দেশের একাডেমিক শিক্ষাবর্ষে পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা

- আপডেট সময়ঃ ০৯:২৫:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৭ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের একাডেমিক শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। জানুয়ারি শিক্ষাবর্ষ শুরুর নির্ধারিত সময়। কিন্তু বাস্তবে প্রতি বছরই তা কার্যকর হতে দেরি হচ্ছে। জানুয়ারিতেই বিদ্যালয় পর্যায়ে বই উৎসবের মধ্য দিয়ে পাঠদান শুরুর উদ্যোগ থাকলেও ছাত্রছাত্রীরা জানুয়ারিতে সব বই পাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি এমনকি মার্চও বই পেতেই পেরিয়ে যাচ্ছে। এভাবে নির্ধারিত সময়ের অন্তত মাসখানেক পর শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি শুরু হয়। শিক্ষা খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের একাডেমিক শিক্ষা বছর পিছিয়ে যাচ্ছে। কারণ একাডেমিক কার্যক্রম যথাসময়ে শুরু না হওয়া তা সময়মতো শেষ হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে ভর্তি হতেই শিক্ষার্থীরা কয়েক মাস পিছিয়ে পড়ছে। তার মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা বেশি পিছিয়ে পড়ছে। গত কয়েক বছর ধরেই ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি ও সমমান এবং এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এমনকি গত বছরও যথাসময়ে ফেব্রুয়ারিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের পাবলিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। আর দুই মাস পিছিয়ে জুনে শুরু হয়েছিল উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষা। কিন্তু চলতি বছর এপ্রিলে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা গতবারের মতো জুন মাসে শুরু হয়েছে। দুই পাবলিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার তারিখে ছন্দপতন হওয়ায় অন্য শিক্ষাসূচিও এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর চলমান ২০২৫ শিক্ষা সেশনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণিতে ১৫ সেপ্টেম্বর ক্লাস শুরু হবে। বেশির ভাগ কলেজই যদিও নির্ধারিত তারিখে ক্লাস শুরু করতে পারে না। ফলে এইচএসসি ও সমমানের দুই বছরের শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার আগে দেড় বছর সময় পাবে। এর মধ্যেই তাদের দুই বছরের নির্ধারিত কোর্স-কারিকুলাম শেষ করতে হবে।
সূত্র আরো জানায়, এইচএসসি ও সমমানে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি কার্যক্রম দুই বছর আগেও জুলাই-আগস্টে শুরু হতো। বর্তমানে এ প্রক্রিয়া কমপক্ষে তিন মাস পিছিয়ে গেছে। চলতি বছরে এখনো এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় এ ভর্তি কার্যক্রম নভেম্বর নাগাদ শুরু হতে পারে। বিশ^বিদ্যালয়গুলো ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে সব মিলে পেরিয়ে যাবে মার্চ-এপ্রিলও। গত শিক্ষা বছরেও এমন পরিস্থিতি হয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে না পারায় শিক্ষার্থীদের নষ্ট হচ্ছে প্রায় অর্ধবছর। ফলে শিক্ষাজীবন জুড়েই শিক্ষার্থীরা সময়ের হিসাবে পিছিয়ে থাকছে। আর পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট নানান অচলাবস্থা ও সেশনজট তো রয়েছেই।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেড় বছরের মধ্যে এইচএসসিতে শেষ করতে হয় দুই বছরের কোর্স। বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোর্স শেষ করা এ সময়ের মধ্যে অনেক কঠিন হয়। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ আর ফল প্রকাশের পর বিশ^বিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষার অন্য বিদ্যাপীঠে ভর্তি হতে প্রায় ছয় মাসের একাডেমিক গ্যাপ তৈরি হয়। ওই সময়ের মধ্যে কেউ ভর্তি কোচিং করে, অনেকেই নানা কারণে পড়াশোনা থেকে দূরে থাকেন। ফলে তারা পিছিয়ে পড়ে। বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়াটি দ্রুত হওয়া জরুরি। তাছাড়া একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া মাধ্যমিক পর্যায়ে বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে বই দেয়া। তা দেরি হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। শিক্ষার স্বার্থে, জাতি গঠনের স্বার্থে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে।