দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে গ্যাস সিলিন্ডারের বিস্ফোরণ
- আপডেট সময়ঃ ০৮:০৯:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২২
- / ২৮১ বার পড়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশে আশঙ্কাজনক হারে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও গ্যাস সিলিন্ডার দুর্ঘটনা ঘটছে। ২০২১ সালে দেশে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে ৮৯৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। মূলত গ্যাসের লিকেজ থেকে দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে। সিলিন্ডারের হোস পাইপ, রেগুলেটর, গ্যাস ভালভের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের ত্রুটির কারণেই গ্যাস লিক হয়। ওই লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে বাইরে কোথাও জমতে থাকে। আর সামান্য আগুন, এমনকি স্ফুলিঙ্গের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে থাকা গ্যাস ভয়াবহ বিস্ফোরণ সৃষ্টি করে। বিস্ফোরক পরিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশে ৬০ লাখেরও বেশি গ্রাহক এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করে। আর গ্রামাঞ্চলেরই ওই গ্রাহকের একটি বড় অংশ। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩০টি কোম্পানির অন্তত ২ কোটি সিলিন্ডার বাজারে রয়েছে। গত এক বছরে ৬ লাখ ১৩ হাজার ৩২৩টি এলপিজি সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে। আর এলপিজি ছাড়া অন্যান্য সিলিন্ডার আমদানি করা হয়েছে ৩ লাখ ১ হাজার ১৯০টি। পাশাপাশি দেশে সিলিন্ডার নির্মাণের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করেছে দেশে নির্মিত ৩৫ লাখ ৮২৯টি এলপিজি সিলিন্ডার। কিন্তু ওসব সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য অনুমোদিত কোনো পরীক্ষণ কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ৮৯৪টি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আহত ৭৫ জন হয়েছে আর ওসব ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ রোববার নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহের ঘটনায় ১৪ জন দগ্ধ হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন এবং হাসপাতালে শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন অন্তত ৩ জন। একের পর এক গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় বিস্ফোরক পরিদপ্তরকে দুষছে ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, একটি গ্যাস সিলিন্ডার ন্যূনতম ২০ বছর ব্যবহার করার কথা। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ওই সময়ের মধ্যে কয়েক দফায় রেগুলেটর ও ভালভ পরিবর্তন করতে হয়। ওই দুটি যন্ত্রাংশই মূলত গ্যাস লিকেজ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেশের সিলিন্ডারগুলোয় মানহীন রেগুলেটর ও ভালভ ব্যবহারের ফলে লিকেজ সৃষ্টি হয়। অথচ বিস্ফোরক পরিদপ্তরের সিলিন্ডার ও তাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশের মান পরীক্ষার দায়িত্ব। কিন্তু যথাযথভাবে ওসব গ্যাস সিলিন্ডারের মান পরীক্ষা করা হয় না। আর ওই সুযোগে বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে মানহীন গ্যাস সিলিন্ডার ও তাতে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশ।
সূত্র আরো জানায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতে বাসাবাড়িতে ব্যবহারের জন্য সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করা হয়। সেখানে পাইপলাইনের গ্যাস সংযোগ নেই। বিপুল পরিমাণে সিলিন্ডার ব্যবহার হলেও ওই দেশে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনা ঘটে না। কারণ সেখানে সিলিন্ডার ও তার যন্ত্রাংশের মান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পাশাপাশি সিলিন্ডার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ভারতীয়রা অনেক সচেতন। কিন্তু ওই তুলনায় এদেশের সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারীদের মধ্যে এখনো ওই সচেতনতা তৈরি করা যায়নি।
এদিকে বেশ কয়েকটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটনার তদন্তকারী ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (অপারেশন) দেবাশীষ বর্ধন জানান, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের বেশির ভাগ ঘটনার নেপথ্যে থাকে ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রাংশ ব্যবহার। তার মধ্যে গ্যাস ভালভ ও রেগুলেটরে সবচেয়ে বেশি ত্রুটি পাওয়া যায়। কিছু ক্ষেত্রে মানহীন হোস পাইপ থেকেও লিকেজ হয়। ওই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সিলিন্ডার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এর ব্যবহারকারীদেরও সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
























