০৫:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ | ই-পেপার

প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসছে কোটি কোটি টাকার মাদক ‘আইস’

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মাদকের বাজার ধ্বংস করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা তৎপর থাকলেও প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে মাদক আসছেই। একসময় দেশের মাদকের বাজারে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবার আধিপত্য থাকলেও সম্প্রতি বিস্তার ঘটছে আলোচিত ক্ষতিকর মাদক ‘আইস’ (মেথামফেটামিন) বা ক্রিস্টাল মেথের। বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বছরে দেশে আসছে শত কোটি টাকার আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। এর মধ্যে ধরা পড়ছে অর্ধশত কোটি টাকার আইস। অবশ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আইসসহ মাদক ঠেকাতে অভিযান আরও জোরদার করার কথা বলছেন। তারপরও মাদকের অনুপ্রবেশ থেমে নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রথম আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ধরা পড়ে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর জিগাতলার একটি বাসায় তখন ৫ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। ওই চালানের পর সেই বছরের জুন মাসে রাজধানীর খিলক্ষেতে ধরা পড়ে ৫২২ গ্রাম আইস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা তৎপরতায় ওই বছর এবং তার পরের বছর ২০২০ সালে আইস আসা কমে যায়। ২০১৯ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মোট ৫৬১ গ্রাম আইস জব্দ করে। পরের বছর ২০২০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও কোস্ট গার্ডসহ সব সংস্থা জব্দ করে দশমিক ০৬৫ গ্রাম আইস। কিন্তু ২০২১ সালে উদ্বেগজনক আকারে আসে এ মাদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা গত বছর ৩৬ কেজি ৭৯৪ গ্রাম আইস জব্দ করে। প্রতি গ্রামের দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ধরে জব্দ আইসের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা। এসব মাদক জব্দ করার সময় ৩৫ কারবারিকেও আটক করা। তাদের বিরুদ্ধে করা হয় ৩২টি মামলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাড়ে ৩৬ কেজির বেশি আইস জব্দ করলেও দেশে ঢুকেছে আরও বেশি। সবমিলিয়ে গত বছর অন্তত শত কোটি টাকার আইস ঢুকেছে দেশে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম মাসেই সংস্থাটি ২১ কেজি ২৩৯ গ্রাম আইস ধরেছে। এক মাসেই জব্দ মাদকের এই পরিমাণ বলে দেয়, উচ্চমূল্যের মাদকটি কত দ্রুত বিস্তার করছে এদেশে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ গোল্ডেন ক্রিসেন্ট (আফিম মাদক উৎপাদনকারী অঞ্চল-পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান) ও গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের (পপি উৎপাদনকারী অঞ্চল-মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনাম) মাঝখানে অবস্থান করছে। বিশেষ করে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের একটি দেশ মিয়ানমার আমাদের সীমান্তবর্তী। মিয়ানমার থেকেই আমাদের দেশে আইস নামক মাদক আসছে। তবে যেসব আইস ধরা হচ্ছে তা আদালতের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন জনসংখ্যার বড় একটি অংশ যুবগোষ্ঠী। সেজন্য এদেশ মাদককারবারিদের অন্যতম টার্গেট। এখানে আইসসহ অধিকাংশ মাদকই আসে বিভিন্ন দেশ থেকে, যার বেশিরভাগ আসে মিয়ানমার ও ভারত থেকে। এর মধ্যে আবার সিংহভাগ আইসই প্রবেশ করছে মিয়ানমার থেকে। কক্সবাজারের টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও এর আশপাশের এলাকা দিয়ে দেশে আসছে এই মাদক। কখনো আচার, কখনো কাপড়ের প্যাকেট আবার কখনো চায়ের প্যাকেটে করে নানা কৌশলে আনা হচ্ছে আইস। এই মাদক কারবারের সঙ্গে প্রভাবশালী অনেকের সম্পৃক্ততার খবর বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশনস) মো. আহসানুর রহমান বলেন, মাদক একটার পর একটা ধাঁচ পরিবর্তন করে। আইস এমনই নতুন ভার্সন, যার আসক্তি অনেক বেশি। যেখানে অর্থ আছে সেখানে মাদকের একটা রমরমা অবস্থা থাকে। বাংলাদেশ বর্তমানে অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করছে। সেজন্য উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও মাদকাসক্তি বাড়ছে। আমাদের দেশে যেমন অ্যামফিটামিন জাতীয় মাদকের বিস্তার ঘটছে, আমেরিকায়ও এমন বেশ কিছু মাদক মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, অনলাইনে মাদক ব্যবসা জমে উঠেছে প্রযুক্তির ফলে। একসময় গাজা বা ইয়াবা কারবারের স্পট ছিল। এখন স্মার্টফোনের কারণে মাদক মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল যোগাযোগেই কারবার ঘটছে মাদকের। এসব নিয়ন্ত্রণে নতুন করে সাইবার ক্রাইম সেল গঠনে কাজ চলছে। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেতন নাগরিকদের নিয়ে একটি বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মাদক মামলার বিচারকাজে জনবল বাড়িয়ে সেগুলো নিষ্পত্তি করতে আলাদা একটি কোর্ট দরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, যে পরিমাণ মাদক ধরা পড়ে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ মাদক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব সংস্থার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। তাই এর বিস্তার রোধে প্রয়োজন পাচার রুট বা সরবরাহ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইসসহ মাদকাসক্তদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক কাজে ও খেলাধুলায় জড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থনৈতিক অসমতা দূর করা এবং নৈতিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি সঠিক প্রক্রিয়ায় পুনর্বাসন করতে হবে। সেইসঙ্গে মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় এনে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল বলেন, নতুন ধরনের মাদক আইস হলো অ্যামফিটামিন গ্রুপের মস্তিষ্কে উদ্দীপনা বৃদ্ধিকারী এক ধরনের মাদক। এই মাদকটি গ্রহণের পরে মানুষের মধ্যে আকস্মিক উত্তেজনা বেড়ে যায়। ঘুম, ক্ষুধা কমে যায় এবং আচরণের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। আইস দীর্ঘদিন গ্রহণ করতে থাকলে সেবনকারী দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারেন। আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্ষতিও হতে পারে। এই মাদকে ব্যক্তির আচরণজনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং মানসিক রোগের লক্ষণও দেখা দেয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সীমান্ত সুরক্ষিত থাকার পরও মানবপাচার ও মাদক চোরাচালান হচ্ছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. জিয়া রহমান বলেন, যেটা যখনই ঘটছে, তারা সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসে। আমাদের দেশের সীমান্ত এলাকা তেমন সুরক্ষিত নয়। ফলে মাদক চোরাচালান কমানোর পাশাপাশি মাদকাসক্তি কমাতেও কাজ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন মাদকাসক্তদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক কাজে ও খেলাধুলায় সম্পৃক্ততা বাড়ানো। নৈতিক শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অসমতাও দূর করতে হবে। সেই সঙ্গে পুনর্বাসন করতে পারলে শুধু আইস নয়, সব ধরনের মাদকের বিস্তারটাই কমে আসবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখায়ব পুড়িয়েছে হাসিনার দোসররা: ফারুকী

প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আসছে কোটি কোটি টাকার মাদক ‘আইস’

আপডেট সময়ঃ ০৮:৪৪:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ মার্চ ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মাদকের বাজার ধ্বংস করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা তৎপর থাকলেও প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে মাদক আসছেই। একসময় দেশের মাদকের বাজারে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবার আধিপত্য থাকলেও সম্প্রতি বিস্তার ঘটছে আলোচিত ক্ষতিকর মাদক ‘আইস’ (মেথামফেটামিন) বা ক্রিস্টাল মেথের। বিভিন্ন সংস্থা ও অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, বছরে দেশে আসছে শত কোটি টাকার আইস বা ক্রিস্টাল মেথ। এর মধ্যে ধরা পড়ছে অর্ধশত কোটি টাকার আইস। অবশ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আইসসহ মাদক ঠেকাতে অভিযান আরও জোরদার করার কথা বলছেন। তারপরও মাদকের অনুপ্রবেশ থেমে নেই। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রথম আইস বা ক্রিস্টাল মেথ ধরা পড়ে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। রাজধানীর জিগাতলার একটি বাসায় তখন ৫ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়। ওই চালানের পর সেই বছরের জুন মাসে রাজধানীর খিলক্ষেতে ধরা পড়ে ৫২২ গ্রাম আইস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা তৎপরতায় ওই বছর এবং তার পরের বছর ২০২০ সালে আইস আসা কমে যায়। ২০১৯ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মোট ৫৬১ গ্রাম আইস জব্দ করে। পরের বছর ২০২০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও কোস্ট গার্ডসহ সব সংস্থা জব্দ করে দশমিক ০৬৫ গ্রাম আইস। কিন্তু ২০২১ সালে উদ্বেগজনক আকারে আসে এ মাদক। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ও কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা গত বছর ৩৬ কেজি ৭৯৪ গ্রাম আইস জব্দ করে। প্রতি গ্রামের দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ধরে জব্দ আইসের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা। এসব মাদক জব্দ করার সময় ৩৫ কারবারিকেও আটক করা। তাদের বিরুদ্ধে করা হয় ৩২টি মামলা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সাড়ে ৩৬ কেজির বেশি আইস জব্দ করলেও দেশে ঢুকেছে আরও বেশি। সবমিলিয়ে গত বছর অন্তত শত কোটি টাকার আইস ঢুকেছে দেশে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের তথ্য মতে, চলতি বছরের প্রথম মাসেই সংস্থাটি ২১ কেজি ২৩৯ গ্রাম আইস ধরেছে। এক মাসেই জব্দ মাদকের এই পরিমাণ বলে দেয়, উচ্চমূল্যের মাদকটি কত দ্রুত বিস্তার করছে এদেশে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশ গোল্ডেন ক্রিসেন্ট (আফিম মাদক উৎপাদনকারী অঞ্চল-পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরান) ও গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের (পপি উৎপাদনকারী অঞ্চল-মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনাম) মাঝখানে অবস্থান করছে। বিশেষ করে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের একটি দেশ মিয়ানমার আমাদের সীমান্তবর্তী। মিয়ানমার থেকেই আমাদের দেশে আইস নামক মাদক আসছে। তবে যেসব আইস ধরা হচ্ছে তা আদালতের মাধ্যমে ধ্বংস করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এখন জনসংখ্যার বড় একটি অংশ যুবগোষ্ঠী। সেজন্য এদেশ মাদককারবারিদের অন্যতম টার্গেট। এখানে আইসসহ অধিকাংশ মাদকই আসে বিভিন্ন দেশ থেকে, যার বেশিরভাগ আসে মিয়ানমার ও ভারত থেকে। এর মধ্যে আবার সিংহভাগ আইসই প্রবেশ করছে মিয়ানমার থেকে। কক্সবাজারের টেকনাফ, সেন্টমার্টিন ও এর আশপাশের এলাকা দিয়ে দেশে আসছে এই মাদক। কখনো আচার, কখনো কাপড়ের প্যাকেট আবার কখনো চায়ের প্যাকেটে করে নানা কৌশলে আনা হচ্ছে আইস। এই মাদক কারবারের সঙ্গে প্রভাবশালী অনেকের সম্পৃক্ততার খবর বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অপারেশনস) মো. আহসানুর রহমান বলেন, মাদক একটার পর একটা ধাঁচ পরিবর্তন করে। আইস এমনই নতুন ভার্সন, যার আসক্তি অনেক বেশি। যেখানে অর্থ আছে সেখানে মাদকের একটা রমরমা অবস্থা থাকে। বাংলাদেশ বর্তমানে অনুন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করছে। সেজন্য উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও মাদকাসক্তি বাড়ছে। আমাদের দেশে যেমন অ্যামফিটামিন জাতীয় মাদকের বিস্তার ঘটছে, আমেরিকায়ও এমন বেশ কিছু মাদক মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, অনলাইনে মাদক ব্যবসা জমে উঠেছে প্রযুক্তির ফলে। একসময় গাজা বা ইয়াবা কারবারের স্পট ছিল। এখন স্মার্টফোনের কারণে মাদক মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে। ভার্চুয়াল যোগাযোগেই কারবার ঘটছে মাদকের। এসব নিয়ন্ত্রণে নতুন করে সাইবার ক্রাইম সেল গঠনে কাজ চলছে। পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে সচেতন নাগরিকদের নিয়ে একটি বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। মাদক মামলার বিচারকাজে জনবল বাড়িয়ে সেগুলো নিষ্পত্তি করতে আলাদা একটি কোর্ট দরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, যে পরিমাণ মাদক ধরা পড়ে তার চেয়ে বেশি পরিমাণ মাদক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব সংস্থার ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। তাই এর বিস্তার রোধে প্রয়োজন পাচার রুট বা সরবরাহ এলাকায় নজরদারি বাড়ানো। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইসসহ মাদকাসক্তদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক কাজে ও খেলাধুলায় জড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। অর্থনৈতিক অসমতা দূর করা এবং নৈতিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি সঠিক প্রক্রিয়ায় পুনর্বাসন করতে হবে। সেইসঙ্গে মাদক কারবারিদের আইনের আওতায় এনে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল বলেন, নতুন ধরনের মাদক আইস হলো অ্যামফিটামিন গ্রুপের মস্তিষ্কে উদ্দীপনা বৃদ্ধিকারী এক ধরনের মাদক। এই মাদকটি গ্রহণের পরে মানুষের মধ্যে আকস্মিক উত্তেজনা বেড়ে যায়। ঘুম, ক্ষুধা কমে যায় এবং আচরণের অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়। আইস দীর্ঘদিন গ্রহণ করতে থাকলে সেবনকারী দীর্ঘমেয়াদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে পারেন। আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিডনি, লিভার ও বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্ষতিও হতে পারে। এই মাদকে ব্যক্তির আচরণজনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং মানসিক রোগের লক্ষণও দেখা দেয়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে সীমান্ত সুরক্ষিত থাকার পরও মানবপাচার ও মাদক চোরাচালান হচ্ছে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. জিয়া রহমান বলেন, যেটা যখনই ঘটছে, তারা সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসে। আমাদের দেশের সীমান্ত এলাকা তেমন সুরক্ষিত নয়। ফলে মাদক চোরাচালান কমানোর পাশাপাশি মাদকাসক্তি কমাতেও কাজ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন মাদকাসক্তদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক কাজে ও খেলাধুলায় সম্পৃক্ততা বাড়ানো। নৈতিক শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অসমতাও দূর করতে হবে। সেই সঙ্গে পুনর্বাসন করতে পারলে শুধু আইস নয়, সব ধরনের মাদকের বিস্তারটাই কমে আসবে।