মিলিয়ে বঙ্গ কমপ্লেক্স। বঙ্গবাজারের পরেই রয়েছে গুলিস্তান মার্কেট, এরপর মহানগরী কমপ্লেক্স ও সবার পূর্বপাশে বঙ্গবাজার আদর্শ মার্কেট। এর মধ্যে রাস্তার পাশ ঘেঁষা বঙ্গবাজার অংশের ভস্মীভূত অংশের ওপরই শুধু ইট-বালি ফেলা হয়েছে। বাকি অংশে এখনও ধ্বংসাবশেষ পড়ে আছে। ঢাকার তাপমাত্রা গত শুক্রবার এমনিতেই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। বঙ্গবাজার এলাকায় গরম যেন আরেকটু বেশিই অনুভূত হল। এর সঙ্গে রয়েছে ঝাঁঝালো পোড়া গন্ধ। মার্কেট কমিটি কিছু ব্যবসায়ীকে তালিকা করে চৌকি বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছে। বুধবার প্রায় সাতশজনকে দোকান বুঝিয়ে দেওয়া হলে চৈত্রের খরতাপের মধ্যেই ছাতা মাথায় দোকান শুরু করেন তারা। তবে এসব চৌকিতে পণ্যের পরিমাণ যেমন কম ছিল, তেমনি ক্রেতাদের আনাগোনাও ছিল না। ওই সাতশ জনের মধ্যে তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোকিবুল হাসান বাবলু একজন। গত শুক্রবার তিনি বলেন, আগুন লাগার আগে চারটি ইউনিটে তার দুটি দোকান ছিল। আগুনে সবকিছু ছাই হয়ে গেছে। এখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় দোকান বসিয়েছেন। আমরা চৌকি বসানোর সুযোগ পেয়েছি। যারা কিছু পণ্য সংগ্রহ করতে পারছে তাদেরকেই মার্কেট কমিটি সুযোগ দিচ্ছে। ধীরে ধীরে সবাই এই সুযোগ পাবে। কিন্তু একেকটা দোকানে ৮/১০ জন কর্মী ছিল। তারা হয়ত চাকরি হারাবে। বেচা-বিক্রি নিয়ে তার ভাষ্য, “এই গরমের ভেতরে এখানে বেচাকেনা সম্ভব? বলেন! এখানে পাইকারি বিক্রি করার মতো কিছুই আমাদের হাতে নাই। আর খুচরা বিক্রি যে করব, এই গরমের মধ্যে কাস্টমার কীভাবে আসবে? ভালো সময়ে তো এই সময়ে এক দিনেই দুই লাখ, চার লাখ টাকা পাইকারি বিক্রি করেছি। এখন কি আর সেই হিসাব করতে পারব? মেয়েদের জিন্সপ্যান্ট বিক্রি করেন বাবলু। কিন্তু দোকান বসানোর পরও পুরোনো ক্রেতারা যোগাযোগ করছে না। তিনি বলেন, পুরোনো ক্রেতারা যোগাযোগ করেনি। আমরা তাদের অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা বলে, মার্কেট পুড়ে গেছে। এখন আর কী মাল আনতে যাব। তাদের ব্যবসা তো থেমে নেই। যে কোনো জায়গায় একটা ব্যবস্থা করে ফেলছে। চৌকির দোকানে কথা হয় বেশ কয়েকজন খুচরা ক্রেতার সঙ্গেও। কিন্তু ১০ মিনিট সময় ধরে বিভিন্ন দোকানে ঘুরে কাউকে কিছু কিনতে দেখা যায়নি। মাহমুদুল হাসান নামের একজন ক্রেতা বলেন, তিনি জীবনে এই প্রথম বঙ্গবাজার এসেছেন। জিনিসপত্রের দাম বেশি মনে হওয়ায় কিছু কেনেননি। “বৈশাখের ঘোরাফেরা করতে করতে এই দিকটায় আসলাম। সময় কাটাতে আসলাম। জিনিসপত্রের দাম বেশি। সুযোগ পাইলে স্ত্রীর জন্য একটি ওয়ান পিস জামা কিনব,” বলছিলেন হাসান। আরেক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, “প্রথম ধাপে কারা দোকান পেল আমরা জানি না। মার্কেট কমিটি চৌকি বসানোর সুযোগ করে দিয়েছে। আমরাও সেইভাবে বসেছি। “কিন্তু ভাই দোকান বসালে কী হবে। কাস্টমার নাই। সকাল থেকে তিন হাজার টাকার মত বিক্রি করছি। কোনো পাইকার আসছে না। আগুন লাগার পর কিছুকিছু মাল টেনে বের করছি। সেগুলো এখন নিয়ে বসছি। সব মাল পুড়ে গেছে। আমার গোডাউনও পুড়ে গেছে। আগের সঙ্গে তুলনা টেনে এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, “দুই দিন হলো দোকানে বসছি। রোদের মধ্যে বসে রইছি। গত বছর এই সময়ে দিনে সর্বনিম্ন এক লাখ টাকা সেল দিছি। আর এখন পুরা দিন চলে গেছে। দুই হাজার টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হয়ে গেছে। ছোট চৌকিতে শাড়ি, থ্রি-পিস, প্যান্ট, শার্ট, লুঙ্গিসহ এই ধরনের পোশাক পণ্যগুলো নিয়েই বসেছেন বিক্রেতারা। তবে পরিমাণে খুবই কম। দুপুরের দিকে কয়েকজন বিক্রেতাকে পলিথিনের ত্রিপলে মালামাল ঢেকে জে যেতে দেখা গেল। তানজির নামের আরেক ব্যবসায়ী বললেন, “গতকাল থেকে এখানে বসেছি অনেক আশা নিয়ে। কিন্তু বেচাবিক্রি তো হচ্ছে না। সকাল শেষে দুপুর হল। এখন বিসমিল্লাহ করতে পারি নাই। গত বছর এই সময় আরও ভালো বিক্রি হত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনে কম পক্ষে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার বেচাবিক্রি হতো। পরিচিতি পাইকারি ক্রেতারা যোগাযোগ করে কিনা জানতে চাইলে তানজির বলেন, কিছুকিছু কাস্টমার যোগাযোগ করছে। কিন্তু মার্কেটের এই পরিস্থিতির কারণে তারা আসে না। অন্যান্য জায়গা থেকে মাল কিনে নিয়ে যায়। দোকানের মাল কিছুই আমরা সরাইতে পারি নাই। এক ডিজাইনের একশ পিস মাল চাইলে দিতে পারব না। কাল সারা দিনে পাঁচ হাজার টাকা বিক্রি করছি। আজ সারা দিনে কিছুই বিক্রি করতে পারি নাই।