নীলফামারীতে শ্রমিকের প্রাণহানির প্রতিবাদে ঢাকায় মানববন্ধন

- আপডেট সময়ঃ ১১:০৫:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৪ বার পড়া হয়েছে
নীলফামারীতে শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মিছিল করেছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি। এ সময় জুলাই সনদে গণতান্ত্রিক শ্রম আইনের নিশ্চয়তা ও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিলের আগে শ্রম আইন সংশাধনের দাবি জানান তারা।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সংগঠনটি।
সমাবেশে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহীম চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার, প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল।
আরও বক্তব্য রাখেন, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি নেতা কেন্দ্রীয় সহ সভাপ্রধান অঞ্জন দাস, শ্রমিক নেতা আকলিমা আখতার, হযরত বিল্লাল, নুরুল ইসলম, আরশাদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, শাহীদা বেগম, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন, নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজতিা দেব, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বহুমুখী শ্রমজীবী হকার সমিতির সভাপতি নেতা বাচ্চু ভুইয়া, আউসোর্সিং কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা নুরুল হক, দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা সাইফুল ইসলাম অন্যান্য নেতারা। সমাবেশ শেষে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ডসহ একটি মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।
সমাবেশে বক্তারা নিন্দা জানিয়ে বলেন, নীলফামারী ইপিজেডের এভারগ্রিন প্রতিষ্ঠান বকেয়া বেতন ও ছাঁটাই বিরোধী আন্দোলনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই পুলিশ সংস্কারের দাবি শ্রমিক সংগঠনসহ অন্যান্যরা জানালেও সেই সংস্কার হয়নি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তার বদলে গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে শ্রমিক। নেতারা এ ঘটনা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। দ্রুত তদন্ত, বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। এবং পুলিশের মানববিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যববহার বিধি পরিবর্তন সংশোধন ও পুলিশ সংস্কারের দাবি জানান।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আকাঙ্খা নিয়ে শ্রম আইন পরিবর্তন ও শ্রমখাত সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে শ্রমিকরা। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে নভেম্বর মাস থেকে শ্রম সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরিষদ (এনটিসিসি) শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রমখাত সংস্কারের কাজ করছে। কিন্তু এখনো শ্রম আইনের সংশোধন ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়নি। নেতৃবৃন্দ সরকারের ঐক্যমত্ত কমিশনের শ্রম সংস্কার কমিশন ও নারী কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ৫ টি কমিশনকে যুক্ত না করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, শ্রমিকদের দাবি বিবেচানায় অবশ্যই জুলাই সনদে তাদের অধিকার বাস্তবায়নের নিশচয়তার ঘোষণা থাকতে হবে।
সভা সমাপনীকালে তাসলিমা আখতারন নিম্নোক্ত ১০টি বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইন প্রণয়নের আহ্বান জানান।
১. রানা প্লাজা তাজরীনসহ বিভিন্ন কারখানায় অবকাঠামোগত হত্যাকাণ্ড ও মজুরি আন্দোলনে প্রাণহানির বিচার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সম্পন্ন করা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
২. আইন-আদালতে বাংলা ভাষা ও বৈষম্যহীন ভাষা ব্যবহার করার আইন তৈরি করতে হবে।
৩. জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কমিশন গঠন ও মজুরি নির্ধারণ কাল ৩ বছর অন্তর অন্তর করতে হবে।
৪. মতপ্রকাশ ও সংগঠনের অধিকার নিশ্চিতকরণে শ্রমিকের সংজ্ঞা সম্প্রসারণ, ইউনিয়ন রেজিসে্ট্রশন, নির্বাচন, যৌথ দরকষাকষির শর্ত শিথীলকরণ। অরেজিসি্ট্রকৃতদের রেজিস্ট্রকালে সুরক্ষা প্রদান করা।
৫. যৌন হয়রানি ও সহিংসতাহীন মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ শ্রম আইনে এর সংজ্ঞা ও দণ্ড বিধি প্রণয়ন করতে হবে।
৬. রাষ্ট্রীয় সহায়তায় প্রসূতিকালীন ৬ মাস সবেতন ছুটি ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।
৭. শ্রমিককল্যাণ তহবিল এবং সেন্ট্রাল ফান্ডের যথাযথ-স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন প্রয়োজনীয়। শ্রম আইনের পঞ্চদশ অধ্যায়: কোম্পানির মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ অধ্যায়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করা প্রয়োজন।
৮. শ্রমিক ইতিহাস-ঐতিহাসিক স্থান সুরক্ষা ও স্মৃতি সৌধ-ভাস্কর্য-জাদুঘর-গবেষণাগার গঠনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়া, পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যক্রম, শিক্ষা কোর্সে শ্রম বিষয় (লেবার স্টাডিজ) মর্যাদাপূর্ণভাবে উত্থাপন ও যুক্ত করা জরুরি।
৯. শ্রম আইন সংশোধন, শ্রম খাত সংস্কারে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বৃদ্ধি এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তরসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
১০. শ্রমিক অভিযোগ নিষ্টিত্তিতে অনলাইন ব্যবস্থাকে জোরদার, শ্রমিক ও নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যপ্রাপ্তি অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।