নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন আজ
- আপডেট সময়ঃ ০১:২৩:১০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫
- / ১৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে হুমায়ূন আহমেদ এমন এক নাম, যিনি শুধু গল্প লিখতেন না—শব্দ দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এক সম্পূর্ণ জগৎ, যেখানে বাস্তব আর কল্পনা মিশে যেত এক মায়াবী মন্ত্রে। আজ সে শব্দের জাদুকরের ৭৭তম জন্মদিন। ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
তার বাবা শহিদ মুক্তিযোদ্ধা ফয়জুর রহমান আহমদ ছিলেন এক নির্ভীক প্রশাসক, আর মা আয়েশা ফয়েজ ছিলেন সাহিত্যপ্রেমী, সংবেদনশীল এক নারী। এ সাহিত্যভরা পারিবারিক পরিবেশ ও জীবনের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণই তাকে পরিণত করেছিল আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাণবন্ত লেখকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নে অধ্যয়ন শেষে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন হুমায়ূন আহমেদ। পরে উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যান এবং সেখান থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। তবে তার আসল পরিচয় গড়ে ওঠে সাহিত্যেই—যেখানে তিনি ছিলেন একান্ত নিজের মতো।
১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ দিয়েই তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘এইসব দিনরাত্রী’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘অন্যভুবন’, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘বাদশাহ নামদার’—প্রতিটি গ্রন্থই তাকে পৌঁছে দেয় জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিলো তার চরিত্র নির্মাণ। তার সৃষ্ট মিসির আলি যুক্তিবাদী মনোভাবের প্রতীক, যিনি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান ও বিশ্লেষণের ভাষায় কথা বলেন। অন্যদিকে হিমু—সমাজের বাঁধন ভেঙে ফেলা এক মুক্ত আত্মা, হলুদ পাঞ্জাবি পরে হেঁটে বেড়ায়, গন্তব্যহীন অথচ গভীর এক দর্শনে ভরপুর। ‘কোথাও কেউ নেই’-এর বাকের ভাইয়ের মৃত্যুর পর পুরো দেশ কেঁদেছিলো—এটাই প্রমাণ করে হুমায়ূনের চরিত্রগুলো কেবল কাগজে নয়, মানুষের মনের ভেতরেও বেঁচে ছিলো, এখনও বেঁচে আছে, যুগযুগ বেঁচে থাকবে।
শুধু সাহিত্যেই নয়, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রেও তার অবদান ছিলো অমলিন। ‘এইসব দিনরাত্রী’, ‘বহুব্রীহি’, ‘কোথাও কেউ নেই’—এ নাটকগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ছুঁয়ে গেছে। চলচ্চিত্রে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ তার কাহিনি বলার অসাধারণ দক্ষতারই প্রমাণ।
তার কলমের ভাষা ছিলো সহজ অথচ গভীর, কথায় ছিলো জীবনবোধের উষ্ণতা ও মায়া। হুমায়ূন আহমেদের গল্পে মানুষ যেমন হাসতো, তেমনি কাঁদতও—কারণ তার গল্প ছিলো জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। কিন্তু তিনি সত্যিই কি চলে গেছেন? আজও বইমেলায় হুমায়ূনের বইয়ের স্টলের সামনে লম্বা সারি, তার নাটক আর সিনেমার সংলাপ মানুষের মুখে মুখে।
তিনি হয়তো অনুপস্থিত, কিন্তু তার গল্প, তার হিমু, মিসির আলি, বাকের ভাই—সবাই যেন এখনও বেঁচে আছে আমাদেরই ভেতরে।

























