০৮:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ | ই-পেপার

দিনে গাড়ি চালিয়ে রাতে ডাকাতি

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দিনে অটোরিকশা চালক কিংবা পিকআপ ভ্যান চালানো আর রাতে বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসে ডাকাতি। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এই ডাকাত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসে ডাকাতি করে আসছিল। এই ডাকাত চক্রের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল একসময়ের গার্মেন্টস পণ্য বিক্রেতা মোহাম্মদ হিরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখ। ডাকাতি করতে গিয়ে এই চক্রের সদস্যরা ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। ঢাকা থেকে অংশ নেওয়ার সময় একেক জনের কাজ ছিল একেক ধরনের। ডাকাতির সময় তারা বাসের ড্রাইভারকে জিম্মি করে নিজেরাই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিতো। পরে নির্জন স্থানে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতো। কেউ যদি বাধা দিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতো। দূরপাল্লার বিভিন্ন বাসে ডাকাতিচেষ্টার সময় গত ২২ জুন ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দল চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব জানা গেছে। র?্যাব বলছে, গ্রেপ্তার ডাকাত দলের মূলহোতা দলের সর্দার মোহাম্মদ হিরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখ। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির সাথে জড়িত থাকলেও পরবর্তী সময়ে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে সে। ১২ বছরের বেশি সময় ধরে সে ডাকাতির সাথে জড়িত। বিভিন্ন পরিবহনে ডাকাতিতে ঢাকা থেকে নিজেই অংশ নেয় সে। ডাকাতির সময় সে বিভিন্ন পরিবহনে উঠে প্রথমে বাসের স্টাফদের এবং যাত্রীদের মারধর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীদের মূল্যবান স্বর্ণালংকার লুট করে। তার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনের মোট সাতটি মামলা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় সে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এই ডাকাত চক্রের মধ্যে যেমন ডাকাতির বিভিন্ন কাজে পারদর্শী ব্যক্তি ছিল, তেমনি ডাকাতির মালামাল বিশেষ করে লুট করা স্বর্ণালংকার কেনার স্বর্ণ ব্যবসায়ীও ছিল। ডাকাত সর্দার হীরার অন্যতম সহযোগী হাসান মোল্লা ১২ বছরের বেশি সময় ধরে ডাকাতির সাথে জড়িত। সে মূলত পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতি বাস্তবায়নে কাজ করে। সে যাত্রীবেশে বাসে উঠে এবং পরবর্তী সময়ে বাসের স্টাফ এবং যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে। চক্রের অন্য সদস্য নুরুল ইসলাম, হানিফ, শরীফ ও রতন। তারা পেশায় অটোরিকশাচালক ও পিকআপ ভ্যান চালক। দিনে অটোরিকশা-পিকআপ চালাতো এবং রাতে ডাকাতি করতো তারা। তারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে আসছে। টার্গেটকৃত বাসে ওঠার পর তারা নিজেরাই চালককে জিম্মি করে বাসের ড্রাইভিং সিটে বসে যেত। পরে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যেতে গাড়িটি। আরিফ ও শরীফ ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারকে অস্ত্রের মুখে গাড়ির পেছনের সিটে হাত-পা বেঁধে রেখে পাহারা দিতো। নুর হানিফ ও রতন ডাকাতির সময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের মালামাল লুট করতো। এ ছাড়া ডাকাত চক্রের রাজু ও রেজাউল প্রায় ১২ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে আসছে। ডাকাতির সময় তারা মূলত গাড়ির গেটে পাহারা দিতো। চক্রের আরেক সদস্য নজরুল ডাকাতির স্বর্ণ কিনে সেগুলো গলিয়ে বিভিন্ন জুয়েলারি শপে বিক্রি করতো। র?্যাব জানায়, চলতি বছরের ১১ মে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা যশোরের বেনাপোলগামী হানিফ পরিবহন, ২৫ মে ঢাকা-রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস, ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা থেকে কোটালীপাড়াগামী স্টার লাইন পরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই তিনটি দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির নেতৃত্বে ছিল হীরা শেখ। এছাড়াও চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে সৌদিয়া বাসে ডাকাতির সময় তারা চালকের হাত ও পেটে ছুরিকাঘাত করে। চক্রটির কয়েকজন সদস্য আগে কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে বাসে উঠে। পরে অন্য সদস্যরা অন্য কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে তারপর বাসে উঠে। যেসব দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ব্যতীত যাত্রী উঠাতো তারা সেসব বাস টার্গেট করে ডাকাতি করতো। ঢাকা-রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা করে বাসে উঠে ডাকাতির চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার করা হয় ডাকাত দলের এই ১০ সদস্য। র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনবলেন, গত ২ বছরে বিভিন্ন দূরপাল্লার ১৫টি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। তিন বছর আগে ঢাকা-দিনাজপুর রুটে একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে। ডাকাতি করার পর তারা আবার আশুলিয়া এলাকায় ফিরে আসতো। গ্রেপ্তার ১০ জনের বিরুদ্ধেই ডাকাতিসহ অন্যান্য মামলা রয়েছে। একাধিকবার তারা জেল খেটেছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কর্ণফুলী নদীতে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে মৎস্য নিধন প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট অভিযান

দিনে গাড়ি চালিয়ে রাতে ডাকাতি

আপডেট সময়ঃ ১০:৩৩:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ জুলাই ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
দিনে অটোরিকশা চালক কিংবা পিকআপ ভ্যান চালানো আর রাতে বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসে ডাকাতি। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে এই ডাকাত চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসে ডাকাতি করে আসছিল। এই ডাকাত চক্রের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল একসময়ের গার্মেন্টস পণ্য বিক্রেতা মোহাম্মদ হিরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখ। ডাকাতি করতে গিয়ে এই চক্রের সদস্যরা ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছে। ঢাকা থেকে অংশ নেওয়ার সময় একেক জনের কাজ ছিল একেক ধরনের। ডাকাতির সময় তারা বাসের ড্রাইভারকে জিম্মি করে নিজেরাই ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিতো। পরে নির্জন স্থানে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে যাত্রীদের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যেতো। কেউ যদি বাধা দিলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতো। দূরপাল্লার বিভিন্ন বাসে ডাকাতিচেষ্টার সময় গত ২২ জুন ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত দল চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র?্যাব। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এসব জানা গেছে। র?্যাব বলছে, গ্রেপ্তার ডাকাত দলের মূলহোতা দলের সর্দার মোহাম্মদ হিরা শেখ ওরফে কালাম শেখ ওরফে সোলেমান শেখ। গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির সাথে জড়িত থাকলেও পরবর্তী সময়ে ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে সে। ১২ বছরের বেশি সময় ধরে সে ডাকাতির সাথে জড়িত। বিভিন্ন পরিবহনে ডাকাতিতে ঢাকা থেকে নিজেই অংশ নেয় সে। ডাকাতির সময় সে বিভিন্ন পরিবহনে উঠে প্রথমে বাসের স্টাফদের এবং যাত্রীদের মারধর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে যাত্রীদের মূল্যবান স্বর্ণালংকার লুট করে। তার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ অস্ত্র আইনের মোট সাতটি মামলা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বাসে ডাকাতির ঘটনায় সে নেতৃত্ব দিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। এই ডাকাত চক্রের মধ্যে যেমন ডাকাতির বিভিন্ন কাজে পারদর্শী ব্যক্তি ছিল, তেমনি ডাকাতির মালামাল বিশেষ করে লুট করা স্বর্ণালংকার কেনার স্বর্ণ ব্যবসায়ীও ছিল। ডাকাত সর্দার হীরার অন্যতম সহযোগী হাসান মোল্লা ১২ বছরের বেশি সময় ধরে ডাকাতির সাথে জড়িত। সে মূলত পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতি বাস্তবায়নে কাজ করে। সে যাত্রীবেশে বাসে উঠে এবং পরবর্তী সময়ে বাসের স্টাফ এবং যাত্রীদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জিম্মি করে। চক্রের অন্য সদস্য নুরুল ইসলাম, হানিফ, শরীফ ও রতন। তারা পেশায় অটোরিকশাচালক ও পিকআপ ভ্যান চালক। দিনে অটোরিকশা-পিকআপ চালাতো এবং রাতে ডাকাতি করতো তারা। তারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে আসছে। টার্গেটকৃত বাসে ওঠার পর তারা নিজেরাই চালককে জিম্মি করে বাসের ড্রাইভিং সিটে বসে যেত। পরে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যেতে গাড়িটি। আরিফ ও শরীফ ড্রাইভার এবং সুপারভাইজারকে অস্ত্রের মুখে গাড়ির পেছনের সিটে হাত-পা বেঁধে রেখে পাহারা দিতো। নুর হানিফ ও রতন ডাকাতির সময় অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের মালামাল লুট করতো। এ ছাড়া ডাকাত চক্রের রাজু ও রেজাউল প্রায় ১২ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি করে আসছে। ডাকাতির সময় তারা মূলত গাড়ির গেটে পাহারা দিতো। চক্রের আরেক সদস্য নজরুল ডাকাতির স্বর্ণ কিনে সেগুলো গলিয়ে বিভিন্ন জুয়েলারি শপে বিক্রি করতো। র?্যাব জানায়, চলতি বছরের ১১ মে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা যশোরের বেনাপোলগামী হানিফ পরিবহন, ২৫ মে ঢাকা-রাজশাহীগামী ন্যাশনাল ট্রাভেলস, ২৯ মে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ঢাকা থেকে কোটালীপাড়াগামী স্টার লাইন পরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এই তিনটি দূরপাল্লার বাসে ডাকাতির নেতৃত্বে ছিল হীরা শেখ। এছাড়াও চট্টগ্রাম-সিলেট মহাসড়কে সৌদিয়া বাসে ডাকাতির সময় তারা চালকের হাত ও পেটে ছুরিকাঘাত করে। চক্রটির কয়েকজন সদস্য আগে কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে বাসে উঠে। পরে অন্য সদস্যরা অন্য কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে তারপর বাসে উঠে। যেসব দূরপাল্লার বাস কাউন্টার ব্যতীত যাত্রী উঠাতো তারা সেসব বাস টার্গেট করে ডাকাতি করতো। ঢাকা-রাজশাহীগামী একটি বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা করে বাসে উঠে ডাকাতির চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার করা হয় ডাকাত দলের এই ১০ সদস্য। র?্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনবলেন, গত ২ বছরে বিভিন্ন দূরপাল্লার ১৫টি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। তিন বছর আগে ঢাকা-দিনাজপুর রুটে একটি বাসে ডাকাতির সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে। ডাকাতি করার পর তারা আবার আশুলিয়া এলাকায় ফিরে আসতো। গ্রেপ্তার ১০ জনের বিরুদ্ধেই ডাকাতিসহ অন্যান্য মামলা রয়েছে। একাধিকবার তারা জেল খেটেছে।